জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

নভেম্বরে রোহিঙ্গা ফেরানো শুরুর আশ্বাস মিয়ানমারের

এবিএনএ: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর নতুন আশ্বাস দিয়েছে মিয়ানমার। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটিকে রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে একমত হয়েছে দুই দেশ। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় দুই দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের তৃতীয় বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, নভেম্বরের মাঝামাঝি আমরা প্রত্যাবাসন শুরু করতে পারব। এটা হবে প্রথম গ্রুপ।’ অবশ্য এর আগেও দুইবার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর সময় জানিয়েও পিছু হটে মিয়ানমার। আর এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার বিরক্তিও জানিয়েছেন।

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিসয়ে গত ১৬ জানুয়ারি মিয়ানমারের সঙ্গে ফিজিক্যাল অ্যারাঞ্জমেন্ট চুক্তি করে বাংলাদেশ। এই চুক্তি অনুযায়ী ২৩ জানুয়ারি থেকে প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা। কিন্তু সেটা হয়নি। এরপর ১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ সফররত মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খ শোয়ের হাতে আট হাজার ৩২ জনের একটি তালিকা দেয়া হয়। এরাই সবার আগে মিয়ানমার ফিরে যাবে বলে কথা দেয় মিয়ানমার। সেটিও হয়নি।

আজকের বৈঠকে বাংলাদেশের ১৫ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক। আর মিয়ানমারের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে। বৈঠকে কী নিয়ে কথা হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের ফেরতের বিষয়ে সেফটি ও সিকিউরিটি নিয়ে কথা বলেছি। আমাদের মধ্যে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে নভেম্বরেই সেফটি ও সিকিউরিটির মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের স্বদেশে ফেরা শুরু হবে।’ ‘প্রত্যাবাসন একটি  জটিল প্রক্রিয়া।  তবে রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে এ সঙ্কটের শান্তিপূর্ণ সমাধান সম্ভব। আর আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।’মিয়ানমারের পররাষ্ট্র সচিব মিন্ট থোয়ে বলেন, ‘ জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে আন্তরিক ও খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। কিছু বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তও হয়েছে। যারা ফিরে যাবেন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ আমরা সেখানে নিয়েছি। তাছাড়া রাখাইন রাজ্যে কোনো ধরনের বৈষম্য যেন না হয়, সেজন্য স্থানীয় কর্মকর্তা আর পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’ সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মিন্ট থোয়ে বলেন, ‘আমরা রাজনৈতিক সদিচ্ছা, নমনীয়তা ও সমঝোতার মনোভাব দেখিয়েছি বৈঠকে, যাতে সম্ভব দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রত্যাবাসন শুরু করা যায়।’ রাখাইন রাজ্যে বসবাসকারী মুসলিম রোহিঙ্গাদেরকে নিজের নাগরিক বলে স্বীকার করে না মিয়ানমার। এক সময় তাদের নাগরিক অধিকার থাকলেও তা বাতিল করা হয় ১৯৮২ সালে। মিয়ানমারের দাবি, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি এবং তাদেরকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে হবে।

ওই বছর থেকেই নানা সময় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী এবং নানা সময় বাংলাদেশে প্রাণ বাঁচাতে এসেছে কয়েক লাখ রোহিঙ্গা। এদেরকে ফিরিয়ে নিতে বারবার আলোচনা হলেও মিয়ানমার সেই উদ্যোগ নেয়নি।

আগস্টের শেষ দিকে রাখাইন রাজ্যে কয়েকটি পুলিশি চেকপোস্টে হামলার জেরে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। প্রাণ বাঁচাতে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসে রোহিঙ্গারা। আর মানবিক কারণে সীমান্ত খুলে দেয় বাংলাদেশ। এরপর দুই মাসে ছয় থেকে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। সব মিলিয়ে এখন বাংলাদেশে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে বলে সরকারের তথ্য বলছে। রোহিঙ্গাদের কক্সবাজারে অস্থায়ী শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় দেওয়া বাংলাদেশ এই বিষয়টি এবার জাতিসংঘে তুলে ধরেছে বেশ জোরালভাবে। সাধারণ অধিবেশনের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার নির্যাতনের কথা তুলে ধরে তাদেরকে প্রত্যাবাসনে আন্তর্জাতিক সহায়তা চান।এরপর রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান বন্ধ ও তাদের ফিরিয়ে নিতে বাংলাদেশের প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস হয়েছে জাতিসংঘে।রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চেষ্টার পাশাপাশি দ্বিপাক্ষিক আলোচনা চালিয়ে যায় ঢাকা।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button