এবিএনএ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পঁচাত্তরের পর ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুর নাম ইতিহাস থেকে মুছে দিতে চেয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর খুনি আর একাত্তরের পরাজিত শক্তির মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না। এ কারণে পঁচাত্তরের পর বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নানা অপবাদ ও অপপ্রচার করে মানুষের মন বিষাক্ত করা হয়েছিল। অনেক সময় মনে হতো, দেশ স্বাধীন করাটাই বঙ্গবন্ধুর একটা মহাঅপরাধ হয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে না থাকলেও বাংলাদেশ যত দিন থাকবে, কেবল দেশই নয়, বিশ্বজুড়ে তার অবদানের কথা সবাই স্মরণ করবে। তিনি অমর, অক্ষয় ও অব্যয়। বঙ্গবন্ধু চিরদিন এই বাঙালি জাতির হৃদয়ে থাকবেন।
শুক্রবার রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট আয়োজিত বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের ওপর সেমিনারে সভাপতির বক্তব্যে ট্রাস্টের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও ট্রাস্টের পক্ষ থেকে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়।
ভাষা আন্দোলন থেকে মুক্তিযুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবিস্মরণীয় নেতৃত্বের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, 'পাকিস্তান সৃষ্টির ধারণা থেকে পাকিস্তান যখন অনেক দূরে সরে গেল, তখনই বঙ্গবন্ধু সিদ্ধান্ত নিলেন পশ্চিমাদের সঙ্গে থাকা যাবে না। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন থেকেই জাতির পিতার যাত্রা শুরু। অথচ ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতার যে অবদান, এ আন্দোলন যে তিনিই প্রথম শুরু করেছিলেন, তার ইতিহাসটাও সম্পূর্ণ মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। তিনি যে ১৯৪৮ সাল থেকে ভাষা আন্দোলন শুরু করেছিলেন, সেই কথাটাও অনেকেই মুছে ফেলতে চেয়েছিল। একইভাবে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার পর থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত একই ঘটনা আমরা দেখি।'
এ বিষয়ে পঁচাত্তরের পর বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণও নিষিদ্ধ থাকার বিষয়টি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'একটি মানুষ তার জীবনে মাত্র ৫৪ বছর সময়ে, দুই-দুইটি স্বাধীনতা এনে দিলেন। প্রথমে পাকিস্তান, পরে বাংলাদেশ। অথচ ৭ মার্চের ভাষণ দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ ছিল। এ ভাষণ বাজানোর জন্য আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বহু নেতাকে জীবন দিতে হয়েছে। একটা সময় বঙ্গবন্ধুর নাম এমনভাবে নিষিদ্ধ ছিল, অনেক ছবির মাঝে তার ছবিটা লুকিয়ে রাখতে হতো।'
তিনি বলেন, 'একটা শোষিত জাতির মুক্তির জন্য জাতির পিতা সারাটা জীবন সংগ্রাম করে গেলেন। কতগুলো বছর তিনি একটানা জেলে ছিলেন। কষ্ট করে দেশটা স্বাধীন করলেন। মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন, ওই সময়েও অনেকে সহযোগিতা করেনি। এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছিল, যা পঁচাত্তরের পটভূমি তৈরি করে দিয়েছিল। বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে সম্মানজনক অবস্থানে পৌঁছেছিল, পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর আবার ঘাতকের দেশ হিসেবে পরিচিতি পেল।'
