এবিএনএ : রাজধানীর ওয়ারীর বনগ্রামের স্কুলছাত্রী সামিয়া আফরিন সায়মাকে (৭) ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত হারুন অর রশিদ গ্রেফতারের পর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। পুলিশকে দেয়া জবানবন্দিতে সে জানিয়েছে, ছাদ ঘুরে দেখানোর কথা বলে ওই বাসার ৮ তলার লিফট থেকে সায়মাকে ছাদে নিয়ে যায় সে। সেখানে নবনির্মিত ৯ তলার ফ্ল্যাটে নিয়ে সায়মাকে ধর্ষণ করে। এরপর নিস্তেজ অবস্থায় পড়ে থাকে সায়মা। মৃত ভেবে সায়মার গলায় রশি বেঁধে টেনে রান্নাঘরে রেখে পালিয়ে যায় এই নরপশু।
হারুন অর রশিদকে গ্রেফতারের পর রোববার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রোমহর্ষক এই হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন। ডিএমপির এ কর্মকর্তা বলেন, ‘এ ধরনের অপরাধীরা সাধারণত ধর্ষণের পর যখন ভাবে এ অপকর্মের কারণে সে বাঁচতে পারবে না তখনই হত্যার মতো ঘটনা ঘটায়। এ ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে।’ হারুনের স্বীকারোক্তির বর্ণনা দিয়ে আবদুল বাতেন বলেন, ‘শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে। ওই দিন মাকে বলে শিশু সায়মা ৮ তলায় যায়। সেখানে ফ্ল্যাট মালিক পারভেজের একটি শিশুর সঙ্গে খেলা করতে যায় সায়মা। সেখানে গেলে পারভেজের স্ত্রী জানায় তার মেয়ে ঘুমাচ্ছে। সেখান থেকে বাসায় ফেরার উদ্দেশে লিফটে ওঠে সায়মা। লিফটেই সায়মার সঙ্গে দেখা হয় পারভেজের খালাতো ভাই হারুনের। হারুন সায়মাকে লিফট থেকে ছাদ ঘুরে দেখানোর কথা বলে ছাদে নিয়ে যায়। সেখানে সায়মাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। সায়মা চিৎকার করলে মুখ চেপে ধর্ষণ করে। সায়মাকে নিস্তেজ দেখে গলায় রশি লাগিয়ে টেনে নিয়ে যায় রান্নাঘরে। সেখানে সিঙ্কের নিচে রাখে। এরপর পারভেজের বাসায় না ফিরে হারুন গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার তিতাস থানার ডাবরডাঙ্গা এলাকায় গিয়ে গা ঢাকা দেয়।’
আবদুল বাতেন বলেন, ‘হারুন পারভেজের খালাতো ভাই। পারভেজের বাসায় গত দুমাস ধরে থাকে সে। কাজ করত পুরান ঢাকায় পারভেজের রঙের দোকানে।’ আবদুল বাতেন আরও বলেন, ‘হারুনকে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আজই আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড চাওয়া হবে।’
গ্রেফতার হারুনের বাড়ি কুমিল্লায়। ওয়ারীর বনগ্রামের যে বহুতল ভবনে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনাটি ঘটেছে, তার সপ্তম তলায় থাকত সে। আর শিশুটি পরিবারের সঙ্গে থাকত ষষ্ঠ তলার ফ্ল্যাটে। শিশুর বাবা আবদুস সালাম নবাবপুরের একজন ব্যবসায়ী। গত ফেব্রুয়ারিতে ওই ভবনে ফ্ল্যাট কেনার পর তিনি পরিবার নিয়ে সেখানে ওঠেন। তার দুই ছেলে, দুই মেয়ের মধ্যে সবার ছোট সায়মা রাজধানীর একটি স্কুলে নার্সারিতে পড়ত। অন্য ফ্ল্যাটের শিশুদের সঙ্গে খেলতে যাওয়ার কথা বলে প্রতিদিনের মতোই বাসা থেকে বের হয়েছিল সে। কিন্তু রাত হওয়ার পরও না ফেরায় তার পরিবার খোঁজাখুঁজি শুরু করে।
নবম তলায় খালি ফ্ল্যাটের ভেতরে তাকে পাওয়া যায় গলায় রশি পেঁচানো, মুখ বাঁধা ও রক্তাক্ত অবস্থায়। শিশু সায়মার লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন ওয়ারী থানার এসআই হারুন অর রশিদ। প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেছেন, শিশুটির মাথার বামপাশে সামান্য থেঁতলানো জখম রয়েছে। মুখ দিয়ে রক্ত বের হওয়ার চিহ্ন রয়েছে। গোপনাঙ্গ রক্তাক্ত ও থেঁতলানো। নবম তলার উত্তর-পশ্চিম পাশের ফ্ল্যাটের রান্নাঘরে লাশ পাওয়া যায়। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ জানান, মেয়েটিকে ধর্ষণ করা হয় এবং পরে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়। ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার বিকালে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয় শিশুটিকে।
সায়মার বাবা আবদুস সালাম যুগান্তরকে বলেন, মসজিদে মাগরিবের নামাজ পড়ে বাসায় আসি। বাসায় ফিরে সায়মার মাকে জিজ্ঞেস করি মেয়ে কোথায়? তিনি জানান, উপরের ফ্ল্যাটে খেলতে গেছে। পরে ৯ তলার নির্মাণাধীন ফ্ল্যাটে তার মৃতদেহ পাই। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি যুগান্তরকে বলেন, মেয়ে হত্যার বিচার চাই। ঘাতককে চিহ্নিত করে এমন শাস্তি দেয়া হোক যাতে তা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। আর যেন কারও মেয়ে সায়মার মতো নিষ্ঠুরতার বলি না হয়। আর যেন কোনো বাবা-মায়ের কোল খালি না হয়। তিনি বলেন, তার মেয়ের ঘাতককে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.