আমেরিকা

ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন অভিযান: এক আইনেই বদলে গেল যুক্তরাষ্ট্রের চিত্র

বহুমুখী কৌশল, নির্বাসন অভিযান ও ১৯ দেশ কালো তালিকাভুক্ত করে কঠোর অভিবাসন আইন প্রয়োগ

এবিএনএ: ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই অভিবাসন আইনকে কেন্দ্র করে একের পর এক কঠোর পদক্ষেপ বাস্তবায়ন শুরু করেছেন। গত জুলাইয়ে পাস হওয়া ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে অভিবাসন নীতিকে নতুন করে সাজিয়ে আরও কঠোর কাঠামোতে নিয়ে যান তিনি। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত অভিবাসীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে আইনি অনিশ্চয়তা, উদ্বেগ এবং আর্থিক সংকট।

আইনের নতুন সংশোধনীতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেরিত অর্থের ওপর ‘রেমিট্যান্স কর’ আরোপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা অভিবাসীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেছে। একই সঙ্গে আশ্রয়ের সব আবেদন সাময়িকভাবে স্থগিত রেখে ১৯টি দেশকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এসব দেশের নাগরিকদের গ্রিন কার্ড পর্যালোচনা এবং অভিবাসন প্রক্রিয়া আরও কঠিন করা হয়েছে। দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে আফগানিস্তান, ইরান, সোমালিয়া, সুদান, ইয়েমেন, লিবিয়া, ভেনেজুয়েলা, কিউবা, মিয়ানমারসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশ।

কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের (সিএফআর) প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ‘বৃহত্তম অভ্যন্তরীণ নির্বাসন অভিযান’ পরিচালনার লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ও অঙ্গরাজ্য পর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের অভিবাসন আইন প্রয়োগের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। আদালতের অনুমতি ছাড়াই অনথিভুক্ত অভিবাসীদের গ্রেপ্তার ও নির্বাসন কার্য সম্পাদন করা হচ্ছে।

আইসিইর (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) কার্যক্রম এখন কেবল অভিবাসন আইনেই সীমাবদ্ধ নয়; তারা সীমান্ত সুরক্ষা, কাস্টমস এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থায়ও সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি থেকে নভেম্বরের মধ্যে ৬৫ হাজারের বেশি অভিবাসীকে আইসিই গ্রেপ্তার বা নজরদারিতে রেখেছে। এমনকি বিচারকের ওয়ারেন্ট ছাড়াই গ্রেপ্তার অভিযান চলছে বলে জানিয়েছে ট্রানজ্যাকশনাল রেকর্ডস অ্যাক্সেস ক্লিয়ারিং হাউস।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই আক্রমণাত্মক কৌশলের সমালোচনা করেছেন মানবাধিকারকর্মী ও আইনজ্ঞরা। তাদের মতে, এটি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অতিরিক্ত ব্যবহার এবং অভিবাসীদের মৌলিক অধিকার হরণের শামিল। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেছেন, শতাব্দি প্রাচীন এলিয়েন এনিমিজ অ্যাক্ট ব্যবহার করে ট্রাম্প অভিবাসন নীতিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন।

এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় দুই লাখ ইউক্রেনীয় অভিবাসী এখন আইনি অনিশ্চয়তার মুখোমুখি। তাদের কাজের অনুমতি নবায়নে দেরি হওয়ায় অনেকেই চাকরি ও বসবাসের অধিকার হারিয়েছেন। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রযুক্তি কর্মী থেকে শুরু করে শিক্ষক, ডিজাইনার, শিক্ষার্থীরাও এখন অনিশ্চয়তায়।

মার্কিন-মেক্সিকো সীমান্তে এখন জরুরি অবস্থা কার্যকর। সান দিয়াগোসহ সীমান্তবর্তী এলাকায় আগে যে দৃশ্যগুলো দেখা যেত, ট্রাম্পের কঠোর নীতির পর তা এখন প্রায় অদৃশ্য। সীমান্ত পার হওয়ার ঝুঁকি কমলেও মানবিক সংকট বেড়েছে বহুগুণ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের নতুন অভিবাসন নীতি শুধু প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক ও মানবিক মূল্যবোধের একটি বড় পরীক্ষা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button