এবিএনএ : নজরকাড়া সাজসজ্জা আর উৎসাহ-উদ্দীপনায় কাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হচ্ছে আওয়ামী লীগের ২০তম সম্মেলন। দলটির নেতারা বলছেন, এই প্রথমবারের মতো এত জাঁকজমকভাবে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সম্মেলন উপলক্ষে দলটির সব জেলা কার্যালয়ও সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। তবে হঠাৎ করে সাধারণ সম্পাদক পদের পরিবর্তনের গুঞ্জনে প্রস্তুতির সঙ্গে নেতা-কর্মীদের মধ্যে কে কোন পদ পাচ্ছেন তা নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা।
সম্মেলন সম্পর্কে জানতে চাইলে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং মঞ্চ ও সাজসজ্জা উপকমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মঞ্চ, প্যান্ডেল সবকিছুর কাজ প্রায় ৯৫ ভাগ শেষ। আজ রাতেই সব কাজ শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, কাউন্সিলরদের কমিটি নিয়ে আগ্রহ বেশি থাকবে। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাউন্সিলররা ঢাকায় এসেছেন। তাই তাঁদের মধ্যে নানা আলোচনা থাকাটাই স্বাভাবিক।
বাগেরহাট থেকে আসা আওয়ামী লীগ নেতা জহিরুল ইসলাম বললেন, দুদিন আগে ঢাকায় এসেছেন তিনি। দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে কে আসছেন, সে ব্যাপারে প্রথম দিকে তেমন আলোচনা তাঁদের মধ্যে হয়নি। তবে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে এই আলোচনা জোরেশোরে শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সব জায়গায় আলোচনা সাধারণ সম্পাদক কে হচ্ছেন? পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এবার নতুনদের অনেকে জায়গা পাবেন বলে আলোচনা আছে। সেগুলো নিয়েও তাঁরা নিজেদের মধ্যে কথা বলছেন। তিনি বলেন, তাঁদের নেতা তালুকদার আবদুল খালেক কেন্দ্রীয় কমিটির বড় পদ পেতে পারেন বলে তাঁরা শুনছেন।
একই কথা বললেন কুড়িগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা সাদিউল ইমাম। তিনি বলেন, গতকালের আগ পর্যন্ত সাজসজ্জা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। কাউন্সিলের বাজেট, খাবার, বিদেশ থেকে কারা আসছেন—এসব নিয়ে কথা হতো। তাঁর মতে, দলের প্রধান দুটি পদে পরিবর্তন হবে না, এমনটাই শুনেছেন তাঁরা। কিন্তু গতকালের পর পরিস্থিতি পরিবর্তন হয়েছে। এখন তাঁদের সব আলোচনা কমিটি নিয়ে।
গত বুধবার গঠনতন্ত্র প্রণয়ন-বিষয়ক উপকমিটি উত্থাপিত সংশোধিত গঠনতন্ত্রে চূড়ান্ত সম্মতি দেওয়া হয়। সংশোধিত গঠনতন্ত্রে কার্যনির্বাহী সংসদের আকার ৭৩ থেকে ৮১ সদস্যবিশিষ্ট করার প্রস্তাব করা হয়। এতে সভাপতিমণ্ডলীর চারটি, একটি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, একটি সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দুজন সদস্য বাড়ানোর সুপারিশে সম্মতি দেয় কার্যনির্বাহী সংসদ। ফলে নতুন করে আটটি পদ সৃষ্টি হয়েছে। সভাপতিমণ্ডলীর দুটি পদ এখন ফাঁকা। তা ছাড়া বর্তমান কমিটির কিছু সদস্য বাদ যেতে পারেন, এমন আলোচনাও আছে। তাই এবারের কাউন্সিলের পর কেন্দ্রীয় কমিটিতে নতুন মুখের সংখ্যা বাড়বে। এখন আলোচনা হচ্ছে এসব পদে কারা আসছেন। তা ছাড়া গত বুধবার দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকের পর থেকেই খবর ছড়িয়ে পড়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক। ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক হলে দলে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের অবস্থান কী হবে, সেটাও আসছে আলোচনায়। তা ছাড়া সভাপতিমণ্ডলীতে সব অঞ্চলের প্রতিনিধি রাখার চেষ্টা করা হবে বলে কেন্দ্র থেকে বলা হচ্ছে। তাই সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের নেতাদের মধ্যে কারা সভাপতিমণ্ডলীতে আসছেন, তা নিয়েও চলছে নানা হিসাব-নিকাশ।
