জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও অবরোধ কর্মসূচি

এবিএনএ : হামলার প্রতিবাদে রোববার থেকে দেশের সব কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও অবরোধ কর্মসূচির পালনের ঘোষণা নিয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খান এ ঘোষণা দেন। কোটা বাতিল বলে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রায় তিন মাস পার হলেও প্রজ্ঞাপন জারির কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় নতুন করে আন্দোলনের প্রস্তুতির জন্য শনিবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলন ডাকে আন্দোলনকারীরা। তবে সংবাদ সম্মেলন শুরুর আগেই তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলার প্রতিবাদের নতুন কর্মসূচি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শনিবার বেলা ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। তবে তার আগেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেখানে অবস্থান নেয়। সংবাদ সম্মেলনের জন্য আন্দোলনকারীদের একটি দল কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে আসার পর ‘শিবির ধর’, ‘শিবির ধর’ বলে অতর্কিত হামলা চালানো হয়। নুরুল হক নূরকে ঘিরে ধরে মারধর করা হয়। এসময় ‘ওরে মেরে ফেল’, ‘কলিজা কাট’ ইত্যাদি উক্তি করে তাকে লাথি, ঘুষি, চড়-থাপ্পড় দিতে থাকে হামলাকারীরা। একপর্যায়ে নূর মাটিতে পড়ে গেলে শোয়া অবস্থায় তাকে লাথি মারতে থাকে তারা। এরপর লাইব্রেরির বাইরে টেনে নিয়ে এসে আবারও তাকে মারধর করা হয়। এসময় তার নাক-মুখ ফেটে রক্ত বের হতে দেখা যায়। পরে শিক্ষকরা তাকে উদ্ধার করে লাইব্রেরির ভেতরে নিয়ে যান। নুরুল হক নূরকে মারধরের পর তাকে প্রায় ৩০ মিনিট লাইব্রেরিতে রাখা হয়। পরে লাইব্রেরির পেছনের দরজা দিয়ে লাইব্রেরি কর্তৃপক্ষ নূরকে আহত অবস্থায় প্রক্টরিয়াল বডির গাড়িতে তুলে দেয়। তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আদিত্য নন্দী, মেহেদী হাসান রনি, সাকিব হাসান সুইম, ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক ইয়াজ আল রিয়াজ, উপ-মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষণা সম্পাদক আল মামুন, জিয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান লিমন, হাজী মুহম্মদ মুসহীন হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান সানি, বঙ্গবন্ধু হলের সভাপতি বরিকুল ইসলাম বাধন ও সাধারণ সম্পাদক আল আমিন রহমান প্রমুখের নেতৃত্বে হামলা করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, সংবাদ সম্মেলনের উদ্দেশ্যে সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে আমরা গ্রন্থাগারের সামনে আসি। আমরা দাঁড়ানোর কিছুক্ষণের মধ্যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এতে আমাদের অন্তত ছয়জন আহত হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। আহতদের মধ্যে যুগ্ম-আহবায়ক নূরের অবস্থা গুরুতর। হামলার জন্য ছাত্রলীগকে দায়ী করে আন্দোলনকারী সংগঠনের যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, বেলা ১১টার দিকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা আমাদের ওপর পিস্তল ও রামদা নিয়ে হামলা চালায়। আমাদের অগণিত কর্মী আহত হয়েছে। আমরা তাদের কাছে এটা প্রত্যাশা করিনি।

তবে বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ছাত্রলীগ কোনও হামলা চালায়নি। ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। আমরা শুনেছি আন্দোলনকারীদের দুই গ্রুপের মধ্যে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। নুরুল হক নূরসহ আহত ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) ও হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আহতরা হলেন নুরুল হক নূর (২৫), আবদুল্লাহ (২৩), আতাউল্লাহ (২৪), মাহফুজ (২৫), শাহেদ (২৫) ও হায়দার (২৩)। তাদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

শিক্ষক লাঞ্ছিত: মারধরের এক পর্যায়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সমানে গ্রন্থাগারিক তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক ড. এস এম জাভেদ আহমেদের পা জড়িয়ে ধরে বাঁচার চেষ্টা করেন নূর। এসময় জাবেদ আহমেদও হামলাকারীদের হাতে লাঞ্ছিত হন। এ প্রসঙ্গে জাভেদ আহমেদ বলেন, আমি নিজেকে শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দেওয়ার পরও তারা আমার ওপরও চড়াও হয়েছে। আমার হাতের তালু কেটে গেছে। মানুষ মানুষকে এভাবে মারতে পারে না। রাজনৈতিক পরিচয়ের বাইরেও তোমরা সবাই ছাত্র। সহপাঠী সহপাঠীর ওপর এভাবে হামলা করতে পারে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button