এবিএনএ : খালেদা জিয়া তার ‘এতিম’ দুই ছেলের জন্য বিদেশ থেকে আসা দুই কোটি ১০ লাখ টাকা রাখার কথা বললেও পারতেন বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ইতালি সফরে গিয়ে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রোমে গ্র্যান্ড হোটেলে পারকো দেই প্রিনচিপিতে আওয়ামী লীগের দেয়া এক সংবর্ধনায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। সংবর্ধনায় প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় নিয়ে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলার রায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ এসেছে।
রায়ের দিন বরিশালে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী খালেদা পরিবারকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, লজ্জা থাকলে তারা আর জনগণের অর্থ লুট করবে না। তবে এই মামলার রায় নিয়ে এর বাইরে প্রধানমন্ত্রী প্রথম বিস্তারিত আলোচনা করলের ইতালিতে গিয়ে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি ইতালির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন শেখ হাসিনা। রবিবার দেশটিতে পৌছেন। দুই দিন পর আওয়ামী লীগের সংবর্ধনায় যোগ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি খালেদা জিয়া বলতো আমার দুই ছেলে এতিম, তার জন্য রেখেছি। তাও একটা যুক্তি ছিল। সেটাও উনি করেননি।’ দুই কোটি টাকার দুর্নীতির জন্য খালেদা জিয়ার এই শাস্তির কী দরকার ছিল- রায়ের সমালোচনাকারীদের এমন বক্তব্য জেনেছেন প্রধানমন্ত্রীও। তিনি জবাবে বলেন, ‘তখন দুই কোটি টাকায় ধানমণ্ডিতে চারটি ফ্ল্যাট কেনা যেত।...টাকার মায়া ছাড়তে পারেনি। নিজের কাছে কুক্ষিগত করতে গিয়ে ধরা খেয়েছে।’
‘আমার প্রশ্ন, আজকে যারা বিএনপি দরদি, আঁতেলরাও আছে তারা বলে দুই কোটি টাকার জন্য কেন এত মামলা। তাহলে আমার এখানে একটা প্রশ্ন আছে, দুর্নীতির করার জন্য কি একটা সিলিং থাকবে যে কত কোটি টাকা পর্যন্ত দুর্নীতি করা জায়েজ। তারা কি সেটা বলতে চায়?’। ‘বিএনপি তাহলে একটা দাবি করুক যে এত কোটি পর্যন্ত তারা দুর্নীতি করতে পারবে। সেটা নিয়ে একটা রিট করুক।’ বিদেশ থেকে আসা এতিমের টাকা দেশে কোন এতিম পেয়েছে, সে প্রশ্নও রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
এই মামলা বা রায়ে সরকারের কোনো ভূমিকা ছিল না জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে মামলায় খালেদা জিয়ার শাস্তি হয়েছে সে মামলা দিয়েছেন তার ‘প্রিয় ব্যক্তিত্ব’ ফখরুদ্দীন, মইন উদ্দিন, ইয়াজউদ্দীন। এ মামলা আওয়ামী লীগ দেয়নি। এই মামলায় সরকার করলে তা ১০ বছর চলতেই দিতেন না বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘২০০৮ এ যখন ক্ষমতায় আসলাম, তখনই তো করতে (বিচার) পারতাম।’ ‘আমাদের বিচার বিভাগ স্বাধীন। এখানে আমাকে গালি দেয়া বা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার কী যুক্তি থাকতে পারে আমরাতো সেটা বুঝি না।’
দুর্নীতিবাজদের বিচার চালিয়ে যাওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতি যারা করবে, সন্ত্রাস যারা করবে, জঙ্গিবাদের সাথে যারা জড়িত, তাদের বিচার হতেই হবে।’ খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমানের ঘুষের টাকা সিঙ্গাপুর থেকে ফিরিয়ে আনার কতাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘খালেদা জিয়ার দুই ছেলে অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত। যাদের টাকা আমরা ফেরত এনেছিলাম।’ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার কালোটাকা সাদা করার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) প্রধানমন্ত্রী হয়ে কালো টাকা সাদা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী যেমন করেছেন, তার দুই ছেলে কালো টাকা সাদা করেছেন। কোথা থেকে আসলো টাকা?’। জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তার কথিত ‘ভাঙা স্যুটকেস ও ছেড়া গেঞ্জি’ পরে জাদুর বাক্স হয়ে গেছে কীভাবে সে প্রশ্নও রাখেন তিনি। বলেন, ‘সেখান থেকে কোকো ১, ২, ৩, ৪ লঞ্চ বের হচ্ছে। সেখান থেকে ইন্ডাস্ট্রি বের হচ্ছে। সেখান থেকে নানান ধরনের সম্পদের পাহাড় গড়ছে দেশে-বিদেশে এবং মানি লন্ডারিং করে যাচ্ছে।... আর ছেড়া গেঞ্জির ফুটো দিয়ে ফ্রেঞ্চ শিপন বের হচ্ছে।’
বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে নিজের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলার কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, ‘প্রত্যেকটা মামলা তদন্ত হয়েছিল এবং সেই মামলায় কিছু পায় নাই।’ পদ্মাসেতুতে দুর্নীতি চেষ্টার অভিযোগ নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। বলেন, ‘কানাডার ফেডারেল কোর্ট ঘোষণাই দিয়েছে যে, বিশ্ব ব্যাংকের এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।’ নির্বাচন ঠেকাতে ২০১৩ ও ২০১৪ সালে এবং ২০১৫ সালে সরকার পতনের আন্দোলনের নামে জ্বালাও পোড়াওয়েরও সমালোচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। আন্দোলনে পাঁচশ মানুষের মৃত্যু, পেট্রল বোমায় তিন হাজার মানুষের ঝলসে যাওয়া, পুলিশ, বিজিবি ও সেনা-সদস্যদের হত্যার বিষয়টিও তুলে ধরেন তিনি। এছাড়া ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর জঙ্গি তৎপরতা, উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থমকে যাওয়ার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। বলেন, বিএনপির অপকর্মের কারণেই ২০০৭ সালে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়েছিল। ইতালি আওয়ামী লীগের সভাপতি ইদ্রিস ফারাজির সভাপতিত্বে এবং সাধারন সম্পাদক হাসান ইকবালের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, ইতালিতে বাংলাদেশের রাষ্টদূত আব্দুস সোবহান শিকদার, সর্ব ইউরোপিয়ান আওয়ামী লীগের সভাপতি শ্রী অনিল দাশগুপ্ত, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামিম হক প্রমুখ।
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.