এবিএনএ : স্বাভাবিক, সাধারণ দিনটা সেদিন কীভাবে বদলে গিয়েছিল ভাবে নীলা (ছদ্মনাম)। বাড়িতে ঢুকেই নীলা বুঝতে পারে ভয়ানক কিছু ঘটে গেছে। বসার ঘরে স্বামী ও কাছের কয়েকজন বন্ধুকে দেখল থমথমে মুখে বসে থাকতে। বৈশাখী ঝড় নয় যেন ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস। নীলা সোফায় বসতেই তার কি-বোর্ডে নিজের হাতে টাইপ করা অক্ষরগুলো অচেনা লাগতে লাগল। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, এগুলো সে তার বন্ধু রাসেলকে লেখেনি। সে তো লিখেছেই এগুলো। কখনো মেসেঞ্জারে, কখনো ভাইবারে কখনো ফেসবুকের ইনবক্সে। আপত্তিকর কিছু নেই, কিন্তু একাকিত্ব-হাহাকার ছিল শব্দমালায়। ‘আজ শিল্পকলায় নাটক দেখতে যেতে ইচ্ছে করছে, যাবে তুমি আমার সঙ্গে? সৈকত এসব নাটক দেখাটেখা পছন্দ করে না।’ নীলা এমন কথা লিখেছিল তার বন্ধু রাসেলকে। স্বামী সৈকত নাটক দেখা, গান শুনতে যাওয়া, প্রদর্শনী দেখতে যেতে পছন্দ করে না। কিন্তু নীলার ভালো লাগে। স্বামীকে প্রথম প্রথম অনেক অনুরোধ করত, স্বামীর ভালো লাগে না। কিন্তু মনের খোরাক মেটাতে রাসেলের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল। একদিন ফুচকা খেতে যাওয়া, বিকেলে রিকশায় চড়ে প্রদর্শনী দেখতে যাওয়া, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে চা খাওয়া—এসবই করেছে রাসেলের সঙ্গে, লিখেছেও তাই। সৈকত যখন জানতে পারে তার ভালো লাগেনি। সেও বুঝতে পারে নীলার ছোট ছোট অনেক পছন্দকে গুরুত্ব না দেওয়া, উদাসীনতা থেকে এ ঘটনা ঘটেছে।
দাম্পত্যে উত্তাপ নিরুত্তাপ সব সময় থাকে। একই ছন্দে পুরোটা সময় যায় না। তা-ও যদি আবার দুজন দুই রকম হন। দেখা গেল স্বামী ক্রিকেট খেলা দেখতে পছন্দ করেন, স্ত্রী পছন্দ করেন না। আবার কোনো উৎসবে পয়লা বৈশাখ, পয়লা ফাগুনসহ একটু ছুটি মিললে হয়তো স্ত্রীর বাইরে যেতে ইচ্ছে করে। স্বামীর মনে হয় বাসায় ঘুমাই। হই-হট্টগোলের মধ্যে যাওয়ার দরকার কী। এতে করে দুজনের মধ্যে কখনো কখনো দূরত্ব তৈরি হতে পারে। দুজনে দুজনার হয়ে ওঠেন না যেন।
একেক মানুষের স্বভাবজাত অভ্যাস একেক রকম। কেউ হইচই, বন্ধুবান্ধব নিয়ে আড্ডা, ছুটি মিললেই বেরিয়ে পড়া পছন্দ করেন। কারও কাছে মনে হয় বাইরে যাওয়ার দরকার কী। পরিবারের সঙ্গে বাড়িতেই বসে থাকি। নিজেদের মধ্যে থাকি।
দিনের পর দিন আরেকজনের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে পাত্তা না দিলে একসময় সঙ্গী ছাড়াই চলার অভ্যাস করবে। সেটিও সঙ্গী হিসেবে আপনার ভালো লাগবে না। রবীন্দ্রনাথের বড় গল্প ‘নষ্টনীড়’-এর নায়িকা চারুলতার কথাই ধরুন। সাহিত্য পছন্দ করত চারু। তার স্বামী ভূপতির তাকে সময় না দেওয়া, তার সাহিত্যচর্চার প্রতি আগ্রহী না হওয়ায় হয়তো অমলের প্রতি একধরনের দুর্বলতা তৈরি হয়েছিল চারুর মনে।
মনোবিদেরাও মনে করেন মানুষ আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতে পছন্দ করেন। সবকিছু সবার ভালো লাগবে, তা নয়। সঙ্গীকে যেহেতু ভালোবাসেন ফলে তাঁর আগ্রহের প্রতি কিছুটা আগ্রহী হলে ক্ষতি কী। এতে সঙ্গী নিজেকে অবহেলিত-বঞ্চিত মনে করবেন না। একাকিত্বের হাহাকার মনে আসবে না।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক তাজুল ইসলামের মত হলো, স্বামী বা স্ত্রী কেউ যদি আরেকজনের পছন্দ-অপছন্দকে গুরুত্ব না দেন, উচ্ছ্বাস প্রকাশ না করেন, তাহলে সমস্যা হবেই। একজন প্রাণবন্ত, আরেক চুপচাপ হলে এমনটা হতেই পারে। একদিন না হয় প্রাণবন্ত স্বামীর সঙ্গে একটু মাঠে গিয়ে ক্রিকেট খেলা দেখতে গেলেন। আবার ফুল কিনে দিলে হয়তো টাকা নষ্ট বলে বিরক্তি না দেখিয়ে খুশিমনে নিজেই গ্রহণ করলেন উপহার। এসবে তো কোনো ক্ষতি নেই।
আর যদি সমস্যা সৃষ্টি হয় তাহলে তা নিজেদের মধ্যে বা নিজের মধ্যে আটকে রাখা যাবে না। পরস্পরের সঙ্গে কথা বলুন পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে। কিছু বিষয়ে মতৈক্যে আসতে হবে। আগ্রহের জায়গা একই না হলেও শ্রদ্ধা থাকলে কোনো সমস্যা হয় না।
সঙ্গী ব্যস্ত থাকলে যা করতে পারেন
* গতানুগতিক কাজের বাইরে আরও কাজ করুন।
* যদি অতিরিক্ত উদ্বেগ, চাপে থাকেন ভালো ঘুম দিন, মেডিটেশন করুন, ইয়োগা করুন।
* জীবনের ও চারপাশের সব দিকে নজর রাখুন। চারপাশে প্রতিদিন সুখী হওয়ার, মুগ্ধ হওয়ার অনেক কিছু আছে।
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.