লাইফ স্টাইল

ভালো ঘুমের জন্য করণীয়

এ বি এন এ : রাতে যার ঘুম হয় না তার সঙ্গে যে থাকে তারও ঠিকমতো ঘুম হয় না। আর ঠিকমতো ঘুম না হলে এর নানারকম ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে শরীর ও মনে। এমনকি ব্যক্তিক ও সামাজিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে দেখা যায়।

যুক্তরাজ্যের রয়েল কলেজ অব সাইকিয়াট্রিক তাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছে ঘুম সম্পর্কিত একটি নিবন্ধ। চলুন জেনে নেওয়া যাক ঘুম সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

ঘুম ভালো না হওয়ার জন্য অধিকাংশ সময় আমাদের দৈনন্দিন অভ্যাসই দায়ী। রাত জেগে টিভি দেখা, ফেসবুক চালানো, ইন্টারনেট আসক্তি, ভিডিও গেম খেলা, মোবাইল ফোনে কথা বলা, গল্প করা, রাতে বার বার কফি পান করার কারণেও ঘুমে সমস্যা দেখা যেতে পারে। এ অভ্যাসগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে পারলেই অনেকের ক্ষেত্রে ঘুমের সমস্যা কাটানো সম্ভব।

বেশি রাত জেগে থাকার কারণে অনেকের দিনে ঘুম পায়। শরীর ও মনে ক্লান্তিভাব চলে আসে। এতে দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্মেও অসুবিধা হয়। এর ক্ষতিকরা প্রভাব আছে অনেক। যেমন-

* খিটখিটে মেজাজ: রাত জেগে টিভি দেখা কিংবা ইন্টারনেট আসক্তির কারণে ঘুমের জন্য প্র্রয়োজনীয় মেলাটনিন হরমোন নিসৃত হতে পারে না। এতে ঘুম দেরিতে আসে। অপর্যাপ্ত ঘুমের ফলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে তা পারিবারিক, সামাজিক কিংবা পেশাগত ক্ষেত্রে সম্পর্কের অবনতির কারণ হতে পারে।

* দু:স্বপ্ন: যাদের ঘুমের সমস্যা পুরানো তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। সাধারণত এ ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায় ভোররাতে। হঠাৎ দু:স্বপ্নে ঘুম ভেঙে যায় ও বুক ধড়ফড় করে।

* উচ্চরক্তচাপ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি: স্ট্রোক ও উচ্চরক্তচাপের অনেকগুলো কারণের একটি হচ্ছে ঠিকমতো ঘুম না হওয়া।

* দুর্ঘটনা: যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যবিষয়ক এক ওয়েবসাইট জানিয়েছে, দিনে তন্দ্রাভাবের কারণে অনেকেই নানারকম দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আর তাই তন্দ্রাভাব এলে গাড়ি চালানো থেকে বিরত থাকার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

* স্মৃতিশক্তি হ্রাস: ঘুমালে চোখ ও মস্তিষ্ক কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম পায়। এতে স্মৃতিশক্তি ভালো থাকে। সৃজনশীলকাজে গভীরভাবে মনোনিবেশ করা সহজ হয়। যাদের ঘুমে সমস্যা তাদের স্মৃতিশক্তি ধীরে ধীরে লোপ পায়।

* ক্লান্তি: দৈনন্দিন কাজ করতে গিয়ে নানারকম ধকল সামলাতে হয়। এতে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এ ক্লান্তি দূর করার জন্য দরকার পর্যাপ্ত ঘুম। রাতে ঘুম ভালো না হলে পরের দিনও এ ক্লান্তিভাব থেকে যায়।

* ডায়াবেটিসের ঝুঁকি: দিনে যারা ৫ ঘণ্টার কম ঘুমান তাদের ক্ষেত্রে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি বলে জানিয়েছে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষকরা।

* হরমোনের উর্বরতা হ্রাস: পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে সন্তানধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়। আর তাই নারী পুরুষ প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানো দরকার।

ভালো ঘুমের জন্য করণীয়:

ভালো ঘুমের জন্য দরকার আত্মনিয়ন্ত্রণ ও কিছু অভ্যাসের পরিবর্তন। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা রাতে ভালো ঘুমের জন্য যেসব পরামর্শ দিয়ে থাকেন চলুন তা জেনে নেওয়া যাক।

* সন্ধ্যার পরপরই সেরে নিন রাতের খাবার।

* প্রতি রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। রাত ১১টার পর ঘরের বাতি নিভিয়ে ফেলুন।

* বিকেলের পর কফি কিংবা ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় পান করবেন না।

* ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফেসবুক, টিভি কিংবা অন্য কোনো আসক্তিকারক গেম ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পর বিছানায় শুয়ে স্মার্টফোনে ফেসবুকিং, গেমিং ও টিভি দেখা থেকে পুরোপুরি বিরত থাকুন।

* রাতে যখনই ঘুমান না কেন প্রতিদিন ভোরে একই সময়ে উঠুন।

* সন্ধ্যার পর ও ঘুমাতে যাওয়ার আগে ভারী কোনো ইন্সট্রুমেন্ট ব্যবহার করে ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন।

* কোনো বিষয়ে বারবার চিন্তার কারণে যদি ঘুম না আসে তবে চিন্তার কারণ বা বিষয় একটি কাগজে লিখে রাখুন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে নিজেকে বলুন-‘এ বিষয়ে আমি কালকে চিন্তা করব।’

 

 

 

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button