এবিএনএ : টানা অষ্টমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এদিকে অনেক গুঞ্জন, আলোচনা ও নাটকীয়তার পর সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তন এল। নতুন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ওবায়দুল কাদের। ঘোষিত আংশিক কেন্দ্রীয় কমিটিতে আরও কিছু পরিবর্তন এসেছে। সভাপতি নির্বাচিত হয়েই শেখ হাসিনা ঘোষণা করলেন, ২০১৯ সালে পরবর্তী জাতীয় সংসদের নির্বাচন হবে। এ জন্য এখন থেকেই মানুষের ঘরে ঘরে যেতে হবে।
ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন কাউন্সিলরদের জানান, এবারের সম্মেলনে কাউন্সিলর ৬ হাজার ৫৭০ জন। কাউন্সিলরদের মধ্য থেকে কাউকে সভাপতি পদে প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করার আহ্বান জানান তিনি। সঙ্গে সঙ্গে কাউন্সিলররা শেখ হাসিনার নাম ধরে স্লোগান দিতে থাকেন। সাজেদা চৌধুরী তখন সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু চলে গেছেন। তিনি তাঁর কন্যাকে রেখে গেছেন। তিনি আমাদের পথ দেখাচ্ছেন।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার তিনবার জানতে চান, আর কোনো প্রার্থী আছে কি? তখন সবাই ‘নাই নাই’ চিৎকার করতে থাকেন। সভাপতি পদে শেখ হাসিনাকে সমর্থন জানান গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন। এরপর কাউন্সিলরদের অনুমোদন চাইলে সবাই ‘হ্যাঁ’ বলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার সভাপতি পদে শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত ঘোষণা করে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রস্তাব আহ্বান করেন। এ সময় সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেন। এই প্রস্তাবে সমর্থন করেন জাহাঙ্গীর কবির নানক। আর কোনো প্রার্থী না থাকায় কাদেরকেই নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়।
এরপর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাউন্সিলরদের কাছে জানতে চান সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়ে গেছেন। বাকি কমিটির সদস্যদের নির্বাচনের দায়িত্ব সভাপতিকে দেবেন কি না। তখন কাউন্সিলররা সভাপতিকে দায়িত্ব দেন।
শেখ হাসিনা সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ পদে নেতাদের নাম ঘোষণা করেন।
যাঁরা এলেন, যাঁরা বাদ পড়লেন: সভাপতিমণ্ডলীতে যে ১৪ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে সাতজন আগের কমিটিতে ছিলেন। তাঁরা হলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্ল্যাহ, সাহারা খাতুন ও মোশাররফ হোসেন। নতুন যুক্ত হয়েছেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, রমেশ চন্দ্র সেন, আব্দুর রাজ্জাক, ফারুক খান, আবদুল মান্নান খান ও পীযূষ ভট্টাচার্য।
২০১৩ সালের নভেম্বরে ‘নির্বাচনকালীন সর্বদলীয়’ সরকার গঠনের সময় মহাজোট সরকারের মন্ত্রিসভা থেকে ৩০ জন বাদ পড়েন। তাঁদের মধ্যে আব্দুর রাজ্জাক, ফারুক খান ও আবদুল মান্নান খান ছিলেন। ২০১৪ সালে গঠিত নতুন সরকারে তাঁদের আর নেওয়া হয়নি। জায়গা পাননি আগের মন্ত্রী রমেশ সেনও।
মান্নান খান প্রতিমন্ত্রী থেকে বাদ পড়ার পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে পরাজিত হন। এরপর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনে কয়েকবার হাজিরা দিতে হয় তাঁকে। দীর্ঘদিন ধরেই মান্নান খান আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কিন্তু মন্ত্রিত্ব ও সাংসদ পদ হারানোর পর দপ্তরের দায়িত্বও অনানুষ্ঠানিকভাবে হারান তিনি। আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটে দপ্তর সম্পাদক হিসেবে মান্নান খানের পাশাপাশি আবদুস সোবহান গোলাপের নাম অন্তর্ভুক্ত হয়। কার্যত দপ্তর চালাতেন আবদুস সোবহান। অবশ্য এবারের সম্মেলনে শোকপ্রস্তাব পাঠ করার সুযোগ পান মান্নান খান।
আব্দুর রাজ্জাক খাদ্যমন্ত্রী থাকা অবস্থায় খাদ্য বিভাগে নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তিনি সমালোচিত হন। আর ফারুক খান বাণিজ্যমন্ত্রী থাকাকালে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে সমালোচনায় পড়েছিলেন।
আর পীযূষ ভট্টাচার্য যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে সাংসদ হন। রাজনৈতিকভাবে এতটা পরিচিত নন। তিনি সভাপতিমণ্ডলীতে স্থান পাওয়ায় দলের নেতা ও কাউন্সিলররাও কিছুটা বিস্মিত। তাঁর ভাই স্বপন ভট্টাচার্য যশোর-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন।
