প্রিন্ট এর তারিখঃ জুন ২২, ২০২৫, ৩:১৪ এ.এম || প্রকাশের তারিখঃ সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৬, ৭:২১ পি.এম

এ বি এন এ : ঘাটে ট্রলার নোঙর করার সঙ্গে সঙ্গে ১০-১২ জন লোক দ্রুত গিয়ে মাছ নামিয়ে ঘাটে নিয়ে আসে। ঘাটে ট্রলার ভিড়লেই দ্রুত মাছ খালাসের জন্য ব্যস্ত হয়ে ওঠে জেলেরা। প্রতি ট্রলারের জেলেরা যেন মাছ খালাসের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। শুক্রবার দুপুর ১টার দিকে এই দৃশ্য দেখা যায় কক্সবাজার ফিশারি ঘাটে।
কেন তাড়াহুড়ো করে মাছ নামানো হচ্ছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফিশারি ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম জানান, যত দ্রুত মাছ খালাস করা যাবে তত বেশি জেলেদের লাভ। কারণ জেলেরা মাছ খালাসের পরপরই দ্রুত সাগরে নেমে পড়ে মাছ ধরতে।
সিরাজ নামে এক মাঝি বলেন, ভাই, কথা বলার সময় নেই। ট্রলার খালি করে তাড়াতাড়ি সাগরে নামতে হবে। আর নামতে পারলেই ট্রলার ভর্তি মাছ পাওয়া যাচ্ছে। এখন গভীর সাগরে যেতে হচ্ছেনা, মোহনার কাছাকাছি চ্যানেলে পাওয়া যাচ্ছে ভালো মাছ। জালে আটকা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মাছ। ভাই এমন সুযোগ বার বার পাওয়া যায়না। আজ পেলে, কাল নাও পেতে পারি। এমন কথা বলে তিনি দ্রুত কাজে নেমে পড়েন।
কক্সবাজার উপকূলের সাগরে গিয়েও মাছের দেখা না পাওয়ায় এক মাস আগেও উপকূলের জেলেদের মাঝে দীর্ঘশ্বাস ছিল। এখন চিত্র পাল্টে গেছে। জেলেদের জালে ইলিশসহ অনেক মাছ ধরা পড়ছে। ট্রলার ভর্তি ইলিশ মাছ খালাসের পরপরই আবারো জেলারা নেমে পড়ছে সাগরে। কারণ মোহনার কাছেই ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ মাছ। এতে জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীদের মাঝে সুদিন ফিরে এসেছে। তবে বাজারে ইলিশের ক্রেতা কম হলেও কোনো অভিযোগ নেই জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীদের।
কক্সবাজারের ফিশারি ঘাটের মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, গত ১৯ ও ২০ সেপ্টেম্বর এই মৌসমের প্রথম ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে। কিন্তু গত দুইদিন তেমন ইলিশ ধরা পড়েনি। আবার বৃহস্পতিবার ভালোই ইলিশ জালে লাগে। স্থানীয় বাজারে ইলিশের ক্রেতা কম থাকলেও মাছ নষ্ট হচ্ছে না। কারণ প্রতিদিন প্রচুর মাছ দেশের বিভিন্ন শহরে পাঠানো হচ্ছে। সেখানে ভালো দামও পাওয়া যাচ্ছে। ফলে স্বস্তিতেই আছে জেলেরা।
বৃহস্পতিবার কক্সবাজার ফিশারিঘাটে গিয়ে দেখা গেল, দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইলিশ মাছ পাঠানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন আড়ৎদাররা। একইসঙ্গে সাগরে যাওয়ার জন্য বরফের অপেক্ষায় রয়েছে বেশ কয়েকটি মাছ ধরা নৌকা।
স্থানীয় মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, এক সপ্তাহ আগেও বড় সাইজের প্রতি কেজি ইলিশ এক হাজার টাকা ধরে এবং ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৬০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। শুক্রবার কক্সবাজারে বড় সাইজের ইলিশ কেজি প্রতি সাড়ে ৪শ টাকা থেকে সাড়ে ৫’শ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়েছে। আর ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হয় ২৫০-৩৫০ টাকায়।
