আন্তর্জাতিক

থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া সীমান্তে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, বাস্তুচ্যুত ১ লাখের বেশি মানুষ

সীমান্ত নিয়ে পুরোনো বিরোধে নতুন সশস্ত্র সংঘাত, থাইল্যান্ড চালিয়েছে এফ-১৬ বিমান হামলা, মানবিক বিপর্যয়ে পড়েছে দুই দেশের সাধারণ মানুষ

এবিএনএ:  দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে সীমান্ত সংঘর্ষ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। দ্বিতীয় দিনের মতো চলা এই সংঘাতে ইতিমধ্যেই থাইল্যান্ডে বাস্তুচ্যুত হয়েছে এক লাখেরও বেশি মানুষ। অন্যদিকে, কম্বোডিয়ায় বাস্তুচ্যুত হয়েছেন চার হাজারেরও বেশি।

শুক্রবার দুই দেশের মধ্যে ব্যাপক গোলাগুলি হয়, আর সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ে সংঘর্ষ। থাই সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তারা লক্ষ্যভিত্তিক এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে, কম্বোডিয়ার পক্ষ থেকে এই হামলাকে “বেপরোয়া ও নৃশংস আগ্রাসন” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

থাইল্যান্ডের উবন রাচাথানি ও সুরিন প্রদেশের সীমান্তে সংঘর্ষ শুরু হয় বৃহস্পতিবার সকালে। এই উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে এবং দুই দেশই একে অপরকে দায়ী করছে সংঘর্ষ শুরু করার জন্য।

এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে, যাদের অধিকাংশই থাই বেসামরিক নাগরিক। থাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা কোনো আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতা গ্রহণ করবে না, বরং কেবলমাত্র দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান চায়।

চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও মালয়েশিয়া শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলেও থাইল্যান্ডের পক্ষ থেকে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

থাই সামরিক বাহিনীর প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, ড্রোন থেকে বোমা ফেলে পাহাড়ি ঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়, এতে বিশাল বিস্ফোরণ ঘটে এবং এলাকা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়।

এপি ও সিএনএন-এর প্রতিবেদনে জানা গেছে, থাইল্যান্ডে শত শত পরিবারকে বিশ্ববিদ্যালয় ও অস্থায়ী ক্যাম্পে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এক আশ্রয়প্রার্থী বলেন, “আমরা ভীত। বৃদ্ধ আর প্রতিবন্ধীদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি চিন্তায় আছি।”

সীমান্ত সমস্যা এই অঞ্চলে বহু পুরনো। থাইল্যান্ড দাবি করে ফরাসি উপনিবেশ আমলে তাদের এলাকা কম্বোডিয়াকে দেওয়া হয়েছিল। অন্যদিকে, কম্বোডিয়া মনে করে ঐ অঞ্চল তাদেরই প্রাচীন মালিকানাধীন। এই ঐতিহাসিক ক্ষোভ দুই দেশকে নিয়মিত সংঘর্ষের মুখে ঠেলে দিয়েছে।

চুলালংকর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক রাজনীতি বিশ্লেষক থিটিনান পংসুধিরাক বলেন, “উভয় পক্ষের মধ্যেই ইতিহাসের প্রতি ক্ষোভ রয়েছে। এবং সেই ইতিহাসই বর্তমানে সংঘর্ষে রূপ নিচ্ছে।”

থাইল্যান্ডের অস্ত্রশক্তি ও সেনাসংখ্যা কম্বোডিয়ার চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

এই চলমান উত্তেজনায় পরিস্থিতি আরও কীভাবে মোড় নেয়, তা নির্ভর করবে দুই দেশের কূটনৈতিক উদ্যোগ ও আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবেলার ওপর। তবে এখনই একটি মানবিক বিপর্যয় দেখা দিচ্ছে, যার প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button