এ বি এন এ : রাত প্রায় ১২টা। কিছুক্ষণের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে মতিউর রহমান নিজামীর। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে পাঁচ জল্লাদ তখন রজনীগন্ধা সেলে। প্রস্তুত নিজামী। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জল্লাদদের নিজেই ‘চলেন’ বলে ধীর পায়ে হেঁটে যান ফাঁসির মঞ্চে।
দণ্ড কার্যকরের আগ পর্যন্ত রজনীগন্ধায় ছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মতিউর রহমান নিজামী। তাকে ফাঁসির মঞ্চে নিতে বেগ পেতে হয়নি জল্লাদদের। কারা সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। নিজামীর পরিবারের সদস্যরা তার সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য ৭টা ৫৩ মিনিটে কারাগারে প্রবেশ করেন। আইনানুগ বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষ করে সাড়ে ৮টায় তারা কথা বলার সুযোগ পান।
প্রায় চল্লিশ মিনিট নিজামীর সঙ্গে কথা বলেন স্বজনরা। স্বজনরা যখন কারাগারে প্রবেশ করেন তখন নামাজ পড়ছিলেন নিজামী। নামাজ শেষ করে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন। আলিঙ্গন করেন পরিবারের পুরুষ সদস্যদের সঙ্গে। তাদের সবার মাথায় হাত বুলিয়ে দেন।
শিশুদের কোলে নিয়ে আদর করেন। মেয়ে খাদিজা তখন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি অনেকটা শব্দ করে কান্না জুড়ে দেন। তখন নিজামী তাদের সান্তনা দিয়ে বলেছেন, তোমরা শক্ত হও। আমি বিচলিত নই। আমার জন্য দোয়া করো।
কারাসূত্র জানায়, ফাঁসির আগে কারাগারের খাবার তালিকা অনুসারে ওইদিনের খাবার ছিল মাছ, সবজি, ডাল। কিন্তু তা খাননি নিজামী। স্বজনরা সঙ্গে করে দুধ এনেছিলেন। স্ত্রী শামসুন্নাহার নিজামীর হাতে দেয়া এক গ্লাস দুধ পান করেন। তারপর আর কিছুই খাননি সাবেক এই মন্ত্রী। ৯টা ১০মিনিটে কথা শেষ করে সাড়ে ৯টায় কারাগার থেকে বের হন স্বজনরা। তারপরেই শুরু হয় দণ্ড কার্যকরের চূড়ান্ত প্রস্তুতি। গোসল করার জন্য কারারক্ষীরা নিজামীকে নিয়ে যান নির্ধারিত স্থানে। নিজেই গোসল করেন। এরপর ওযু করেন। নামাজ পড়ার সুযোগ পান তিনি। কারাক্ষীরা খাবারের কথা বললেও খাবার খাননি। এরমধ্যেই রজনীগন্ধা সেলে ঢোকেন কারা মসজিদের ইমাম মনির হোসেন।
মনির হোসেন তাকে বলেন, আমি আপনাকে তওবা পড়াতে এসেছি। তখনও বিড়বিড় করে কালেমা পড়ছিলেন নিজামী। মনির হোসেনের কথার জবাবে নিজামী তাকে বলেন, আমি নিজেই তওবা পড়ে নিচ্ছি। তওবা পড়া শেষে মনির হোসেন যখন বের হন সময় তখন প্রায় পৌনে ১২টা। জল্লাদ তানভীর হাসান রাজুর নেতৃত্বে পাঁচ জল্লাদ ছুটে যান রজনীগন্ধা সেলে।
জল্লাদ রাজু নিজামীকে জানান, আমরা আপনাকে যমটুপি পরাতে এসেছি। মুহূর্তের মধ্যেই বললেন, আমি প্রস্তুত। তখন তাকে যমটুপি পরানো হয়। দুই হাতে পরানো হয় হ্যান্ডকাপ। তাকে ঘিরে দাঁড়ানো জল্লাদদের উদ্দেশে নিজামী বলেন, চলেন।
প্রত্যক্ষদর্শী সরকারি একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, কারাবন্দিদের নির্দিষ্ট পোশাক ও যমটুপি পরানো অবস্থায় ধীর-স্থীরভাবে হাঁটছিলেন নিজামী। তার দুই হাত ধরে ছিলেন দুই জল্লাদ। সঙ্গে ছিলেন আরও তিনজন। নিজামী তখন শব্দ করে কালেমা পড়ছিলেন। রজনীগন্ধা সেল থেকে ফাঁসির মঞ্চ মাত্র ১০-১২ গজ দূরে। ফাঁসির মঞ্চে তোলা হয় নিজামীকে। নিজামীর যমটুপির উপর দিয়ে ফাঁসির ম্যানিলা রশি পরিয়ে দেয় জল্লাদ আবুল। হাত-পা বেঁধে দেয়া হয় নিজামীর। ততক্ষণে লিভার টানার প্রস্তুতি হিসেবে ফাঁসিমঞ্চের হাতলের কাছে গিয়ে দাঁড়ায় জল্লাদ রাজু। সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবিরের চোখ তখন ঘড়ির দিকে। অন্যদের দৃষ্টি তার দিকে। তার এক হাতে রুমাল। রুমালটি মাটিতে ফেলতেই ফাঁসির রশির হাতলে টান দেন জল্লাদ রাজু। প্রায় আধা ঘণ্টা পরে নিজামীর লাশটি নামিয়ে আনা হয়। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করেন সিভিল সার্জন আবদুল মালেক মৃধা। তারপর রাত পৌনে ১টার দিকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহাঙ্গীর কবির জানান, রাত ১২টা ১০ মিনিটে মতিউর রহমান নিজামীর দণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.