লাইফ স্টাইল

শিশুর মানসিক বিকাশে যা করবেন

এবিএনএ : শিশুকে ঘিরে প্রতিটি মা-বাবার আশা-আকাঙ্খার শেষ নেই। তাই কাঙ্খিত স্বপ্ন পূরণে জন্মের পর থেকেই মা-বাবা সন্তানের বাড়তি যত্ন নিতে শুরু করেন।
সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সন্তানকে উন্নয়নের চরম শিখরে পৌঁছাতে চেষ্টা চালিয়ে যান তারা। সেই চেষ্টায় কোনো প্রকার ত্রুটি রাখতে নারাজ  তারা।

গবেষকদের মতে, প্রথম জীবন থেকেই শিশুর শরীরের হয় বৃদ্ধি আর মনের হয় বিকাশ। শরীরের বৃদ্ধি মানে বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের পরিবর্তন ও আকৃতি বৃদ্ধি পাওয়া। অন্য দিকে মনের বিকাশ মানে শিশুর জ্ঞান, বুদ্ধি, মেধা, আবেগ ও অন্যের সঙ্গে মেলামেশা করার দক্ষতা অর্জন করা। সে জন্যই আমাদের সবসময় সতর্ক থেকে শিশুদের মানসিক বিকাশে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে।

আর এ যুদ্ধে জয়ী হতে কিছু নিয়ম আপনাকে সাহায্য করতে পারে। তাহলে আসুন জেনে নিই কী সেই নিয়ম যা আপনার সন্তানের মানসিক বিকাশে সহায়তা করবে?

* শিশুদের অন্যদের সঙ্গে কীভাবে মিশতে হয় তা শেখান। শিশুরা খেলার সময় কোনো সমস্যায় পড়লে তা তাদের সমাধান করতে দিন। অন্যের মতের প্রতি কীভাবে সম্মান দেখাতে হয় তার শিক্ষা দিন।

* সন্তানকে সততার শিক্ষা দিন। দায়িত্ব সম্পর্কে বোঝান। বড়দের সম্মান করতে শেখান। তাকে বোঝান সব কাজে ধৈর্য ধারণ করতে হয়।

* সন্তানকে খাওয়া, ঘুম, খেলার সময় নির্দিষ্ট করে দিন। এতে সে সময়ানুবর্তীতা শিখবে।

সন্তানের মাঝে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তাকে নতুন নতুন বই উপহার দিন। একটা বই পড়া শেষ হলে তার কাছে বইটি সম্পর্কে জানতে চান।

* যে কোনো ভালো কাজের জন্য তার প্রশংসা করুন, তা যতই ছোট হোক। খারাপ কাজের জন্য কখনো বকা দেবেন না, বুঝিয়ে বলুন কাজটি কীভাবে করা উচিত ছিল।

* বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিশুর একটি নিজস্ব জগৎ গড়ে ওঠে, তাতে আমাদের বাধা দেয়া উচিত নয়, বাধা দেয়ার প্রয়োজন হলেও তার উপযোগী করে বোঝানো উচিত।

* শিশুর মনে থাকে হাজার প্রশ্ন, শিশু যখন কিছু জানার আগ্রহ প্রকাশ করে, তখন আমাদের উচিত শিশুদের কৌতুহল মেটানো। এতে বিরক্ত প্রকাশ করলে সে নিরুৎসাহিত হবে এবং কোনও কিছুর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।

* শিশুর সব চাহিদা সঙ্গে সঙ্গে পূরণ করা ঠিক নয়। তার চাহিদা পূরণ করা বা না করার পেছনে যুক্তি দিয়ে তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে। এতে করে শিশু অতিরিক্ত জেদি হবে না।

* মা-বাবার নিজের রাগ বা বিরক্ত কখনই শিশুর ওপর প্রকাশ করা যাবে না। রাগারাগি, হৈচৈ বা বড়দের বিষয় নিয়ে ছোটদের সামনে কথা বলা উচিত নয়। এতে শিশু এককেন্দ্রিক বা মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ার আশংকা থাকে।

* শিশুদের মৌলিক মানবিক বিষয়ের মধ্যে চিত্ত বিনোদন একটি এটা ভুলে গেলে চলবে না। তাই তার সঠিক বিকাশে বিনোদনের ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে।

* শিশুদের খেলনা নির্বাচনে সতর্ক হতে হবে। পিস্তল জাতীয় খেলনা না দিয়ে সৃজনশীল খেলার জিনিস দিতে হবে।

* শিশুকে চার দেয়ালের মধ্যে আটকে না রেখে অন্য ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মিলামেশার সুযোগ করে দিন। পরিবেশ পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে দিন।

* শিশুকে অযথা কোনো কিছুর লোভ দেখানো যাবে না।

*  তাদের নিজের কাজ নিজেকে করার অভ্যাস তৈরি করা উচিত। যেমন- নিজের কাপড় গোছানো, খেলনা গোছানো, জুতা পরা, দাঁত মাজা, চুল আঁচড়ানো ইত্যাদি।

* শিশুকে শুধুই আদর করতে হবে শাসন করা যাবে না, এটা ঠিক নয়। তবে শাসনের ধরনটা এমন হবে যাতে সে বুঝতে পারে কেন শাসন করা হচ্ছে।

* শিশুকে নির্দিষ্ট বয়সে স্কুলে পাঠান, নির্দিষ্ট বয়সের আগে বা পরে নায়।

* আপনার শিশুকে দল বেধে খেলার সুযোগ দিন, এতে সে নেতৃত্ব দেয়ার শিক্ষা লাভ করতে পারবে।

তবে একটা বিষয় জেনে নিন, শৈশব চোখের পলকেই ফুরিয়ে যায়। আপনার শিশুর শৈশব ভরিয়ে দিন আপনার সংস্পর্শে। তার সঙ্গে খেলুন, আত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে নিয়ে যান, দূরে কোথাও ঘুরে আসুন। সন্তানের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক অটুট থাকুক বিশ্বাস আর ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button