এবারের স্লোগান ও সূচি: এবারের সম্মেলনের স্লোগান তৈরি করা হয়েছে অনেক আগেই। ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’ স্লোগানে অনুষ্ঠিত হবে সম্মেলন। সম্মেলনের প্রথম দিন হবে উদ্বোধনী অধিবেশন। এই দিন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সকাল ১০টায় বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে দলের ২০তম সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ, শোকপ্রস্তাব, আগত অতিথিদের স্বাগত জানিয়ে অভ্যর্থনা উপকমিটির আহ্বায়কের ভাষণ, সাধারণ সম্পাদকের প্রতিবেদন পেশ, অতিথিদের ভাষণ এবং সর্বশেষ সভাপতির বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রথম দিনের কর্মসূচি শেষ হওয়ার কথা। এই দিন কাউন্সিলর, অতিথি এবং নেতা-কর্মীরা উপস্থিত থাকবেন।
এরপরে রোববার সকাল ১০টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে বসবে দলটির কাউন্সিল অধিবেশন। এখানেই ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্রের সংযোজন-বিয়োজন হবে। দলের তৃণমূলের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলবেন জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকেরা। এই অধিবেশনেই নির্বাচিত হওয়ার কথা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তবে অধিবেশনটি হবে রুদ্ধদ্বার। সেখানে গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার থাকবে না।
সম্মেলন ঘিরে ব্যাপক সাজসজ্জা: সম্মেলন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্থাপন করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন নৌকা আকৃতির বিরাট মঞ্চ। সাজানো হয়েছে চারপাশ তথা পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ আশপাশের এলাকা। আলোকসজ্জার পাশাপাশি গাছগুলোতে করা হয়েছে সাদা-লাল রং। মঞ্চে যাওয়ার রাস্তাগুলোয় আলোকসজ্জার পাশাপাশি সম্মেলনের পোস্টার-ব্যানার দিয়ে আচ্ছাদিত করা হয়েছে। এরই মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা-উপজেলার উল্লেখযোগ্য সড়ক, স্থান ও স্থাপনা সাজানো হয়েছে। নির্মাণ করা হয়েছে অসংখ্য তোরণ। করা হয়েছে আলোকসজ্জা। সন্ধ্যা হলেই লাল-নীল আলোয় রঙিন হয়ে উঠছে শহর-বন্দর-রাজপথ। একইভাবে আওয়ামী লীগের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দলীয় সভানেত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন গণভবন এবং তাঁর সরকারি কার্যালয়সহ রাজধানীর উল্লেখযোগ্য সড়কগুলো বিভিন্নভাবে সাজানো হয়েছে। সারা দেশের দলীয় কার্যালয়গুলোও সম্মেলন উপলক্ষে রঙিন করে সাজানো হয়েছে। রংবেরঙের কাপড় দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো সম্মেলনস্থল। মঞ্চের দুপাশে রাখা হয়েছে দলীয় সাবেক নেতাদের প্রতিকৃতি। ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্মেলনস্থলে উপস্থাপন করা হবে আওয়ামী লীগের ইতিহাস, ভাষা আন্দোলন, স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ এবং সরকারের ধারাবাহিক উন্নয়নের চিত্র। মঞ্চের সামনে ২০ হাজার অতিথির বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
