আন্তর্জাতিক

ট্রাম্প-পুতিন সম্পর্ক ‘বিপদসীমার নিচে’, সংঘর্ষ কি অবশ্যম্ভাবী?

একসময় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এখন উত্তেজনায় টালমাটাল; ইউক্রেন ইস্যু ঘিরে ট্রাম্প-পুতিন মুখোমুখি সংঘর্ষের আশঙ্কা বাড়ছে

এবিএনএ:  মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যকার সম্পর্ক এখন আর আগের মতো উষ্ণ নেই। বরং রাশিয়ার এক প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সম্প্রতি মন্তব্য করেছে, দুই নেতা যেন মুখোমুখি আসা দুটি ট্রেন—কেউ থামছে না, কেউ পিছিয়ে যাচ্ছে না।

‘মস্কোভস্কি কমসোমোলেটস’ তাদের এক বিশ্লেষণে লিখেছে, ট্রাম্প ও পুতিনের কৌশলগত অবস্থান এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে, যেখানে সংঘর্ষ এড়ানো কঠিন। পুতিন পুরোপুরি মনোযোগ দিয়েছেন ইউক্রেনে তার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’-এ, অন্যদিকে ট্রাম্প তার নতুন মেয়াদে রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা, শুল্ক এবং সামরিক চাপ বাড়ানোর হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন।

চুক্তির সূচনা, হতাশার পরিণতি

ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর শুরুতে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক কিছুটা ঘনিষ্ঠ হচ্ছিল। জাতিসংঘে ইউক্রেনবিরোধী প্রস্তাবে বিরোধিতা এবং পারস্পরিক সফরের পরিকল্পনাও হচ্ছিল। কিন্তু দ্রুত সেই উষ্ণতা মুছে যেতে থাকে। কারণ, ট্রাম্পের প্রত্যাশিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সাড়া দেননি পুতিন। বরং রাশিয়া একের পর এক ইউক্রেনীয় শহরে হামলা চালাতে থাকে, যা ট্রাম্পের হতাশার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

ট্রাম্প পুতিনকে যুদ্ধ থামাতে ৫০ দিনের আল্টিমেটাম দেন, পরে সেটি কমিয়ে ১০ দিনে নিয়ে আসেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত রাশিয়ার অবস্থানে কোনো বড় পরিবর্তন দেখা যায়নি। বরং ট্রাম্পের এসব সময়সীমাকে গুরুত্বই দিচ্ছেন না পুতিন—এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

কূটনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা কি এখনও আছে?

রাশিয়ার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সমাধানে এখনও আশাবাদী ট্রাম্প। এজন্য তাঁর বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ আবারও মস্কো সফরে যাচ্ছেন। গত কয়েক মাসে চারবার পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। আলোচনায় এমনকি ট্রাম্পের একটি প্রতিকৃতি উপহার পেয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে।

তবে ট্রাম্পের প্রত্যাশা শুধু সম্পর্ক উন্নয়ন নয়, বরং যুদ্ধবিরতির জন্য পুতিনের একটি নিঃশর্ত স্বাক্ষরও। বিষয়টি নিয়ে মস্কোর পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আশাব্যঞ্জক কোনো বার্তা না এলেও কিছু বিশ্লেষক বলছেন, নিষেধাজ্ঞা এড়াতে মস্কো শেষ পর্যন্ত আলোচনার টেবিলে বসতে পারে।

পুতিন কি চাপের মুখে?

রুশ প্রেসিডেন্টের দিক থেকে আপাতত কোনো নমনীয়তার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না। নিউইয়র্কের দ্য নিউ স্কুলের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক নিনা ক্রুশ্চেভার মতে, “পুতিন হয়ত ভাবছেন তিনি রুশ ইতিহাসের অংশ হয়ে উঠছেন। তিনি রাশিয়াকে পশ্চিমা আধিপত্য থেকে মুক্ত করতে চাচ্ছেন।”

চূড়ান্ত বাস্তবতা

সংঘর্ষ এড়াতে যতটুকু চেষ্টাই করা হোক না কেন, ইউক্রেন যুদ্ধের বর্তমান বাস্তবতা বলে দেয়, ট্রাম্প একটি শান্তিচুক্তি চাইছেন, কিন্তু পুতিন চাইছেন বিজয়। তাই আপাতত মুখোমুখি সংঘর্ষ অনিবার্য না হলেও তা একেবারে অসম্ভবও নয়। যুদ্ধ থামাতে হলে শুধু কূটনীতি নয়, প্রয়োজন দু’পক্ষের কার্যকর সমঝোতা এবং আন্তরিকতা—যা এখনো দৃশ্যমান নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button