জাতীয়

তারেক-জুবাইদার বিরুদ্ধে বিচারিক আদালতের রায় নিয়ে প্রশ্ন তুলল হাইকোর্ট

সাক্ষ্যগ্রহণ ও রায় ঘোষণায় তাড়াহুড়ো, আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যত্যয়—দুই আসামিকে খালাস দিয়ে বিচারিক আদালতের রায় বাতিল ঘোষণা হাইকোর্টের

এবিএনএ:  দুর্নীতির মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তাঁর স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দেওয়া বিচারিক আদালতের রায় ‘নিরপেক্ষ হয়নি’—এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সম্প্রতি প্রকাশিত পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ থেকে শুরু করে রায় ঘোষণার প্রক্রিয়ায় আইনগত বেশ কিছু অসঙ্গতি ও ব্যত্যয় ঘটেছে, যা সুষ্ঠু বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

হাইকোর্টের বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের একক বেঞ্চ গত ২৮ মে রায় ঘোষণা করেন। সোমবার (১৪ জুলাই) ওই রায়ের ৫২ পৃষ্ঠার অনুলিপি প্রকাশিত হয়, যেখানে আদালত উল্লেখ করেন যে, মাত্র দুই মাস চার দিনে ৪২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ এবং আট দিনের মধ্যে রায় প্রদান বিচারিক স্বাভাবিকতা বহির্ভূত।

রায়ে স্পষ্টভাবে বলা হয়, ডা. জুবাইদা রহমানকে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে কোনো নোটিশ প্রদান করা হয়নি, যা দুদক আইনের ২৬(১) ধারা অনুযায়ী অবশ্য পালনীয় ছিল। এই ত্রুটির কারণে তাঁর বিরুদ্ধে দেয়া সাজা বাতিলযোগ্য বিবেচিত হয়েছে। একইসঙ্গে অভিযোগ গঠনের সময় ফৌজদারি কার্যবিধির ২২১ ধারাও যথাযথভাবে অনুসরণ করা হয়নি।

রায়ের গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণে বলা হয়, মামলার ৪২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪০ জনই শুধু জব্দ তালিকার সাক্ষী ছিলেন এবং কেউই জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের বিষয়ে তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো তথ্য দেননি।

আদালত আরও বলেন, মামলার তথ্য-প্রমাণ যথেষ্ট না হওয়ায় এবং বিচারিক ত্রুটির কারণে এমনকি আপিল না করেও তারেক রহমানের সাজা বাতিলযোগ্য হয়ে পড়ে। তাই তিনি দুই ধারায় মোট নয় বছরের সাজা থেকে খালাস পান।

এই রায়ে তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের পক্ষে থাকা আইনজীবীরা সন্তোষ প্রকাশ করেন। ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, “আমরা আদালতে বারবার বলেছি এই মামলার বিচার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। দ্রুত সাক্ষ্য ও সাজা দিয়ে প্রক্রিয়াকে বিকৃত করা হয়েছে।”

২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দুদক রাজধানীর কাফরুল থানায় এই মামলাটি দায়ের করে। মামলায় বলা হয়, তারেক রহমান, তাঁর স্ত্রী এবং শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু জ্ঞাত আয়ের বাইরে সম্পদ অর্জন করেছেন এবং তথ্য গোপন করেছেন। ২০২৩ সালের ২ আগস্ট এই মামলার রায়ে তাদের দণ্ড দেন বিচারিক আদালত।

দীর্ঘ প্রবাস শেষে ডা. জুবাইদা রহমান চলতি বছরের ৬ মে দেশে ফেরেন। এরপর আপিল দায়ের করলে হাইকোর্ট তাঁর জামিন মঞ্জুর করেন এবং জরিমানা স্থগিত করেন। রায় প্রকাশের মাধ্যমে এখন মামলাটি নতুন মোড় নিয়েছে, যা দেশের রাজনৈতিক ও আইনাঙ্গনের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button