এ বি এন এ : রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ‘জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ’এর (জেএমবি) চার নারী সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। তাদের মধ্যে তিনজনই মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষার্থী। আরেকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের ইন্টার্ন (শিক্ষানবিশ) চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
গতকাল সোমবার রাতে গাজীপুরের সাইনবোর্ড, মগবাজার ও মিরপুর-১ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (কমান্ডিং অফিসার-সিও) খন্দকার লুৎফুল কবির। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- আকলিমা রহমান, ঐশী, মৌ ও মেঘনা।
লুৎফুল কবির বলেন, গত ২১ জুলাই গাজীপুর থেকে গ্রেফতার হওয়া জেএমবির দক্ষিণাঞ্চলের আমির মো. মাহমুদুল হাসানের (২৭) দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই নারীদের গ্রেফতার করা হয়েছে। নারী সদস্যরা সংগঠনের জন্য অর্থ সংগ্রহ করতো। ঢামেক হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ঐশী এই সেলের প্রধান। সে নারীদের প্রণোদনা দিয়ে দলে আনতো।
গ্রেফতারদের কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ, বেশ কয়েকটি মোবাইল, বিপুল পরিমাণ জিহাদি বই উদ্ধার এবং ল্যাপটের ভেতরে কিছু অডিও-ভিডিও ক্লিপস পাওয়া গেছে। নিম্নে তাদের বিস্তারিত পরিচয় তুলে ধরা হলো।
আকলিমা রহমান :
প্রথম জীবনে আকলিমা রেনেসা প্রি-ক্যাডেট হাই স্কুল, হাজী আহাম্মদ আলী পাবলিক স্কুল এবং উত্তরা হাই স্কুল থেকে ২০১০ সালে জিপিএ ৪.১৯ পেয়ে এসএসসি পাস করে। ২০১২ সালে হলি সাইন্ড কলেজ থেকে জিপিএ ৪.৭০ পেয়ে এইচএসসি পাস করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ২০১৩ সালে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মাসি বিভাগে অনার্সে ভর্তি হয়। বর্তমানে ৪র্থ বর্ষে অধ্যয়নরত।
র্যাব জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার পাশাপাশি আকলিমা আরবি অধ্যায়ন করতে বিভিন্ন স্থানে জড়ো হতো এবং সেখানে দাওয়াতের কার্যক্রম পরিচালনা করতো। বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন ধারায় জঙ্গিবাদে উৎসাহ প্রদান করতো। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতে গাজীপুর সাইনবোর্ডে তার নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জানতে পারে, আকলিমা গত দেড় বছর ধরে জিহাদি দলটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। মাহমুদুল হাসান ওরফে তানভীরের হাত ধরে বাইয়াত গ্রহণের পর তার সংশ্লিষ্টতা আরো বেড়ে যায়।
ঐশী :
ঐশী গত তিন বছর ধরে জঙ্গি কার্যক্রমের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। নারী দলটির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ ঐশী অথবা আকলিমা রহমান নিতো।
র্যাব জানায়, ঐশী ১৯৯৮ সালে ভিকারুন্নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পাস করেন। পরবর্তীতে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষে ঢামেকে ভর্তি হয়ে ২০১৬ সালের জানুয়ারি এমবিবিএস সম্পন্ন করে জুন থেকে ইন্টার্নিরত ছিলেন। তার বাবা ডা. বিশ্বাস আক্তার হোসেন (৫৮) ঢামেক হাসপাতালে চিকিৎসক এবং মা ডা. নাসিমা সুলতানা (৪৮) সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে গাইনি চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত।
মৌ ও মেঘনা :
র্যাব জানায়, মৌ বিগত সাত মাস ধরে জিহাদি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে, যা ঐশীর নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে মিলে যায়। মৌ ২০১৩ সালে মানারত ইউনিভার্সিটিতে ফার্মেসি বিষয়ে অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তি হয়। বর্তমানে অনার্স শেষ বর্ষ ৭ম সেমিস্টারে অধ্যয়নরত।
মেঘনা ঢাকা ক্যামব্রিয়ান কলেজ থেকে ২০১৩ সালে জিপিএ ৪.৭০ পেয়ে এইচএসসি পাস করে। এরপর ২০১৩ সালে মো. রোকনুজ্জামান তাকে পারিবারিকভাবে বিবাহ করে। বর্তমানে সে মানারাত ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিভাগে (অনার্স) ৪র্থ বর্ষে অধ্যয়নরত। তাকে সোমবার রাজধানীর মিরপুর-১, জনতা হাউজিং এর সামনে তার ভাড়াকৃত সাবলেট বাসা হতে গ্রেফতার করা হয়। তার মোবাইলেও অন্যদের মতো একই ধরনের জিহাদী বই, জিহাদী বক্তৃতা, ভিডিও ও জিহাদী নির্দেশনার সফট কপি পাওয়া যায়।