এবিএনএ : কাতারের রাজধানী দোহায় বিবদমান দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘ প্রতিক্ষিত ‘শান্তি আলোচনা’ শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই আফগান সরকার ও সশস্ত্র তালেবান যোদ্ধাদের মধ্যে আফগানিস্তানজুড়ে ব্যাপক সংঘর্ষও শুরু হয়েছে। ফলে ১৯ বছর ধরে চলা যুদ্ধ-সহিংসতা সমাপ্তির যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল তা পড়েছে চ্যালেঞ্জের মুখে।
গত ফেব্রুয়ারিত তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তি সইয়ের পরই দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা শুরু করা কথা থাকলেও এরপরপ তালেবানের দেশজুড়ে সহিংস হামলার কারণে দীর্ঘ কয়েক মাস সেই আলোচনা বিলম্বিত হয়। ফের অনেক জল্পনা-কল্পনার পর সেই আলোচনা শুরু হলেও আবার দেখা দিয়েছে সহিংস পরিস্থিতি। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী আফগান সরকারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ফাওয়াদ আমান বলেছেন, ‘আন্তঃআফগান আলোচনার শুরুর কারণে আমরা প্রত্যাশা করেছিলি তালেবান হয়তো তাদের হামলা কমিয়ে দেবে কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্যি যে তারা এখনও ব্যাপক মাত্রায় হামলা চালানো অব্যাহত রেখেছে।’
আফগান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওই মুখপাত্র জানান শুক্রবার শান্তি আলোচনা শুরুর আগে আগে সশস্ত্র তালেবান গোষ্ঠী আফগানিস্তানজুড়ে নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়াও বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওপর কমপক্ষে ১৮ টি হামলা চালিয়েছে। তালেবানের এসব হামলায় অনেকে হতাহত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এদিকে তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, আফগান বাহিনীর একটি গাড়িবহর কুন্দুজে একটি মহাসড়কে অভিযান চালাতে আসায় তালেবান যোদ্ধারা তাদের ওপর হামলা করেছে। আফগান নিরাপত্তা বাহিনীও বাঘলান এবং জওজান প্রদেশে হামলা চালিয়েছে বলেও জানান তিনি।
শনিবার উভয় পক্ষের প্রতিনিধি দল দোহায় পৌঁছালেও ওই দিন তারা মুখোমুখি বৈঠকে অংশ নেননি। কাতারের রাষ্ট্রায়ত্ত সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, তালেবান প্রতিনিধি দলের প্রধান মোল্লা আব্দুল গনি বারাদার এবং আফগান প্রতিনিধি দলের প্রধান আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহ শনিবার কাতারের আমিরের সঙ্গে দেখা করেছেন।
ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে কাবুল সরকার ও মার্কিন বাহিনীর মধ্যে চলমান এই যুদ্ধে হাজার হাজার বেসামরিক মানুষ ছাড়াও উভয় পক্ষের অসংখ্য যোদ্ধার প্রাণহানি হয়েছে। আফগান সরকারের ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বদানকারী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ বলছেন, ‘এই যুদ্ধ করে প্রকৃতপক্ষে কেউই জয়ী হয়নি।’ তবে তালেবান অবশ্য সাময়িক যুদ্ধবিরতির কথা না বললেও আফগানিস্তান রাষ্ট্র ইসলামী শরিয়াহ আইন অনুযায়ী পরিচালিত হওয়া উচিত বলে মত গোষ্ঠীটির। একটি একটি চুক্তিতে উপনীত হওয়ার জন্য উভয়পক্ষকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বিবদমান দুই পক্ষকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, ‘আপনাদের সফলতা গোটা বিশ্বের কাম্য।’
কাতারে ঐতিহাসিক আলোচনা শুরু হলো যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ১৯তম বর্ষপূর্তির ঠিক একদিন পর। ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সেই হামলায় ৯ হাজার মার্কিনি হতাহত হয়। হামলার পরপরই সন্ত্রাসবাদবিরোধী বৈশ্বিক যুদ্ধে নামে আফগানিস্তানসহ অনেকে দেশে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র।
আফগান সরকার এবং তালেবান এই প্রথম শান্তির জন্য মুখোমুখি আলোচনায় বসেছে। বৈঠকের প্রথম দিনে দোহায় উপস্থিত হয়ে কার্যকর একটি শান্তি চুক্তির করার এই সুযোগ লুফে নেয়ার জন্য দুই পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। তবে এতে অনেক বাধাবিপত্তি যে রয়েছে, তাও স্বীকার করেন তিনি।
মাইক পম্পেও বলেন, ‘আপনাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা বেছে নেয়ার কাজটি আপনাদেরই করতে হবে। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে সহিংসতার চক্র ভেঙ্গে ফেলাই আফগানদের অধিকার রক্ষা করার সর্বোত্তম উপায়।’ কর্মকর্তা, কূটনৈতিক আর বিশ্লেষকরা বলছেন, যদিও বিবদমান দুই পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসানো একট গুরুত্বপূর্ণ অর্জন তবে এর মানে এটা নয় যে শান্তির পথ তৈরির বিষয়টি খুবই সহজ। বিশেষ করে গত ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন-তালেবান চুক্তির পরও দিন দিন দেশটিতে যেভাবে সহিংসতার ঘটনা বাড়ছে তা শঙ্কার।