এবিএনএ: টার্গেট ছিল অবসরপ্রাপ্ত সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী এবং ব্যবসায়ীরা। টার্গেটকৃতদের কোম্পানির উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে দামি গাড়িতে করে অফিসে নিয়ে আসতো। পরে চক্রের বিশেষায়িত দল যোগাযোগ করে তাদের উচ্চ বেতনের চাকরিতে নিয়োগ দেন। এরপর একই প্রতিষ্ঠানে অথবা সহযোগী কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারহোল্ডার হওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করতো।
অফিস কর্মকর্তাদের চালচলন, ব্যবহারের ফাঁদে সরল বিশ্বাসে নিজেদের টাকা বিনিয়োগ করেন ভুক্তভোগীরা। কিন্তু বিনিয়োগের কয়েকদিনের মধ্যেই হঠাৎই অফিসসহ উধাও সবাই। এভাবে প্রতারণা করে গত ১৫ বছরে ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ‘রয়েল চিটার ডেভলপমেন্ট’ সংক্ষেপে আরসিডি নামে কথিত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৭টা পর্যন্ত মিরপুর, দারুস সালাম, উত্তরা ও রামপুরা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ ভুয়া নথিপত্র ও সরঞ্জামাদি জব্দসহ প্রতারকচক্রটির ২২ সদস্যকে গ্রেফতার করে র্যাব-৪।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ইমরান হাসান (২৭), হুমায়ুন কবির হালিম (৫৭), মো. রফিকুল ইসলাম (৪৯) আব্দুল বারী আব্দুল আউয়াল (৪০), শাহাদাত হোসেন (৩০), মো. মিনহাজ (৫৬), কামরুজ্জামান (৪৬), হাবিবুর রহমান (৩৫), সঞ্জিত সাহা (৩৪), মেহেদি হাসান হাবিব (৩১), ইউসুফ (৫৩), মামুনুর রশীদ চৌধুরী (৩৪), মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান ওরফে আব্দুল জলিল (৫০), মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান (৩৫), রফিকুল ইসলাম (৬৪) এবং মো. মিজান (৩৫)।
শনিবার বেলা ১১টায় রাজধানীর কারওয়ানবাজারের র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরেন লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান। তিনি বলেন, সুসজ্জিত অফিস ও দামি গাড়ি ভাড়া নিয়ে মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির নামে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অফিস খুলে চক্রটি। পরে টার্গেট করা লোকদের কৌশলে অফিসে এনে ভুয়া চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে বিশ্বাস অর্জন করে নিত। তাদের বলা হতো, এই চুক্তির মাধ্যমে কোম্পানির উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কিছু দিন যাওয়ার পর তাদের কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার করার প্রস্তাব দেয় চক্রটি। এই প্রস্তাবে রাজি হলে তাদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা চায় চক্রের সদস্যরা। এভাবে নগদ অর্থ হাতে পাওয়ার পর পরই অফিসসহ উধাও হয়ে যেত প্রতারক চক্রটি।
মুফতি মাহমুদ খান বলেন, এ চক্র অন্য সব প্রতারক চক্রের মতো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করতো না। তারা প্রতারণাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করে একটি সাংগঠনিক কাঠামোর মাধ্যমে কার্যক্রম চালাতো। এ জন্য বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যেত তারা। প্রতিটি গ্রুপে ৫টি স্তরে বেশ কয়েকজন সদস্যরা কাজ করতো। স্তরগুলো হলো- সাব ব্রোকার, ব্রোকার, ম্যানেজার, চেয়ারম্যান এবং কোম্পানির বস। সাব-ব্রোকার হলো চক্রটির মাঠ পর্যায়ের কর্মচারী। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, বেসরকারি কর্মচারী, কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তিবর্গ ও জমিজমার মালিকদের টার্গেট করে। টার্গেটকৃতদের যাবতীয় তথ্যাদি ব্রোকারকে দেয়ায় সাব-ব্রোকারের কাজ। সাব-ব্রোকারের দেয়া তথ্য যাচাই করে টার্গেটকৃতদের কাছে গিয়ে পরিচিত হন ব্রোকার। তারা লোভনীয় প্রস্তাব দিয়ে প্রলুব্ধ করেন এবং প্রধান কার্যালয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য মোবাইল নম্বর দেন। নম্বর সংগ্রহ করে যোগাযোগও অব্যাহত রাখেন ব্রোকার।
টার্গেটকৃতদের অফিসে এনে আপ্যায়ন ও সৌহার্দপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে প্রভাবিত করেন ম্যানেজার। এর পর তাদের আবারও বিভিন্ন প্রকার লোভনীয় প্রস্তাব দেন। এবার ম্যানেজারের দেয়া লোভনীয় প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ভুয়া চুক্তিপত্র তৈরি করেন চেয়ারম্যান। এতে স্বাক্ষরও করেন উভয়পক্ষ। পরে প্রতারক বস-সংক্রান্ত বিভিন্ন আলাপ-আলোচনা করে আগ্রহ সৃষ্টি করেন চেয়ারম্যান। চক্রটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেন বস। নিজেকে তিনি বিদেশি নাগরিক হিসেবে পরিচয় দিতেন। বস অফিসে আসলে প্রতারকচক্রের অন্যান্য সদস্যরা তার সঙ্গে রয়েল কিং প্লে (তাস) খেলার প্রস্তাব দেন। এতে রাজিও হন বস। একপর্যায়ে টার্গেটকৃতদের তাস খেলার প্রস্তাব দিয়ে প্রতারণার কাজটি সম্পন্ন করেন। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান মুফতি মাহমুদ।
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.