এবিএনএ: নির্বাচন ও সংঘাত-সহিংসতা-সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মাহবুব তালুকদার। তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অতিউৎসাহী হয়ে কিছু না করার আহ্বান জানিয়েছেন। রিটার্নিং অফিসারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদের সাহসিকতার সঙ্গে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বুধবার দুপুরে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে নিজের বিবেচনায় রাজনৈতিক দল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাচনী কর্মকর্তা ও ভোটারদের উদ্দেশে চারটি বার্তায় এসব কথা বলেন মাহবুব তালুকদার। ‘আমার বার্তা’ শিরোনামে দেয়া লিখিত বার্তায় মাহবুব তালুকদার সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিজের ভাবনাগুলো তুলে ধরেন। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ক্রমবর্ধমান সহিংসতা ও সন্ত্রাসের ঘটনায় আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। নির্বাচন ও সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর একটি সহিংসতামুক্ত পরিবেশে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন না করতে পারলে এ স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে। আমরা তা হতে দিতে পারি না। মাহবুব তালুকদার চারটি পয়েন্ট নিয়ে কথা বলেন। সেগুলো নিচে তুলে ধরা হল-

এক. নির্বাচন কেবল অংশগ্রহণমূলক হলে হয় না। নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও আইনানুগ হতে হয়। এ ছাড়া নির্বাচন গ্রহণযোগ্য ও বিশ্বাসযোগ্য না হলে বিশ্বসভায় আত্মমর্যাদাশীল জাতি হিসেবে আমরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারব না। প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করে আমরা কলঙ্কিত হতে চাই না। নির্বাচনে যিনি বা যারাই জয়লাভ করুন, দেশের মানুষ যেন পরাজিত না হয়।

দুই. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বলছি-অতিউৎসাহী হয়ে কোনো অনভিপ্রেত আচরণ করবেন না। আপনারা নির্বাচনের সবচেয়ে বড় সহায়ক শক্তি। প্রত্যেকের প্রতি সমআচরণ ও নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন আপনাদের কর্তব্য। নির্বাচনে পক্ষপাতমূলক আচরণ থেকে বিরত থাকুন। নিজেদের পোশাকের মর্যাদা ও পবিত্রতা রক্ষা করুন।

তিন. রিটার্নিং অফিসারসহ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদের বলছি-জাতির ক্রান্তিকালে আপনারা এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করছেন। বিবেক সমুন্নত রেখে অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী না হয়ে সাহসিকতার সঙ্গে আইন অনুযায়ী নিজেদের দায়িত্ব পালন করুন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণে আপনাদের অবদান জাতি কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করবে। কোনো কলুষিত নির্বাচনের দায় জাতি বহন করতে পারে না।

চার. ভোটারদের বলতে চাই-নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে আসুন। আপনার ইচ্ছানুযায়ী প্রার্থীকে ভোট দিন। ভয়ভীতি বা প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করবেন না। আপনার একটি ভোট গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ। মনে রাখবেন-এবারের নির্বাচন আমাদের আত্মসম্মান সমুন্নত রাখার নির্বাচন। এবারের নির্বাচন আগামী প্রজন্ম ও আপনার সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণের নির্বাচন।

জানা গেছে, অন্য নির্বাচন কমিশনারদের সঙ্গে মাহবুব তালুকদারের বিভিন্ন বিষয়ে মতদ্বৈততা রয়েছে। এসব কারণে এর আগে তিনি দুবার নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে ইসির সভা বয়কট করেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা নিয়েও তিনি ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি খালেদা জিয়ার প্রার্থিতা বাতিলের পক্ষে ছিলেন না। এ ছাড়া একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের বিপক্ষে মাহবুব তালুকদার জোরালো অবস্থান নেন।