অর্থ বাণিজ্য

অভূতপূর্ব দরপতনে ধ্বংসের মুখে পোলট্রি শিল্প: বাঁচবে কি প্রান্তিক খামারিরা?

ডিম, ব্রয়লার মুরগি ও এক দিনের বাচ্চার দামে বড় ধস; বিপাকে পড়েছে হাজারো ক্ষুদ্র খামারি ও হ্যাচারি ব্যবসা

এবিএনএ:  বাংলাদেশের পোলট্রি শিল্পে ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। ডিম, ব্রয়লার মুরগি এবং এক দিনের ব্রয়লার বাচ্চার মূল্য রেকর্ড পরিমাণে কমে যাওয়ায় হাজার হাজার খামারি ও হ্যাচারি মালিক নিঃস্ব হওয়ার পথে। ফলে দেশের অন্যতম প্রধান প্রোটিন উৎস আজ হুমকির মুখে।

উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন খামারে প্রতি ডিমের দাম নেমেছে ৭ টাকা ৫০ পয়সায়, আর ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১১০ টাকায়—যা উৎপাদন খরচের তুলনায় অনেক কম। জুনের শেষ সপ্তাহে এক দিনের ব্রয়লার বাচ্চা বিক্রি হয়েছে মাত্র ৮-১৪ টাকায়, যা হ্যাচারি মালিকদের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাজারে মুরগির দাম কমে যাওয়ায় খামারিরা নতুন করে খামারে বাচ্চা তুলতে আগ্রহ হারাচ্ছেন। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে বহু খামারি হয়তো চিরতরে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলবেন। হ্যাচারি ব্যবসায়ীরাও পড়েছেন বিপুল লোকসানে।

রাজশাহীর জান্নাতুল ফেরদৌসী জানান, ‘অতিরিক্ত গরম, রোগের প্রাদুর্ভাব ও দামের পতনে আমার খামার এখন লোকসানের পাহাড়।’ তিনি প্রতিদিন লোকসান গুনে খামার চালাতে বাধ্য হচ্ছেন। অন্যদিকে, কাশিয়াডাঙ্গার মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘আগে ৮০ টাকা দরে বাচ্চা কিনে লাভ করা যেত, এখন ৫-৭ টাকায় কিনেও খরচ উঠছে না।’

শুধু প্রান্তিক খামারি নয়, দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ খামারিরাও ক্ষতির ভার বইতে পারছেন না। গোদাগাড়ীর আব্দুল জলিল তার লেয়ার খামার বন্ধ করে দিয়েছেন। আগে যেখানে মাসে ৭০ হাজার ব্রয়লার বাচ্চা বিক্রি করতেন, এখন তা নেমে এসেছে ৪৮ হাজারে। তিনি বলেন, ‘আমার তত্ত্বাবধানে থাকা ৫০টি খামারের মধ্যে ৩৫টিই বন্ধ হয়ে গেছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদ ড. রুশাদ ফরিদী বলেন, ‘চাহিদা-সরবরাহের ভিত্তিতে বাজারে দাম ওঠানামা করে। যদি সত্যিই সিন্ডিকেট থাকত, তারা এই পরিমাণ ক্ষতি হজম করত না।’

বাংলাদেশ ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সিন্ডিকেটের অভিযোগে দোষারোপ না করে বরং শিল্পকে বাঁচাতে নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন। নাহলে ভবিষ্যতে পোলট্রি পণ্যের দাম এতটাই বাড়বে যে সাধারণ ভোক্তারা তা বহন করতে পারবেন না।’

বর্তমান অবস্থা ইঙ্গিত দিচ্ছে—উৎপাদন থেকে খামারিরা মুখ ফিরিয়ে নিলে সামনে আরও ভয়াবহ খাদ্য সংকট ও প্রোটিন ঘাটতি দেখা দিতে পারে। তাই এখনই জরুরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন এই শিল্পকে বাঁচাতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button