জানা যায়, কক্সবাজার নুনিয়ারছড়ার ফিশারিঘাটে এখন চলছে ইলিশ উৎসব। প্রতিদিন ঘাটেই উঠছে টনে টনে ইলিশ। বিক্রি হচ্ছে কম দামে। কিন্তু স্থানীয় বাজারে ইলিশের ক্রেতা কম হওয়ায় বরফ দিয়ে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রধান শহরে পাঠানো হচ্ছে ইলিশ।
কক্সবাজার মৎস্য আড়তে ফিশারিঘাটের এক আড়তদার জানান, কক্সবাজারের সাধারণ ক্রেতার তুলনায় অভিজাত হোটেলগুলো বেশি পরিমাণে ইলিশ কিনে। তবে মাছ বেশি হওয়ায় স্থানীয় বাজারে ইলিশের ক্রেতা অনেক কম। তা সত্ত্বেও জেলে এবং মাছ ব্যবসায়ীদের মধ্যে কোনো আক্ষেপ নেই। কারণ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ইলিশ পাঠানো হচ্ছে। ভালো দামও পাওয়া যাচ্ছে।
ফিশিং বোটের মালিক মোজাহার মিয়া জানান, ভাদ্র-আশ্বিনকে বঙ্গোপসাগরের ভরা ইলিশের মৌসুম ধরা হয়। কিন্তু প্রাকৃতিক দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া, জলদস্যু আতঙ্কের কারণে সাগরে মাছ ধরা ব্যাহত হয়। ফলে সংকটে পড়েছিল জেলেরা। কিন্তু গত কয়েকদিনে আতঙ্ক উপেক্ষা করে সাগরে গেছে জেলেরা। আর জালে ধরা পড়ছে ইলিশ। ফলে বাজারে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে।
ফিশারিঘাটে খুচরা মাছ কিনতে আসা সুজন জানান,আমি সাড়ে ৩ কেজি ওজনের বড় ৫টি বড় ইলিশ কিনেছি মাত্র ৭০০ টাকায়। ইলিশের দাম এত কম হবে তা ভাবতেও পারিনি।
কক্সবাজার ফিশিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক বলেন, জেলেদের জালে বিপুল পরিমাণ ইলিশ মাছ ধরা পড়ায় আমরা সন্তুষ্ট। বঙ্গোপসাগরে ইলিশের আগমনে জেলেরা খুশিতে আত্মহারা।
কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম জানান, ইতোমধ্যে কয়েক কোটি টাকার ইলিশ চট্টগ্রাম, ঢাকা, রাজশাহী, খুলনায় পাঠানো হয়েছে।
কক্সবাজার মৎস্য ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক জানে আলম পুতু জানান, জেলায় প্রায় ৫ হাজারের বেশি ফিশিং বোট রয়েছে। এর অধিকাংশই বঙ্গোপসাগরে গেছে। সাগরে যাওয়া বোটগুলো গত ৩ থেকে ৪ দিনে কূলে ভিড় করছে। প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে। মাসের ব্যবধানে ইলিশ ধরা পড়ার পরিমাণ প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে। আর বড় আকারের ইলিশও ধরা পড়ছে।
কক্সবাজার মৎস্য সংগ্রহ কেন্দ্রের মার্কেটিং অফিসার দেলোয়ার হোসেন জানান, শুধু ফিশারিঘাট থেকে গত দুই দিনে ৩৩ হাজার ৫৬০ কেজি ইলিশ বিভিন্ন শহরে পাঠানো হয়েছে। শুধু ফিশারিঘাট নয়, শহরের আরও ছয়টি ঘাট এবং টেকনাফ, মহেশখালী, উখিয়ার ইনানী ও কুতুবদিয়ার ঘাট থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ইলিশ পাঠানো হচ্ছে।
কক্সবাজারের মৎস্য কর্মকর্তা অমিতোষ সেন জানান, ভাদ্রের মাঝামাঝি থেকে কার্তিক মাসের মাঝামাঝি সময়ে সবচেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ে। উত্তারঞ্চলে বন্যার পর থেকে নদীতেও ইলিশ ধরা পড়ছে। গত কয়েক বছরে মা ইলিশ ও জাটকা নিধন বিরোধী অভিযান কঠোর করার সুফল মিলছে।
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.