আন্তর্জাতিকলিড নিউজ

শিশুদের বাসযোগ্য গ্রহ দিতে বিশ্ব ব্যর্থ

এবিএনএ : জলবায়ু পরিবর্তন ও নিম্নমানের খাবারের কারণে স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে শিশুদের রক্ষায় ব্যর্থ বিশ্ব। ফলে বিশ্বের প্রতিটি শিশু ‘তাৎক্ষণিক হুমকির’ মুখে রয়েছে। বুধবার জাতিসংঘের এক রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়েছে। বিশ্বের শিশু ও কিশোর স্বাস্থ্য বিষয়ক ৪০ জনের বেশি বিশেষজ্ঞের মতে, কার্বন নির্গমন, প্রকৃতির ক্ষতিসাধন, উচ্চমাত্রার ক্যালরি এবং প্রক্রিয়াজাত খাদ্য থেকে যে ক্ষতি হচ্ছে তা থেকে পরবর্তী প্রজন্মকে রক্ষায় পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নিচ্ছে না বিশ্বের কোনো দেশ।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, অতিমাত্রায় কার্বন নির্গমন শিশুদের ভবিষ্যৎ হুমকিতে ফেলছে। এতে তাদের ওপর অতিরিক্ত স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। দাবদাহ থেকে শুরু করে মৌসুমি বিভিন্ন রোগের বিস্তার ঘটছে। আর ওই কার্বন নির্গমনের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী ধনী দেশগুলো। এএফপি বলছে, ওই রিপোর্ট অনুমোদন করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ। রিপোর্টটি প্রকাশিত হয়েছে দ্য ল্যানসেট নামের মেডিকেল জার্নালে। এতে ১৮০টি দেশের শিশুদের বেঁচে থাকা, শিক্ষা ও পুষ্টির বিষয় আমলে নিয়ে র‌্যাংকিং করা হয়েছে। তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে রয়েছে নরওয়ে, দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স ও আয়ারল্যান্ড।

ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, শাদ, সোমালিয়া, নাইজার ও মালি। তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৩, পাকিস্তান ১৪০ ও ভারত ১৩১তম অবস্থানে রয়েছে। উচ্চ মাত্রার চর্বি, চিনিসমৃদ্ধ খাবার, অ্যালকোহল ও তামাকজাত পণ্যের বাজারজাতকরণ থেকে শিশুরা যে ক্ষতির মুখোমুখি হচ্ছে তার ওপর জোর দেয়া হয়েছে রিপোর্টে।

ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ইন্সটিটিউট ফর গ্লোবাল হেলথের পরিচালক ও ইন্টারন্যাশনাল চাইল্ড হেলথের প্রফেসর অ্যান্থনি কস্টেলো বলেন, সবচেয়ে বড় বার্তাটি হল বিশ্বের একটি দেশও বর্তমান ও ভবিষ্যতের জন্য শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা করছে না। তিনি আরও বলেন, ‘যখন আপনি দেখবেন যে বায়ু দূষণের কারণে শিশুদের ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি হয়ে গেছে তখন হাতে খুব কম সময়ই আছে এর সমাধান করার। আমাদের কাছে এর সমাধান আছে। কিন্তু নেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব, যারা এই সমাধানটা করবেন।’

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেডরোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস বলেন, ‘বিশ্বের সিদ্ধান্তদাতারা শিশু ও তরুণদের সুরক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে। তাদের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাদের অধিকার রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে। তাদের এই গ্রহকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হচ্ছে।’ রিপোর্টে আরও বলা হয়, ৫ বছর বয়সের নিচে এমন প্রায় ২৫ কোটি শিশু নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে ঝুঁকিতে আছে। তারা বসবাস করছে অপুষ্টি, দারিদ্র্যের মধ্যে। একই সঙ্গে বিশ্বে মোটা হয়ে যাওয়া শিশুর সংখ্যা ১৯৭৫ সাল থেকে ১১ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৪০ লাখ।

কিছু কিছু দেশের শিশুরা এক বছরে টেলিভিশনে ৩০ হাজারের মতো বিজ্ঞাপন দেখে। যেমন অস্ট্রেলিয়ায় শুধু এক বছরে শিশুরা অ্যালকোহলের বিজ্ঞাপন দেখে ৫ কোটি ১০ লাখ বার। কস্টেলো বলেন, এসব শিল্পকে নিয়মতান্ত্রিকতায় আনতে ব্যর্থ হয়েছে বিশ্ব। এ পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। কারণ শিশুদের উদ্দেশ করে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচুর বিজ্ঞাপন দেয়া হয়।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button