মঞ্চ ও প্যান্ডেলের কাজ সমন্বয় করছেন গ্যালারি চিত্রকের নির্বাহী পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, সম্মেলন উপলক্ষে যে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে তার দৈর্ঘ্য ১৬৫ ফুট এবং প্রস্থ ৬৫ ফুট। এ ছাড়া মঞ্চে ডিজিটাল ডিসপ্লেও থাকবে এবং সম্মেলনের সাউন্ড সিস্টেমও থাকবে ডিজিটাল।
সম্মেলনের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা। এ ছাড়া উদ্যানের চারপাশের রাস্তা, নগরের সব কটি প্রবেশপথ এবং অন্যান্য স্থানেও নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা।
শৃঙ্খলা ও স্বেচ্ছাসেবক উপকমিটির সদস্যসচিব বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাতটি গেটসহ বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তা করতে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত ৫০টি দল কাজ করবে। এ ছাড়া মঞ্চ এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তায় স্বেচ্ছাসেবকেরা কাজ করবেন।
সম্মেলনের বিভিন্ন প্রকাশনা ছাপানো সম্পন্ন করা হয়েছে। সভাপতির ভাষণ, সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট, শোকপ্রস্তাব ছাপানো শেষ। প্রচারণার জন্য বানানো হয়েছে একাধিক সিডি। সেখানে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্য, আওয়ামী লীগ-বিএনপির প্রতিটি খাতে তুলনামূলক পদক্ষেপের চিত্র, বিএনপি-জামায়াতের সহিংস আন্দোলনের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। কাউন্সিলর-অতিথিদের দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছে ব্যাগ ও টুপি।
প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির সদস্যসচিব হাছান মাহমুদ বলেন, সব প্রকাশনার কাজ শেষ। আগামীকাল অতিথিদের পাটের ব্যাগে সম্মেলনের সব প্রকাশনা দেওয়া হবে।
সম্মেলনে অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য খাদ্য উপকমিটি নিয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। দুদিনের এ সম্মেলনে আসা কাউন্সিলর ও অতিথিদের জন্য ঐতিহ্যবাহী পুরান ঢাকার কাটারিং সার্ভিসকে খাবার সরবরাহের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মোরগ পোলাও, কাচ্চি বিরিয়ানি, ফিরনি, কোমল পানীয়, পানি ও পান দিয়ে আপ্যায়িত করা হবে তাঁদের। প্রতি বেলা ৫০ হাজার মানুষের খাবারের ব্যবস্থা থাকবে।
রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে তৈরি করা হয়েছে অভ্যর্থনা গেট। সেখানে অপেক্ষারত স্বেচ্ছাসেবকেরা আগতদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেবেন। ঢাকার স্থানীয় সাংসদেরা এই দায়িত্ব পালন করবেন। সম্মেলনস্থলে স্বাস্থ্য ক্যাম্প গড়ে তোলার পাশাপাশি রাজধানীর বাসস্ট্যান্ড ও ট্রেন স্টেশনগুলোতে থাকছে স্বাস্থ্য ক্যাম্প। প্রতিটি ক্যাম্পে চিকিৎসকের পাশাপাশি প্রাথমিকভাবে কাজে লাগে এমন সব ধরনের ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা থাকবে। সম্মেলনস্থলে থাকবে একাধিক অ্যাম্বুলেন্স।
উদ্বোধনী অধিবেশন এবং প্রথম দিন সন্ধ্যায় থাকছে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এরই মধ্যে থিম সং গাওয়ানো হয়েছে জনপ্রিয় গায়ক বাপ্পা মজুমদারকে দিয়ে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি তা পরিবেশন করবেন। এ ছাড়া থাকবে জাতীয় সংগীত, দেশাত্মবোধক গান, নাচ, কবিতা আবৃত্তি, বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নিজ নিজ সংস্কৃতির গান ও নাচ।
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.