এবিএনএ: ২০৪১ সালে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের কাতারে যুক্ত হবে। সেই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য যে সৈনিকদের প্রয়োজন তারা এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের মাধ্যমে প্রস্তুত হচ্ছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের শিশুরাই সেই বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি এখন দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত। রবিবার দুপুরে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২১’ উদযাপন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
শিশুরা ডিজিটাল বাংলাদেশের পুরস্কার অর্জনে নিজের খুশির কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি যে চাই ২০৪১ সালের বাংলাদেশ উন্নত, সমৃদ্ধ হবে, সেটা কাদের দিয়ে হবে। আজকে এই পুরস্কার নেওয়াদের মধ্য থেকে। নতুন প্রজন্ম যে পুরস্কার পেল, তাদের যে মেধা বিকাশের সুযোগ পেল, তাতে আমার এখন আর কোনো দুশ্চিন্তা নেই। আমি আজকে থেকে বলতে পারি, আমাদের দেশটা প্রযুক্তি শিক্ষায়, জ্ঞানভিত্তিক যে সমাজ গড়তে চাই, সেটা করার পথে আমরা অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছি। ২০৪১ সালের উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলার সৈনিকরা প্রস্তুত হয়েছে। এটাই সবথেকে বড় কথা।’
তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ ঘরে বসেই তাদের কাজ করছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে যারা বিদেশে বসবাস করছে তাদের রেখে যাওয়া বাড়িঘর দেখতে পাচ্ছেন। কিছুদিন আগে একটা ঘটনা ঘটেছে, ধানমন্ডির একটা বাড়িতে চুরি হলো। বাড়ির মালিক লন্ডনে থাকেন। সেখানে বসে তিনি দেখলেন। তার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে ধানমন্ডি থানার ওসির কাছে পাঠিয়েছেন। আমাদের সিটি এসবি সেটা দেখে চোরকে ধরে ফেলেছে। এটাই হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশের শুভফলটা, যা প্রবাসীরাও পাচ্ছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যটা ছিল নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। ঘরে বসে ছেলেমেয়েরা তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ পাবে। সেটা দিয়ে নিজেদের যেমন আর্থিক সচ্ছলতা আনবে। সেই সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সৈনিক আমাদের তৈরি হচ্ছে। সেই জন্য আমাদের সজীব ওয়াজেদ জয়সহ আইসিটি মন্ত্রণালয়ের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’
সরকারের দেওয়া সুবিধা কোনো মধ্যস্বত্বভোগী ছাড়া সুবিধাবঞ্চিতদের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন ডিজিটাল সেবার কথা তুলে ধরেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘কেউ সরকারি সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে না। আমাদের দৃষ্টিপ্রতিবন্ধীদের জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের ১০৯টি পাঠ্যবইয়ের ডিজিটাল টকিং বুক তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে তারা নতুন সুযোগ পাচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রযুক্তির মাধ্যমে আমরা সবাইকে সেবা দিতে চেয়েছিলাম। সেটা দিতে পারছি। বাংলাদেশ সেই জায়গায় পৌঁছে গেছে। সিটি করপোরেশন থেকে শুরু করে গ্রামের তৃণমূল পর্যন্ত সেই সেবাটা পৌঁছে গেছে। আজকে বাংলাদেশে প্রায় শতভাগ বিদ্যুৎ আমরা মানুষকে দিয়ে দিয়েছি। ফলে আরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া ব্রডব্যান্ড পৌঁছে গেছে।’ দেশে ১৮ কোটি ১৩ লাখ সিম ব্যবহার হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ১৩ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহার হচ্ছে। ১৬ বা ১৭ কোটি মানুষের দেশে যদি ১৩ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয় তাহলে ধরে নিতে হবে প্রায় সবার ঘরে ঘরে ইন্টারনেট সার্ভিসটা আছে। সেই সুযোগটা সবাই পাচ্ছেন।
সরকারের আগামী দিনের লক্ষ্য সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন আমরা যেমন মনে করি গার্মেন্টস থেকে সবথেকে বেশি রপ্তানি আয় হয়। কিন্তু সেখানে একটা সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। সেটা হলো আমাদের ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদন ও রপ্তানি। সেখানে আমাদের মেধাবী সন্তানদের মেধা বিকাশের সুযোগ হবে। আমি মনে করি ডিজিটাল ডিভাইস রপ্তানি সব খাতকে ছাড়িয়ে যাবে। যদি এটা আমরা করতে পারি। তার লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে। এ রপ্তানি ২০২৫ সাল নাগাদ পাঁচ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করবে।’
দেশের প্রযুক্তি উন্নয়নের তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের অবদানের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, সে স্কুল জীবন থেকে কম্পিউটার শিখতো। ঢাকায় এসে আমাকেও শিখাতো। যখন হোস্টেল থেকে কম্পিউটারটা সঙ্গে করেই নিয়েই আসতো। সেই ম্যাকিন্টশ কম্পিউটারের মাধ্যমেই আমার হাতেখড়ি। তারই পরামর্শ ছিল আমাদের দেশের মানুষকে কম্পিউটার শিক্ষা দিতে হবে। এজন্য খরচ কমাতে হবে। ট্যাক্স কমাতে হবে। সবকিছু করতে হবে।
১৯৯৬ সালের সরকার গঠনের পরে সব ফাইল কম্পিউটারে টাইপ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনী শ্লোগান ছিল দেশ হবে ডিজিটাল বাংলাদেশ। এই ঘোষণাটা দেওয়া পরে অনেক কথা শুনতে হয়েছে। অনেক সমালোচনাও শুনতে হয়েছে। এটা ঠিক। কিন্তু বাংলাদেশকে উন্নত করবো। তার জন্য আমরা যদি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির না করি তাহলে কীভাবে এগিয়ে যাবো? তাই আমাদের রূপকল্প ২০২১ ঘোষণা দিয়েছিলাম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য রেখে কাজ করেছিলাম বলেই আজকে আমরা উন্নয়নটা করতে পেরেছি। কম্পিউটার শেখানোর জন্য আমরা গাড়িতে করে স্কুলে স্কুলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের শেখানোর ব্যবস্থা নিয়েছি। তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন নাগরিক সৃষ্টিই ছিল আমাদের লক্ষ্য। কারণ বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহারে বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে। এটা হতে পারে না। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ভবিষ্যতে এগিয়ে যেতে হবে। এজন্য নতুন প্রজন্মকে প্রস্তুতি নিতে হবে। আমি খুবই আনন্দিত। কারণ আজকে যখন পুরস্কারগুলো দিলাম। সেখানে প্রতিটি ক্ষেত্রেই উদ্যোগ আছে। দেশের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা তাদের উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে অনেক কিছু তৈরি করছে। যা বাংলাদেশের জনগণ সে সেবাটা পাবে এবং পাচ্ছে। তাদের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ হচ্ছে।
সরকারপ্রধান বলেন, ছোট ছোট শিশুদের মেধা ও মনন বিকশিত হওয়ার যে সুযোগ। সেটা ডিজিটাল বাংলাদেশ না করলে কখনোই সম্ভব হতো না। তাদের মেধাকে দেশের জন্য কাজেই লাগানোই ছিল সবথেকে বড় লক্ষ্য। আমি মনে করি সেটা হতে আমরা সবথেকে বেশি সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম।