নিবন্ধনের দৌড়ে ১৪৪ দল, কিন্তু নেই গঠনতন্ত্র, কমিটি, কার্যালয়: ইসির চিঠিতে অস্বস্তিতে সব দল
নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আবেদন করা অধিকাংশ দলের নেই প্রয়োজনীয় কাঠামো; এনসিপিসহ সব দলকে তথ্য হালনাগাদে ১৫ দিনের সময় দিল ইসি


এবিএনএ: বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন করে আত্মপ্রকাশ করতে আগ্রহী ১৪৪টি দল নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করলেও তাদের অধিকাংশই নিবন্ধনের প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করতে পারেনি। এসব দলের অনেকেরই নেই গঠনতন্ত্র, সক্রিয় কেন্দ্রীয় বা জেলা কমিটি কিংবা নিজস্ব কার্যালয়ের ঠিকানা।
নিয়ম অনুযায়ী, ইসি আবেদনপত্র যাচাই করে প্রতিটি দলকে ১৫ দিনের সময় দিয়েছে তথ্যের ঘাটতি পূরণে। ১৫ জুলাই থেকে শুরু করে দুই ধাপে প্রথমে ৬২টি এবং পরে আরও ৮২টি দলকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, যেখানে ঘাটতির বিস্তারিত উল্লেখ করে যথাযথ নথিপত্র জমা দিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আইনি শর্তানুযায়ী, নিবন্ধনের জন্য দলের কেন্দ্রীয় কমিটি, একটি সচল কেন্দ্রীয় কার্যালয়, অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলার কার্যকর কমিটি, ১০০ উপজেলা বা মহানগরে কার্যালয় এবং প্রতিটি কার্যালয়ে ২০০ ভোটার সদস্য থাকতে হবে। এছাড়া ১০টি নির্ধারিত শর্ত পূরণের প্রমাণ ও নিবন্ধন ফি বাবদ পাঁচ হাজার টাকা জমা দিতে হয়।
এনসিপির আবেদনেও একাধিক ঘাটতি পাওয়া গেছে। ইসি থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, জেলা ও উপজেলা কার্যালয়ের তালিকা, অফিস ভাড়া সংক্রান্ত দলিল, ভোটার সদস্যদের পূর্ণ তালিকা ও গঠনতন্ত্রের মধ্যে সংসদীয় বোর্ডের প্রার্থী মনোনয়নের বিধান অনুপস্থিত। এমনকি কিছু জায়গায় একই ভোটারের নাম একাধিকবার দেওয়া হয়েছে।
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানিয়েছেন, তাদের আবেদনে যে ত্রুটিগুলো পাওয়া গেছে, তা সংশোধনের কাজ চলছে এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রয়োজনীয় তথ্য জমা দেওয়া হবে।
অন্যান্য দলগুলোর অবস্থাও প্রায় একই। অন্তত ৩০টি দলের নেতারা ইসির চিঠিতে উল্লেখিত ঘাটতির কথা স্বীকার করেছেন। অনেকেই গঠনতন্ত্র, অফিসের কাগজপত্র, এমনকি নিবন্ধন ফিও জমা দেননি।
কিছু দলের অবস্থা আরও দুর্বল। যেমন—বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ পার্টি, জাস্টিস পার্টি, তৃণমূল জনতা পার্টি, মুক্তি ঐক্যদল, জনজোট পার্টি, ইনসাফ দল, বেকার মুক্তি পরিষদ, ইউনাইটেড পার্টি, আজাদী পার্টি, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি এবং ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট পার্টির ঘাটতি অনেক বেশি।
ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, “সব দলের তথ্যেই ঘাটতি রয়েছে। ১৫ দিনের সময়সীমা শেষে যারা শর্ত পূরণে ব্যর্থ হবে, তাদের আবেদন বাতিল হবে।”
নিবন্ধনের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে মাঠপর্যায়ে যাচাই-বাছাই চালানো হবে, এবং কোনো ধরনের অসংগতি ধরা পড়লে তা দলটির নিবন্ধনপ্রাপ্তির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
এই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনের কঠোর অবস্থান প্রমাণ করছে—নিবন্ধন শুধু দল গঠনের ঘোষণা দিয়ে নয়, বাস্তব কাঠামো ও সাংগঠনিক উপস্থিতি দিয়েই অর্জন করতে হবে।