অর্থ বাণিজ্যলিড নিউজ

১ মণ আলুর দামে ১ কেজি পেঁয়াজ

এবিএনএ : পেঁয়াজের দামে মুরগি পাওয়ার খবর নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে মিডিয়াতে চলছে নানান আলোচনা-সমালোচনা। এরইমধ্যে দেশের বাজার ব্যবস্থায় চরম অস্থিরতার খবর পাওয়া গেছে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায়। এখানে এক কেজি পেঁয়াজের দামে পাওয়া যাচ্ছে এক মণ আলু।
বৈরী আবহাওয়া, অতিবৃষ্টি ও অসময়ে বন্যা কাটিয়ে পরবর্তী শীতের জয়পুরহাটের কালাই উপজেলাতে গত বছরের চেয়ে এবার চাল ও সবজির উত্পাদন বেশি হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে সব ধরনের সবজির দাম সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে থাকলেও ভরা মৌসুমে পেঁয়াজ ও চালের দাম আকাশছোঁয়া। প্রকার ভেদে চালের মূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধি পাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে উপজেলার সকল পর্যায়ের মানুষেরা। প্রতি কেজি চাল ৬০ থেকে ৬২ টাকা দরে এবং প্রতি কেজি বিদেশি পেঁয়াজ ৭৮ থেকে ৮০ টাকা দরে আর প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৯২ থেকে ৯৫ টাকা দরে। অন্যদিকে, আলুর বাজারে চরম ধস নেমেছে। হিমাগারে আলু রেখে লোকসানের মুখে পড়েছেন প্রান্তিক কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। বর্তমান উপজেলা বিভিন্ন হাট-বাজারে প্রতি মণ আলু ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে করে লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভাসহ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে আমন মৌসুমে ১৩ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে চাল উত্পাদন হয় ৭১ হাজার ৯১ মেট্রিক টন। গত মৌসুমে ১২ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ উত্পাদন হয় ১ হাজার ২০ মেট্রিক টন ও চলতি মৌসুমে ১৫ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষ হচ্ছে এবং গত মৌসুমে ১২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু উত্পাদন হয় ৩ লাখ ১০ হাজার ৮৮৪ মেট্রিক টন। চলতি মৌসুমে উপজেলাতে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, এর মধ্যে গ্যানোলা, ডায়মন্ড, মিউজিকা, রোমানা, পাকড়ী, এস্টোরিক, কার্ডিনাল, কারেজ ও লরা জাতের আলু আবাদ হচ্ছে। তবে, বর্তমান উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে পুরাতন জাতের বিভিন্ন আলু প্রতি মণ গ্র্যানুলা আলু ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, মিউজিকা আলু ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকা, অ্যাসটোরিক আল ৯০ থেকে ১০০ টাকা এবং কারেজ আলু ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলুর দাম নিম্নমুখী হওয়ায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়েছে। আলুর দাম কম হওয়ায় অনেক গরু খামারিরা গরুকে খাওয়াচ্ছেন আলু। অন্যদিকে, উপজেলাতে বর্তমান বিভিন্ন হাট-বাজার প্রকারভেদে চাল বিক্রি হচ্ছে  প্রতি কেজি ৪৯ জাতের চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা দরে, প্রতি কেজি কাঠারীভোগ ৫৬ থেকে ৫৮ টাকা দরে, প্রতি কেজি নাজিরশাইল ৫৭ থেকে ৫৯ টাকা দরে, প্রতি কেজি মিনিকেট ৬০ থেকে ৬২ টাকা দরে আর প্রতি কেজি বিদেশী পিঁয়াজ ৭৮ থেকে ৮০ টাকা দরে এবং প্রতি কেজি দেশী পিঁয়াজ ৯২ থেকে ৯৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে লাগামহীন ভবে ও অস্বাভাবিকহারে পিঁয়াজ ও চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রকার ভেদে পিঁয়াজ ও চালের দাম দফায় দফায় ও লাফিয়ে লাফিয়ে উর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে উপজেলার কৃষকসহ নিম্ন আয়ের ও খেটে খাওয়া মানুষেরা।
কালাই পৌরসভার থুপসাড়া মহল্লার আলু ব্যবসায়ী হারুনুর রশীদ বলেন, বর্তমান হিমাগারে আমার ১০০ বস্তা এস্টোরিক জাতের আলু আছে। ১০০ বস্তা আলুর পিছনে সব মিলে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ টাকা। বর্তমান আলুর বাজারে যে অবস্থা তাতে করে ওই সব আলু বিক্রি করলে মাত্র ১৫ হাজার টাকা হবে। সেই কারণে আমি এখন এক বস্তাও আলু বিক্রি করেনি।
কালাই উপজেলার মাত্রাই গ্রামের ভ্যান চালক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, সারাদিন ভ্যান চালে আয় করি ৩০০ টাকা। আমার পরিবারে ৪ জন সদস্যর প্রতিদিন চাল ও পিঁয়াজ কিনতে আয়ের বেশিরভাগ খরচ হয়। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে অন্যান্য বাজার করতে হয়। যেভাবে প্রতিনিয়ত দফায় দফায় চাল ও পিঁয়াজের দাম বাড়ছে তাতে করে চাল ও পিঁয়াজ কিনে খাওয়া আমার পক্ষে সাধ্যের বাইরে চলে যাচ্ছে।
চালের মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে কালাই উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বলেন, সারাদেশে অসময়ে বন্যার কারণে ইরি-বোরো ও আমন ধানের উত্পাদন কম হওয়ার কারণে বর্তমান বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীতে এই সমস্যা থাকবেনা।
পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি ও আলুর দাম নিম্নমুখীর বিষয়ে কালাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ রেজাউর করিম বলেন, গত মৌসুমে উপজেলাতে আলু উত্পাদন অনেক বেশি হয়েছিল, সেই অনুযায়ী আলুর চাহিদা তেমন ছিলনা। বর্তমান খুচরা বাজারের আলুর দাম অনেক বেশী আর পাইকারি বাজারেই দাম কম। খুচরা বাজারের সাথে পাইকারি বাজারের কোন মিল নেই। তিনি আরও বলেন, এই উপজেলার কৃষকেরা ধান ও আলুর চাষ করতে বেশী অগ্রহী হয়। তারা অন্য কোন ফসল আবাদ করতে চান না। চলতি মৌসুমে ১৫ হেক্টর জমিতে পিঁয়াজ চাষ হয়েছে। বর্তমান উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে পিঁয়াজের দাম বেশি, তবে বিভিন্ন হাট-বাজারে পাতাআলা বা মুড়িকাটা নতুন পিঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button