৭ মার্চের ভাষণের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী এর চেতনা নতুন প্রজন্মের মধ্যে তুলে ধরার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, 'আমাদের নতুন প্রজন্ম যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, যারা হয়তো ৭৫-এর কিছু আগে জন্ম নিয়েছে, তার মধ্য দিয়ে যারা বড় হয়ে উঠেছে, তাদের মধ্যে ৭ মার্চের ভাষণের বিষয়টা তুলে ধরতে হবে।'
এ ক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্টের পদক্ষেপের তিনি প্রশংসা করেন।
ভাষণের পটভূমি তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, 'বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের মূল ভাষণটি ২৩ মিনিটের হলেও ১৮-১৯ মিনিটের রেকর্ড করা হয়েছিল। সেই ভাষণে বঙ্গবন্ধু ২৩ বছরের পাকিস্তানি শাসনের বঞ্চনার ইতিহাসের সব কিছু বিবৃত করেছিলেন। একই সঙ্গে বাঙালিকে ভবিষ্যতে কী করতে হবে, একটা গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি কীভাবে নিতে হবে, তাও তিনি বলে গিয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, '৭ মার্চের ভাষণ দেওয়ার সময় আমিও মাঠে ছিলাম। ওই ভাষণের মঞ্চ দেখলেও বুঝবেন, তেমন কোনো প্রস্তুতি ছিল না। একটা উঁচু মঞ্চ আর একটা মাইক। এ ভাষণের জন্য আমাদের অনেক জ্ঞানী-গুণী নেতা, কেউ চিরকুট দিচ্ছেন, কেউ বলে যাচ্ছেন-নেতা এটা করতে হবে, বলতে হবে। এখানে আমি বলব, সব থেকে বড় অবদান আমার মায়ের। মা কিন্তু জনসম্মুখে আসেননি। কিন্তু তিনি বলেছিলেন, অনেকে অনেক কিছু বলে, লিখে দিয়েছে, একমাত্র তুমিই জান কী বলতে হবে। তোমার মনে ঠিক যে কথাগুলো আসবে, তুমি তাই বলবে। আমার মনে আছে, তিনি কথা শুনে হাসলেন, তারপর মাঠের দিকে রওনা করলেন। পেছন পেছন আমি, রেহানা আরেকটা গাড়িতে গেলাম।'
শেখ হাসিনা বলেন, 'ভাষণ শেষে বঙ্গবন্ধু যখন বাসায় ফিরলেন, তখন মানুষে মানুষে সয়লাব ছিল ধানমণ্ডি এলাকা। আমি ঘরের মধ্যে ঢুকে দেখি, আমাদের কয়েকজন ছাত্রনেতা হঠাৎ বেশ উত্তেজিত। তারা বলছেন, লিডার এটা কী করলেন আপনি, সবাই খুব হতাশ। আমি তখন বললাম, আপনারা এ রকম মিথ্যা কথা বলেন কেন? আমি মানুষের মধ্যে যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখে এলাম, সেখানে কোনো হতাশা দেখিনি। আমি বললাম, আব্বা আপনি এদের কথা বিশ্বাস করবেন না। আমি নিজে দেখে এলাম, মানুষ স্লোগান দিতে দিতে উৎফুল্ল হয়ে পড়েছে শহরে।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি এখন মনে করি, তারা ওই কথা কেন বলেছিল, তা নিয়ে এখন চিন্তা করার আছে। তাহলে তারা কাদের হয়ে ওই কথা বলেছিল। কারণ বঙ্গবন্ধু তো জানতেন কীভাবে মানুষের মুক্তি আসবে।'
জাতির পিতার ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'স্বাধীনতা ঘোষণার বাণীটা আগেই প্রস্তুত করা ছিল। ৩২ নম্বরের বাড়ির লাইব্রেরিতে থাকা টেলিফোন দিয়ে শওকত সাহেবের কাছে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাদের নির্দেশ দেওয়া ছিল-পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের সঙ্গে সঙ্গে বার্তাটা পৌঁছে দিতে। বার্তাটা দেওয়ার পর পরই বাড়িতে আক্রমণ করে বঙ্গবন্ধুকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।'
সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ট্রাস্টের সদস্য সচিব শেখ হাফিজুর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান। আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. জিন্নাত হুদা ও সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাত। ধন্যবাদ জানান ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী মাসুরা হোসেন।
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.