কেজিতে ২৩ টাকা খরচ, বিক্রি মাত্র ১৪—অসহায় অবস্থায় আলুচাষি কৃষকরা
উৎপাদনে রেকর্ড হলেও লোকসানে ডুবে যাচ্ছেন রাজশাহীর কৃষকরা, পাইকারি-খুচরা বাজারের দামের বিশাল ব্যবধান


এবিএনএ: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার আলুচাষিরা চরম লোকসানে পড়েছেন। প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ পড়ছে প্রায় ২৩ টাকা, অথচ পাইকারি বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে মাত্র ১৩-১৪ টাকায়। ফলে প্রতি কেজিতে কৃষকরা গড়ে ১০ টাকা লোকসান গুনছেন।
চাষি জলিল সরদার শুক্রবার তাহেরপুর হাটে পাঁচ মণ আলু নিয়ে গিয়েছিলেন। সব মিলিয়ে বিক্রি করেছেন মাত্র ২৭৫০ টাকায়। সংসারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতেই তার কাছে টাকাপয়সা শেষ হয়ে যায়। প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও মেয়ের জন্য ইলিশ মাছ কিনতে পারেননি তিনি। অভিমান ঝরে পড়ে তার কণ্ঠে—“আগামী বছর আর আলু চাষ করমু না, এর চেয়ে মানুষের বাড়িতে কাজ করা ভালো।”
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্যমতে, এ বছর বাগমারায় আলু চাষ হয়েছে ৯৮৫০ হেক্টর জমিতে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। উৎপাদনও বেড়েছে প্রত্যাশার তুলনায়। তবে বাজারদর এতটাই কম যে, সমগ্র উপজেলায় কৃষকদের লোকসান দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৩১ কোটি টাকা।
যোগীপাড়ার কৃষক সামছুর রহমান বলেন, “খুচরা বাজারে আলুর দাম ২০-২১ টাকা, অথচ আমরা পাইকারিতে পাচ্ছি ১৩-১৪ টাকা। এই বৈষম্যের জন্য দায়ী বিপণন ব্যবস্থা।”
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের রাজশাহী অঞ্চলের কর্মকর্তা সুমন হালদার স্বীকার করেছেন, পাইকারি ও খুচরা বাজারের দামের ব্যবধান রয়েছে। তিনি জানান, দাম বাড়াতে একটি আবেদন ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
অন্যদিকে, কোনাবাড়িয়া গ্রামের কৃষক জহুরুল ইসলাম ছয় বিঘা জমিতে আলু চাষ করে লোকসান গুনেছেন দুই লাখ ৫০ হাজার টাকারও বেশি। এখনো ঋণের বোঝা শোধ করতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।
স্থানীয় কৃষক সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, দাম না পেয়ে কৃষকেরা রাস্তায় আলু ফেলে প্রতিবাদ করেছেন, তবুও বাজারে তার কোনো প্রভাব পড়েনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ড. আব্দুর রাজ্জাক আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “এভাবে চলতে থাকলে আগামী বছর কৃষকেরা আলু চাষে নিরুৎসাহিত হবেন।”
রাজশাহী কৃষি তথ্য সার্ভিস জানায়, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আলু উৎপাদিত হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের আশা, বাজারে স্থিতিশীলতা ফেরাতে শিগগিরই দামে কিছুটা বৃদ্ধি হতে পারে।