এ বি এন এ : অনেকেই দ্রুতগতির ইন্টারনেটের জন্য বাড়তি অর্থ ব্যয় করে ব্যয়বহুল সংযোগ নেন। কিন্তু আদতে ইন্টারনেট ব্যবহারে সেই গতির কোনো প্রভাব দেখতে পান না। এক্ষেত্রে কী করা উচিত? এক প্রতিবেদনে বিষয়টি জানিয়েছে ফক্স নিউজ। বিভিন্ন কারণে ইন্টারনেট ধীর হয়ে যেতে পারে। অনেক সময় সংযোগে যথেষ্ট গতি থাকার পরেও আপনি তা ব্যবহার করতে নাও পারেন। তাই সবার আগে বিষয়টিতে কোনো সমস্যা রয়েছে কি না, তা জেনে নিতে হবে। গতি পরীক্ষা করুন আপনার যদি সন্দেহ হয় যে, ইন্টারনেটে যে গতির জন্য অর্থ ব্যয় করছেন কিন্তু সেই গতি পাচ্ছেন না, তাহলে গতি পরীক্ষা করুন। অনেক সময় নানা কারণে ইন্টারনেটের গতি পাওয়া যায় না। এক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আগে আপনার পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে যে, আপনি সঠিক গতি পাচ্ছেন কি না। কয়েকটি ওয়েবসাইট থেকে আপনি ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষা করতে পারবেন। এগুলোর একটি হলো স্পিডটেস্ট ডট নেট (http://www.speedtest.net/)। এ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে আপনাকে Begin Test-এ ক্লিক করতে হবে। কয়েক সেকেন্ড পরে আপনি ইন্টারনেটের গতি জানতে পারবেন। তবে এখানে পরীক্ষা শুরু করার আগে আপনার উচিত হবে অন্য সব ইন্টারনেটের কাজ বন্ধ করে শুধু ওয়েবসাইটটি চালু রাখা। অন্যথায় প্রকৃত ফলাফল নাও পেতে পারেন। আপনার বাড়ির অন্য কোনো গ্যাজেটও ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারে তাই এ পরীক্ষার আগে সেসবও বন্ধ করুন। আপনার ওয়াইফাই সংযোগ যদি ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেয় তাহলে তাও নির্ণয় করতে পারবেন এ পরীক্ষার মাধ্যমে। এজন্য ওয়াইফাই সংযোগের মাধ্যমে পাওয়া ইন্টারনেট একবার ব্যবহার করুন। আরেকবার ওয়াইফাই ছাড়া সরাসরি কেবলে লাগিয়ে ইন্টারনেটের গতি পরীক্ষা করুন। উভয়ের মাঝে পার্থক্য রয়েছে কি না, লক্ষ্য করুন।
ফলাফল লক্ষ্য করুন
আপনার ইন্টারনেট সংযোগের গতি নির্ণয় করার পর সে গতির সঙ্গে আপনার ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডারের গতির তুলনা করুন। আপনি যদি তাদের দেওয়া গতি পান তাহলে বুঝতে হবে সংযোগে কোনো সমস্যা নেই। এর চেয়ে গতি পেতে হলে আপনার আরও দ্রুতগতির সংযোগ প্রয়োজন হবে। আর যদি ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানকারীর কাছ থেকে প্রয়োজনীয় গতি না পান তাহলে বুঝতে হবে সংযোগে সমস্যা রয়েছে।
গতি কম থাকলে করণীয়
সংযোগ প্রদানকারীর থেকে গতি কম পেলে
আপনার ইন্টারনেট সংযোগের গতিই যদি কম থাকে তাহলে ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানকারীর সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তাদের সংযোগে আপনি যে প্রকৃত গতি পাচ্ছেন না, তা জানিয়ে দিন। প্রয়োজনে তাদের সংযোগে সমস্যা থাকলে তা ঠিক করতে বলুন।
ওয়াইফাই গতি কম হলে
ওপরে দেওয়া পদ্ধতিতে পরীক্ষার মাধ্যমে আপনি যদি নিশ্চিত হন যে, আপনার বাড়িতে পর্যাপ্ত গতিতেই ইন্টারনেট আসছে কিন্তু ওয়াইফাই সংযোগের কারণে গতি কমে গেছে তাহলে সেজন্য ব্যবস্থা নিন। এক্ষেত্রে ওয়াইফাই সংযোগের গতি বাড়ানোর উপায়গুলো জেনে রাখুন।
রাউটার আপগ্রেড
