জাতীয়

গণমাধ্যমে আস্থার সংকট কেন বাড়ছে? দলীয় প্রভাব ও বিভক্ত সাংবাদিকতার দিকে আঙুল বিশিষ্টজনদের

গণতন্ত্রহীনতা ও রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে সংবাদপত্র হারাচ্ছে নিরপেক্ষতা—আস্থার সংকটে গণমাধ্যম, সাংবাদিকদের ঐক্যের তাগিদ আলোচনায়

এবিএনএ:  রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল আলোচনায় উঠে এলো সাংবাদিকতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ। ‘গণমাধ্যমের স্বাধীনতা: সাংবাদিকদের সুরক্ষা ও আইনি কাঠামো’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন—দলীয় লেজুড়বৃত্তি, বিভক্ত সাংবাদিক সমাজ এবং রাজনৈতিক প্রভাব সংবাদপত্রের ওপর মানুষের আস্থা হ্রাসের মূল কারণ।

দলীয় সাংবাদিকতা আস্থার অন্তরায়

সেন্টার ফর গভার্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস)-এর আয়োজনে এই আলোচনায় বিশিষ্টজনেরা বলেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আমলে সংবাদপত্র একটি নির্দিষ্ট দলের সেবা করে গেছে। এমনকি জুলাই অভ্যুত্থানের পরও সেই ধারা থেকে বের হতে পারেনি অনেক গণমাধ্যম।

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক জিল্লুর রহমান এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, “গত ১৫ বছরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পুলিশ ভুয়া মামলা করেছে। ৫ আগস্টের পরে পুলিশের নৈতিক ভিত্তি ভেঙে পড়ে, তারা বাধ্য হয়েছে মামলা নিতে।”

তিনি অভিযোগ করেন, সাংবাদিকরা নিজেরা বিভক্ত বলেই প্রেস কাউন্সিল অ্যাক্ট শক্তিশালী হয়নি, এমনকি তাঁকেও ‘ভারতের দালাল’ আখ্যা দিয়ে গুজব ছড়ানো হয়।

‘প্রেসার গ্রুপ’ হিসেবে কাজ করছে সাংবাদিকদের একাংশ

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “আগে সাংবাদিকরা দাসসুলভ আচরণ করে সুবিধা নিয়েছেন—প্লট, তদবির, নিয়োগ সবই হয়েছে। এখন যারা মব তৈরি করছে, তারা আসলে চাপ প্রয়োগের দল।”

তিনি আরও বলেন, “সরকার কারও লেখালেখিতে হস্তক্ষেপ করছে না, কিন্তু মিথ্যা তথ্য ছড়ানো এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।”

নির্বাচনে গণমাধ্যমের ব্যর্থতা নিয়ে তির্যক মন্তব্য

বদিউল আলম মজুমদার, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান, বলেন, “গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনই ছিল বিতর্কিত। গণমাধ্যম যদি সঠিক ভূমিকা পালন করত, তাহলে সেগুলো ঠেকানো যেত। গণতন্ত্র রক্ষায় মিডিয়ার ভূমিকা সবার ওপরে।”

সাংবাদিক সমাজের ঐক্যের অভাব ও বিভক্তি

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, “সাংবাদিকরা নিজেরাই বিভক্ত, এখন কেউ কাউকে প্রেস ক্লাবে ঢুকতে দেয় না। আগে বিএনপি-জামায়াত ট্যাগ লাগানো হতো, এখন বলা হয় স্বৈরাচার সমর্থক। সাংবাদিক সমাজ ঐক্য গড়তে ব্যর্থ হয়েছে।”

তিনি বলেন, “তথ্য মন্ত্রণালয় ও ডিএফপি এখনো ভুয়া সার্কুলেশন দেখে বিজ্ঞাপন দেয়। এটি বন্ধ না হলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ব্যর্থতা থেকেই যাবে।”

উপস্থিত ছিলেন আরও অনেকে

এই আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স, সাংবাদিক এম এ আজিজ, ড. শহিদুল আলম, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক পারভেজ করিম আব্বাসী, বিশ্লেষক ড. জাহেদ-উর রহমান, সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির, ববি হাজ্জাজ, মুক্তাদির রশীদ, জায়মা ইসলামপারভিন এফ চৌধুরী প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button