দিনাজপুরের সাবেক সাংসদ সতীশ চন্দ্র রায় বয়সের কারণে বাদ পড়েছেন সভাপতিমণ্ডলী থেকে। তাঁর বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ রয়েছে। নূহ-উল-আলম লেনিন বাদ পড়তে পারেন এমন একটা গুঞ্জন ছিল। কিন্তু কেন বাদ পড়লেন, তা নেতা-কর্মীদের কাছে পরিষ্কার নয়। আবদুল মান্নান খানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগের পরও তাঁকে পদোন্নতি দেওয়ার ফলে লেনিনের বাদ পড়াটা দলে আলোচিত। দলের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নূহ-উল-আলম লেনিনকে গণজাগরণ মঞ্চের পেছনের কুশীলব মনে করতেন। এ জন্য দলীয় ফোরামে তাঁকে পরোক্ষভাবে সমালোচনাও করেন কেউ কেউ। তাঁর বাদ পড়ার পেছনে এটা কারণ হতে পারে।
সভাপতিমণ্ডলীর তিনটি পদ এখনো ফাঁকা আছে। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে নতুন এসেছেন সাবেক ছাত্রনেতা আবদুর রহমান। সদ্য সাবেক কমিটির তিন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, দীপু মনি ও জাহাঙ্গীর কবির নানক স্বপদেই আছেন। আগের কমিটির কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমানকেও স্বপদে বহাল রাখা হয়।
গুঞ্জন, বিপরীত আলোচনা, অতঃপর কাদেরের পদ পাওয়া: সাধারণ সম্পাদক পদে সৈয়দ আশরাফের স্থলে ওবায়দুল কাদের আসছেন—এই গুঞ্জনটা শুরু হয় গত বুধবার রাত থেকেই। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ওবায়দুল কাদের নিজে গণমাধ্যমকে জানান, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা তাঁকে সাধারণ সম্পাদকের পদের জন্য প্রস্তুতি নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আকাশে চাঁদ উঠলে সবাই দেখতে পাবে।’ এ কথা বলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক রসাত্মক আলোচনা শুরু হয়। শুক্রবার দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ গণমাধ্যমে বলেন, সকল জল্পনাকল্পনা ভুয়া প্রমাণিত হবে। এই দুই নেতা গত কয়েক দিন একাধিকবার দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাদা আলাদা সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেন বলে জানা যায়।
এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তুমুল আলোচনা শুরু হয়। কেউ সৈয়দ আশরাফকে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে যাওয়ার অনুরোধ করে স্ট্যাটাস দেন। অনেকে ওবায়দুল কাদেরকে সমর্থন করেন। আবার কেউ কেউ এই দুজনের বাইরে অন্য কাউকে সাধারণ সম্পাদক করার দাবি তোলেন।
এই আলোচনায় দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন কাউন্সিলররাও। একাধিক কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বললে দুই নেতার পক্ষে-বিপক্ষে বক্তব্য পাওয়া যায়। তবে শনিবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাউন্সিলররা সৈয়দ আশরাফের বক্তব্যের সময় করতালি দিয়ে তাঁকে স্বাগত জানান।
একাধিক কাউন্সিলর বলেন, আসলে দলীয় সভাপতি যাঁকে চাইবেন, তিনিই সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবেন। এ বিষয়ে তাঁদের মাথাব্যথার কিছু নেই। একাধিক কাউন্সিলর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কাউন্সিলরদের একটা অংশ ওবায়দুল কাদেরের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পক্ষে ছিল না। এ জন্য তাঁর নাম ঘোষণার সময় তাৎক্ষণিকভাবে অনেকে উচ্ছ্বাস দেখাননি। আবার বিরোধিতাও করেননি। অবশ্য কমিটি ঘোষণার পর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের বাইরে শেখ হাসিনার পাশাপাশি ওবায়দুল কাদেরের নামেও স্লোগান শোনা যায়।
আরও যেসব অনুমোদন: সম্মেলনে সংশোধিত ঘোষণাপত্র ও গঠনতন্ত্র অনুমোদন করা হয়। ঘোষণাপত্র উপকমিটির আহ্বায়ক শেখ ফজলুল করিম সেলিম কিছু পরিবর্তন উল্লেখ করে ৪০ পৃষ্ঠার ঘোষণাপত্র উপস্থাপন করেন। একইভাবে গঠনতন্ত্র উপপরিষদের আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক পরিবর্তিত গঠনতন্ত্র অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করেন। দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা প্রয়োজনীয় সংশোধনের সুযোগ রেখে অনুমোদনের আহ্বান করলে কাউন্সিলররা তা পাস করেন। কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান ১২ কোটি ৫৬ লাখ টাকার দলীয় বাজেট উপস্থাপন করলে তা পাস হয়। এরপর দলীয় প্রধান বলেন, আগের ঘোষণাপত্রের অনেক কিছুই বাস্তবায়ন হয়ে গেছে। এ জন্য নতুন করে কিছু লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের আয়-ব্যয়ের হিসাব খুব স্বচ্ছ। প্রতিবছর নিরীক্ষা করা হয়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য গঠিত সংসদীয় বোর্ড এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রার্থী বাছাই বোর্ড কাউন্সিলররা অনুমোদন করেন। সংসদীয় বোর্ডের সদস্যসংখ্যা ১১। আর স্থানীয় সরকার বোর্ডের সদস্য ১৮ জন। এই দুই বোর্ডেই দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ছাড়া জ্যেষ্ঠ নেতারা রয়েছেন।
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.