পুরনো অনেক রাউটারই ধীরগতিতে ইন্টারনেট সরবরাহ করে। আর এ সীমাবদ্ধতা দূর করার জন্য প্রয়োজন দ্রুতগতির রাউটার। এক্ষেত্রে আপনার রাউটারের গতি দেখে নিন। এটি যদি আপনার ইন্টারনেটের লাইনের তুলনায় কম গতির হয় তাহলে রাউটার পরিবর্তন করার প্রয়োজন হতে পারে।
রাউটারের অবস্থান
আপনার ডিজিটাল ডিভাইসগুলোর সবচেয়ে কাছাকাছি স্থানে কোনো বাধা ছাড়া রাউটার রাখার চেষ্টা করুন। বাড়িতে বহু ভারি ফার্নিচার থাকলে সেগুলোর আড়ালে নয় বরং সেগুলোর উপরে রাউটার বসান। এতে বাধামুক্তভাবে রাউটার আপনার ডিভাইসগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবে। এছাড়া বাড়ির এক প্রান্তে না রেখে তা বাড়ির মাঝামাঝি স্থানে বসানোই যুক্তিসঙ্গত।
চ্যানেল বদলান
আপনার রাউটারের ফ্রিকোয়েন্সি অন্য যন্ত্রপাতির ফ্রিকোয়েন্সির সঙ্গে কনফ্লিক্ট করছে কি না, তা জেনে রাখুন। আপনার রাউটার যদি ২.৪ গিগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করে তাহলে তা কর্ডলেস ফোন, মাইক্রোওয়েভ, ব্লুটুথ, সিসিটিভি ইত্যাদির সঙ্গে কনফ্লিক্টের সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে ৫ গিগাহার্জ কিংবা ভিন্ন কোনো ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো।
বাধা এড়ান
রাউটারের সঙ্গে আপনার ডিভাইসের মাঝে দ্রুত যোগাযোগের পথে বহু জিনিসই বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এসব বাধার মধ্যে রয়েছে ধাতব দরজা, অ্যালুমিনিয়াম কাঠামো, ওয়াল ইনসুলেশন, পানির ট্যাংক বা অ্যাকুরিয়াম, আয়না, হ্যালোজেন লাইট, গ্লাস ও কংক্রিট। এ ধরনের বাধাগুলো যেখানে সবচেয়ে কম সেখানেই প্রয়োজনীয় যন্ত্র বা রাউটার স্থাপন করুন।
সফটওয়্যার আপডেট
রাউটার ও ইন্টারনেট সরবরাহের কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন সফটওয়্যার নিয়মিত আপগ্রেড হয়। একটু খেয়াল রেখে রাউটার ও মোবাইল ডিভাইস বা পিসির সফটওয়্যার আপডেট করে নিলে ইন্টারনেটের ভালো গতি পাওয়া যেতে পারে।
এক্সটেন্ডার
নেটওয়ার্ক বাড়ানোর জন্য এক্সটেন্ডার পাওয়া যায়। আপনার ওয়াইফাই রাউটার থেকে দূরে কোথাও ইন্টারনেট ব্যবহারের প্রয়োজন হলে এক্সটেন্ডার ব্যবহার করতে পারেন।
টিন ফয়েল ব্যবহার করুন
ওয়াইফাই রাউটারের অ্যান্টেনার বাইরে ডিশ অ্যান্টেনার মতো বা অন্য কোনো উপায়ে টিনের ফয়েল ব্যবহার করে সিগন্যাল বাড়ানো সম্ভব। অন্য উপায়গুলো কাজ না করলে এটি ব্যবহার করতে পারেন।
প্রতিবেশী ইন্টারনেট চুরি করলে
আপনার ইন্টারনেটের সংযোগ কোনো প্রতিবেশী ব্যবহার করলে এতে আপনার ইন্টারনেটের গতি কমে যেতে পারে। তাই প্রতিবেশীদের থেকে সাবধান। অবশ্য কয়েকজন প্রতিবেশী মিলে একটি গতিশীল ইন্টারনেট নিয়ে তা শেয়ার করে ব্যবহার করাও একটি ভালো বুদ্ধি।
নিরাপত্তা বাড়ান
ওয়াইফাই ইন্টারনেটের জন্য WEP বাদ দিয়ে কিছুটা নিরাপদ WPA/WPA2 ব্যবহার করুন। এটি ইন্টারনেট ব্যবহারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে। এছাড়া নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তনও প্রয়োজনীয়।
পাসওয়ার্ড গোপন রাখুন
ওয়াইফাই নেটওয়ার্কে আপনার নাম ও ডিভাইসের বিস্তারিত তথ্য দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। তার বদলে সাংকেতিক নাম ও অত্যন্ত গোপনীয় পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।