গাজায় মৃত্যুর মিছিল, অনাহারে প্রাণ হারাল প্রায় ২০০ ফিলিস্তিনি
ইসরায়েলি অবরোধে খাদ্য সংকটে ধুঁকছে গাজা উপত্যকা, শিশুসহ ১৯৭ জনের মৃত্যু—আন্তর্জাতিক নিষ্ক্রিয়তায় বাড়ছে মানবিক বিপর্যয়।


এবিএনএ: গাজা উপত্যকায় দিন দিন ভয়াবহ আকার নিচ্ছে মানবিক বিপর্যয়। ইসরায়েলের অবরোধ ও ক্রমাগত হামলার মধ্যে খাদ্য সংকটে ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ১৯৭ জন ফিলিস্তিনি। মৃতদের মধ্যে শিশুর সংখ্যা ৯৬।
ট্যাক্সিচালক ইব্রাহিম আল নজ্জরের পরিবার এই বিপর্যয়ের করুণ উদাহরণ। সব হারানো ইব্রাহিম বলেন, তার সন্তান সাঈম না খেয়ে এক মাস অচেতন থাকার পর মারা গেছে। “একসময় সে ছিল খুবই সবল”—আক্ষেপের সঙ্গে বলেন তিনি।
এ ঘটনা গাজার লাখো পরিবারের একটিমাত্র চিত্র। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ক্ষুধার্ত শিশুদের কান্না, দুর্বল বৃদ্ধদের নিঃসহায়তা ও মায়ের চোখের পানি যেন গাজার প্রতিদিনের বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইসরায়েলের বোমা হামলায় বৃহস্পতিবারই প্রাণ হারিয়েছেন ২২ জন, যাদের মধ্যে রয়েছে একাধিক শিশু। অনাহার ও অপুষ্টিতে আরও ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের আল নাসির হাসপাতালে এক শিশু, এবং আল মাওয়াসি এলাকায় ২ বছরের এক শিশু প্রাণ হারিয়েছে।
ইসরায়েল আন্তর্জাতিক চাপ বা বিক্ষোভ আমলে না নিয়ে যুদ্ধ ও অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা “গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন” নামে একটি সংগঠনের মাধ্যমে ত্রাণের নামে হামলা চালাচ্ছে। এই সংগঠন শিশু-বৃদ্ধ কাউকে না দেখে গুলি করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
চিকিৎসাসেবী সংস্থা এমএসএফ (Médecins Sans Frontières) এক বিবৃতিতে বলেছে, “৫৪ বছরের ইতিহাসে আমরা এমন নৃশংসতা আগে দেখিনি।” এটি কোনো ত্রাণ সংস্থা নয়—এখানে চলছে পরিকল্পিত গণহত্যা।
চাষাবাদের পতন:
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় এখন চাষযোগ্য জমির পরিমাণ মাত্র ১.৫%—যা আগের ৪% থেকে দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। আগে কৃষিনির্ভর গাজায় ফল, সবজি ও বাদাম চাষ হতো।
ইসরায়েলের অভ্যন্তরে বিক্ষোভ:
ইসরায়েলেই যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ‘সম্পূর্ণ গাজা দখল’ পরিকল্পনার প্রতিবাদে চলছে আন্দোলন। ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ও ইউরোপীয় নেতারাও গাজায় যুদ্ধকে “গণহত্যার পর্যায়ে পৌঁছানো” বলে মন্তব্য করেছেন।
এই মানবিক বিপর্যয়ের অবসান কোথায়, তা আজ কেউ বলতে পারছে না। বিশ্বের দৃষ্টি এড়িয়ে ভয়াবহ এক ট্র্যাজেডি যেন প্রতিদিন সামনে এগিয়ে চলেছে।