এবিএনএ: আবহাওয়ার পূর্বাভাসে চলতি আগস্ট মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু ভরা বর্ষার শ্রাবণ মাসের শেষটা কাটে প্রায় অনাবৃষ্টিতে। আর শ্রাবণ শেষে ভাদ্রের শুরুতেই নেমেছে তালপাকা গরম। মৌসুমের স্বাভাবিকের চেয়ে তিন থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপমাত্রা নিয়ে চোখ রাঙাচ্ছে আবহাওয়া। ভাদ্রের এই দাবদাহে হাঁসফাঁস উঠেছে সাধারণ মানুষের। আকাশ ঠিকরে নামছে গা-জ্বলা তপ্ত রোদ, আর তাতে বইছে লু হাওয়া। এই উত্তাপ আর ভাপসা গরম থাকবে আরও দু-তিন। কেননা এই সময়ে বৃষ্টিপাতের তেমন সম্ভাবনা নেই বলে আবহাওয়াবিদদের ধারণা। আর তিন দিন পর কোরবানির ঈদ। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বসেছে কোরবানির পশুর হাট। সেখানে এখন হাজার হাজার গরুর সমাগম। এদের বেশির ভাগই খামারের আরামে লালন করা। ছায়ায় ও আর বৈদ্যুতিক পাখার নিচে লালিত এসব গরু এখন খোলা মাঠের হাটে গরমে হাঁসফাঁস করছে। যদিও মাথার ওপর পলিথিন দিয়ে বৃষ্টি রোধের চেষ্টা আছে খামারিদের, কিন্তু সেটি এখন রোদের আগুনে পুড়ে উত্তাপ ছড়াচ্ছে।
রাজধানীর বনরূপা পশুর হাটে শনিবার দুপুরে দেখা গেছে, বড় বড় গরুগুলো মাটিতে শরীর রেখে কামারশালার হাঁফরের মতো হাঁফাচ্ছে। অনেক খামারি তাদের গরুর গায়ে পানি ঢেলে মুছে দিচ্ছে। অল্প যে কজন ক্রেতা ঘুরে দেখছেন, তারাও ঘেমেনেয়ে দ্রুত হাট ছেড়ে যান। তাদের একজন ফজলে হোসেন রাব্বি বলেন, এ রকম গরম থাকলে দিনে কেনাবেচা কঠিন হবে। আর এ পরিস্থিতিতে অনকে গরু দু-তিন দিন সুস্থ থাকবে কি না সন্দেহ।
শনিবার সারা দুপুরে মেঘের কিংবা ছায়ার দেখা মেলেনি। গরমে হাঁসফাঁস দেখা গেছে রাজধানীর পথচারী আর বাসযাত্রীদের। ঘামে ভেজা শরীরে শ্রমিক আর পথচারীদের পথের পাশে গাঁছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে-বসে একটু জিরিয়ে নিতে দেখা গেছে অনেক স্থানে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বজলুর রশিদ বলেন, গত দুই সপ্তাহে পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হওয়ায় এখন বেশি মাত্রায় গরম অনুভূত হচ্ছে। এ ছাড়া বঙ্গোপসাগরে যে নিম্নচাপটি তৈরি হয়েছিল, সেটি ভারতের গুজরাটের দিকে চলে যাওয়ায় বাংলাদেশে কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি।
বজলুর রশিদ বলেন, এ মাসে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে একে একে দুটি লঘুচাপ থেকে সৃষ্ট মৌসুমি নিম্নচাপ উড়িষ্যা হয়ে ভারতে দুর্বল হয়ে স্থলচাপ আকারে কেটে যায়। উভয় মৌসুমি নিম্নচাপ বাংলাদেশের উপকূলের অভিমুখী ও সক্রিয় হলে প্রচুর বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু মৌসুমি নিম্নচাপটি কেটে যাওয়ার ফলে বন্দরে সতর্ক সংকেত গতকাল তুলে নেয়া হয়।
গত কয়েক দিন দেশের অধিকাংশ জায়গায় তাপমাত্রা ৩৪-৩৫ ডিগ্রি এমনকি তারও উপরে অবস্থান করছে। এই তাপমাত্রা মৌসুমের স্বাভাবিকের চেয়ে স্থানভেদে তিন থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এই সময়ে ঢাকায় স্বাভাবিক তাপমাত্রা থাকার কথা ৩১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আজ শনিবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় পাঁচ ডিগ্রি বেশি- ৩৬.৫ সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। আর দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় সিলেটে, ৩৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গতকাল (শুক্রবার) দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল যশোরে ৩৭.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৫.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
গত কিছুদিন দেশের দুয়েকটি এলাকায় ছিঁটেফোঁটা বিচ্ছিন্নভাবে বৃষ্টি হলেও সারা দেশে সূর্যের কড়া তেজে খটখটে রুক্ষ আবহাওয়া বিরাজ করছে। বাতাসে আর্দ্রতার মাত্রা বেশি থাকায় ভাপসা গরমে-ঘামে সর্বত্র নাকাল অবস্থা।
গত কয়েক দিন বৃষ্টি না হওয়ায় তাপমাত্রা বেড়ে গেছে জানিয়ে আবাহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে যে নিম্নচাপটি গড়ে উঠেছিল সেটি ভারতের গুজরাটের দিকে বৃষ্টি ঝরিয়েছে। এর প্রভাব বাংলাদেশের ওপরে না থাকায় বৃষ্টি আমাদের এখানে হয়নি। তবে আরও একটি লঘুচাপ গড়ে উঠছে, সেটির প্রভাব বাংলাদেশের ওপর পড়লে বৃষ্টিপাত হবে।’
বজলুর রশিদ বলেন, ‘যে লঘুচাপটি গড়ে উঠছে, এটির চলাচল পরশু অথবা তার পরদিন বোঝা যাবে। লঘুচাপটি যদি বাংলাদেশের ওপর প্রভাব বিস্তার করে তবে প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টি হবে। যদি পশ্চিমবঙ্গের দিকে প্রভাব বিস্তার করে তবে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর সেটি যদি উড়িষ্যার দিকে যায় তবে আমাদের এখানে বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।’
আবহাওয়ার সিনেপটিক অবস্থায় দেখা যায়, মধ্যপ্রদেশ এবং তৎসংলগ্ন গুজরাট ও উত্তর মধ্য মহারাষ্ট্রে অবস্থানরত স্থল নিম্নচাপটি লঘুচাপে পরিণত হয়েছে এবং সর্বশেষ মৌসুমি বায়ুর অক্ষের সঙ্গে মিলিত হয়েছে।
মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত। পরবর্তী ২৪ ঘন্টায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বরিশা, ঢাকা ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গা এবং রংপুর, রাজশাহী, খুলনা ও ময়মনসিংহ বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারা দেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.