আন্তর্জাতিক

বন্ধুত্বে ফাটল, শুল্কে চাপ: মোদি-ট্রাম্প সম্পর্ক কি রুশ তেলের বলি?

ভারতের রাশিয়া ঘনিষ্ঠতায় অস্বস্তিতে ট্রাম্প, জোট রাজনীতির জেরে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক চাপের মুখে ভারত

এবিএনএ:  ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের প্রশংসায় সরগরম ছিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। মোদির অনুসারীরাও ট্রাম্পের পুনর্নির্বাচন উদযাপন করেছিলেন। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে সেই উষ্ণতা এখন শীতলতায় রূপ নিয়েছে।

সম্প্রতি ভারতের বেনারসে এক সমাবেশে মোদি বলেন, “আমরা এখন শুধুমাত্র সেই পণ্যই কিনব, যা ভারতীয়দের ঘামে তৈরি।” বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্য ছিল ট্রাম্প প্রশাসনের ভারতীয় পণ্যের ওপর নতুন করে ২৫% শুল্ক আরোপের জবাব।

তবে শুধু শুল্ক নয়, বিষয়টির পেছনে রয়েছে বৃহৎ কৌশলগত চাপ। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হোক। ট্রাম্পের দৃষ্টিতে ভারতের রুশ তেল আমদানি সরাসরি যুদ্ধ অর্থায়নে ভূমিকা রাখছে। তিনি প্রকাশ্যে বলেছেন, “ভারত রাশিয়ার তেল কিনে ইউক্রেনে হত্যাযজ্ঞে পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে। এর জবাবে শুল্ক অনেক বাড়ানো হবে।”

এই অভিযোগে নয়াদিল্লি তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়নি বরং বরাবরের মতো আত্মনির্ভর নীতিতে অনড় থেকেছে। আল জাজিরার বিশ্লেষণে বলা হয়, ভারতের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি ও স্থানীয় শিল্প রক্ষার জন্য তারা মার্কিন শর্তে সাড়া দিতে আগ্রহী নয়।

ভারতের প্রায় ৫০% মানুষ কৃষিজীবী হওয়ায় সরকার বারবার কৃষিপণ্য আমদানিতে শুল্ক ছাড় দিতে অনিচ্ছুক। ভারতীয় কর্মকর্তারা রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধও প্রত্যাখ্যান করেছেন।

এদিকে, ট্রাম্পের সঙ্গে ভ্লাদিমির পুতিনের সম্পর্কও আর আগের মতো নেই। রাশিয়ার একটি ট্যাবলয়েড তাদের সম্পর্ককে “দুটি ট্রেন বিপরীত দিক থেকে এক লাইনে ধেয়ে আসছে”—এইভাবে ব্যাখ্যা করেছে।

ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর যুদ্ধ থামাতে ৫০ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন, যা পরবর্তীতে কমিয়ে ১০ দিনে আনা হয়। সেই সময়সীমা ইতোমধ্যেই শেষের পথে, কিন্তু পুতিনের পক্ষ থেকে কোনো ছাড় দেখা যাচ্ছে না।

এই পটভূমিতে ট্রাম্প যেন ঘুরে দাঁড়াচ্ছেন ভারতের দিক থেকে চাপ প্রয়োগে। ভারতের রাশিয়ার প্রতি কৌশলগত নির্ভরতা, বিশেষত জ্বালানি ও প্রতিরক্ষা খাতে, ওয়াশিংটনকে ক্রমেই অস্বস্তিতে ফেলছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ওয়াশিংটনের দৃষ্টিতে ভারত এখন ‘বন্ধু হলেও বিশ্বাসযোগ্য নয়’।

তবু ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে—যুক্তরাষ্ট্রের চাপ নয়, বরং নিজের স্বার্থেই তারা সিদ্ধান্ত নেবে। আর এই নীতিগত অবস্থান আগামী দিনগুলোতে মোদি-ট্রাম্প-পুতিন সম্পর্ককে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button