এবিএনএ : বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে সাবেক চাকমা রাজা ত্রিদিব রায়ের নামে সমস্ত স্থাপনা থেকে তার নাম সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় চাকমাদের তৎকালীন রাজা ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের পক্ষে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীগুলোর, বিশেষ করে চাকমাদের ভূমিকা নিয়ে বেশ বিতর্ক আছে।
সে প্রেক্ষাপটে রাঙামাটির দুজন বাসিন্দা হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করে বলেন, ত্রিদিব রায় একজন স্বাধীনতা বিরোধী হলেও তার নামে বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে। একজন স্বাধীনতা বিরোধীর নাম অনুসারে কোন স্থাপনা থাকা উচিত নয় বলে রিট আবেদনকারীরা বলেন। সে আবেদনের পর হাইকোর্ট আগামী ৯০ দিনের মধ্যে সকল স্থাপনা থেকে ত্রিদিব রায়ের নাম সরিয়ে ফেলার আদেশ দিয়েছে বলে জানান ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস। তিনি জানান, ত্রিদিব রায়ের নামে কতগুলো স্থাপনা আছে সে বিষয়ে নিদিষ্ট কোন পরিসংখ্যান আদালতে তুলে ধরতে পারেননি রিট আবেদনকারীরা।
তারা শুধু একটি স্কুলের নাম উল্লেখ করেছেন যেটি ত্রিদিব রায়ের নাম অনুসারে নামকরণ করা হয়েছে। কে এই ত্রিদিব রায়?
লন্ডন-ভিত্তিক ভারতীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষক প্রিয়জীত দেবসরকার, যার বই 'দ্য লাস্ট রাজা অফ ওয়েস্ট পাকিস্তান' ২০১৫ সালে প্রকাশিত হয়েছে। সে বইতে তিনি বর্ণনা করেছেন, ত্রিদিব রায় কেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক খেলার মাঠে চাকমা রাজাকে একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে দেখেছেন লেখক। বইটির মূল লক্ষ্য ছিল, সেই বিশ্লেষণের আলোকে রাজা ত্রিদিব রায়-এর কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা এবং ব্যাখ্যা করা।
মি: দেবসরকারের মতে, ১৯৫৩ সালে সিংহাসনে আরোহণ থেকে শুরু করে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ত্রিদিব রায় নিজেকে পশ্চিম পাকিস্তানের এক জাতিগোষ্ঠীর রাজা হিসেবে দেখেছেন। প্রিয়জীত দেবসরকার: 'ত্রিদিব রায় ছিলেন এমন একজন রাজা যিনি ব্যক্তি স্বার্থ-র জন্য তাঁর রাজত্ব হারিয়েছেন' রাজা ত্রিদিব রায় খুব চিন্তা-ভাবনা করেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। মি: দেবসরকারের গবেষণা মতে, ত্রিদিব রায়-এর সিদ্ধান্ত ছিল আত্মস্বার্থ-কেন্দ্রিক। নিজের রাজত্ব এবং স্বায়ত্তশাসন টিকিয়ে রাখতেই ত্রিদিব রায় পাকিস্তানের সাথে হাত মিলিয়েছিলেন। "উনি চাইছিলেন তাঁর রাজত্ব এবং রাজ পরিবারের শাসন যেন বজায় থাকে, যদিও অনেক সাধারণ চাকমা তাঁর নীতির বিপক্ষে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন", মি: দেবসরকার বলেন। বইটির ভিত্তি হচ্ছে দালিলিক গবেষণা, অর্থাৎ প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত দলিল ছিল বইটির মৌলিক উপাদান।
গবেষণার কাজ হয়েছে বিশ্বর বিভিন্ন অঞ্চলে - বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি থেকে শুরু হয়ে পাকিস্তানের ইসলামাবাদ, তারপর শ্রী লংকা এবং থাইল্যান্ড হয়ে আর্জেন্টিনার বুয়েনস আয়ার্স। ত্রিদিব রায়-এর রাজনৈতিক জীবন ১৯৭১-এর পর থেমে থাকে নি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৭৩ সালে রাজা ত্রিদিব রায়কে দেশের প্রেসিডেন্ট হবার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি বৌদ্ধ ধর্ম ত্যাগ করে মুসলিম হতে চাননি বলে পদ গ্রহণ করতে পারেননি। চাকমাদের ৫০তম রাজা ত্রিদিব রায়-এর নাম ১৯৭২ সালের দালাল আইনে অভিযুক্তদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তিনি সেই অভিযোগ মোকাবেলা করার জন্য কখনো বাংলাদেশে ফিরে আসেননি এবং ৭৯ বছর বয়সে ২০১২ সালের ১২ই সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি নির্বাসনে ছিলেন।
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.