আন্তর্জাতিকলিড নিউজ

বিক্ষোভের মুখে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্টের পদত্যাগ

এবিএনএ: অবশেষে বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগ করেছেন বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরালেস। প্রায় ১৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর রোববার জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া এক ভাষণে তিনি পদত্যাগের ঘোষণা দেন বলে বিবিসি জানিয়েছে। গত মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মোরালেস প্রেসিডেন্ট হিসেবে পুনর্নির্বাচিত হওয়ার দাবি করেন। কিন্তু নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ করে বিরোধীরা তা প্রত্যাখ্যান ও বিক্ষোভ করে আসছিল। রোববার আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোও ২০ অক্টোবরের ভোটে কারচুপির প্রমাণ পেয়েছে জানিয়ে নির্বাচনের ফল বাতিলের আহ্বান জানায়।  তাদের সঙ্গে একমত হয়ে মোরালেস নির্বাচন কমিশন ঢেলে সাজানোর পর নতুন করে ভোটের ঘোষণা দেন। কিন্তু তার এ ঘোষণা মেনে না নিয়ে বলিভিয়ার রাজনৈতিক নেতারা এবং সেনাবাহিনী ও পুলিশ প্রধান তাকে পদত্যাগের আহ্বান জানান। এরপরই টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট পদত্যাগের ঘোষণা দেন। মোরালেস বলেন, তিনি ‘ক্যু’ –এর শিকার হয়েছেন।

তিনি বলেন, তার রাজনৈতিক মিত্র ও সমর্থকদের অনেকের ওপর হামলা এবং তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের পরিবারের সুরক্ষায় তিনি পদত্যাগ করছেন। বিক্ষোভকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভাই ও বোনদের ওপর হামলা বন্ধ এবং জ্বালাও পোড়াও বন্ধ করুন।’

বলিভিয়ায় মোরালেস ২০০৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসেন। তিনি ছিলেন সে দেশে প্রথম কোনো আদিবাসী যিনি রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হন। গত মাসের নির্বাচন ছিল তার উপর্যুপরি চতুর্থ দফা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ। কিন্তু নির্বাচনের দিন রাতে ভোট গণনা ২৪ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখার পর থেকেই উত্তেজনা শুরু হয়।

এরপর ঘোষিত ফলে দেখা যায় মোরালেস প্রথম পর্বে সরাসরি জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ১০ শতাংশ ভোটে এগিয়ে আছেন। কিন্তু বিরোধীদলগুলো নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে রাস্তায় নেমে আসে। আন্দোলন-বিক্ষোভে অন্তত তিন জন নিহত হয়। এদিকে নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস (ওএএস) রোববার জানায়, ব্যাপক জালিয়াতির প্রমাণ পেয়েছে আর তারা। এরপর ক্রমে মোরালেসের ওপর চাপ বাড়তে শুরু করে। তার কয়েকজন রাজনৈতিক মিত্র পদত্যাগ করেন। তারা তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানান। অন্যদিকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল উইলিয়াম কালিমান ‘শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায়’ মোরালেসকে পদত্যাগের আহ্বান জানান।

এরপর পরিস্থিতি তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে বুঝতে পেরে তিনি পদত্যাগের ঘোষনা দেন। মোরালেস বলেন, ‘আমি পদত্যাগ করছি এবং আমার পদত্যাগ পত্র আইনসভার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আদিবাসী সম্প্রদায় ও সকল বলিভিয়ানের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শান্তির চেষ্টা করা আমার দায়িত্ব।’ এর আগে ভাইস প্রেসিডেন্ট আলভারো গার্সিয়া লিনেরা এবং সিনেট প্রেসিডেন্ট আদ্রিয়ানা সালভাতিয়েরা পদত্যাগ করেন। মোরালেসের পদত্যাগের ঘোষনার পর সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় নেমে আসে এবং আনন্দ মিছিল করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button