লোহিত সাগরে হুতিদের দাপট: ২০ মাসে ৭০ জাহাজে হামলা, নিহত ও নিখোঁজ বহু
ইসরায়েল সংযুক্ত অভিযোগে একের পর এক বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালাচ্ছে হুতি গোষ্ঠী, সামরিক প্রতিরোধ নেই বললেই চলে


এবিএনএ: গত ২০ মাস ধরে লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজের ওপর ধারাবাহিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইরান-সমর্থিত হুতি গোষ্ঠী। সর্বশেষ হামলায় তারা দুটি জাহাজ ডুবিয়ে দেয় এবং বেশ কয়েকজন নাবিক নিহত ও নিখোঁজ হন। নভেম্বর ২০২৩ থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত তারা অন্তত ৭০টি জাহাজে আক্রমণ করেছে, যা আন্তর্জাতিক নৌপথে বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠেছে।
জানা গেছে, হুতিরা প্রকাশ্যে বলছে—তারা কেবল ইসরায়েল-সংযুক্ত জাহাজ লক্ষ্য করেই আঘাত হানছে। তবে বাস্তবে তাদের হামলার শিকার অনেক জাহাজের সঙ্গেই ইসরায়েলের সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
সর্বশেষ ৭ জুলাই হুতিরা ‘ম্যাজিক সি’ ও ‘ইটার্নিটি সি’ নামে দুটি জাহাজে হামলা চালায়। ম্যাজিক সি-র ২২ জন ক্রু কোনোমতে প্রাণে বেঁচে গেলেও, ইটার্নিটি সি-তে ২৫ জন আরোহীর মধ্যে অনেকে নিহত হন ও বেশ কয়েকজনকে হুতিরা অপহরণ করে নিয়ে যায়।
এই আক্রমণ দু’টি ঘটেছিল ইয়েমেন উপকূল থেকে প্রায় ৫১ নটিক্যাল মাইল দূরে, লোহিত সাগরের আন্তর্জাতিক জলসীমায়। হুতিরা ছোট জাহাজে চড়ে এবং কামিকাজে ড্রোন ব্যবহার করে দীর্ঘ সময় ধরে চলা অপারেশনের মাধ্যমে হামলা চালায়। পুরো মিশনটি ছিল পরিকল্পিত ও সুসমন্বিত, যা সংঘটিত করতে দুই দিন সময় নেয় তারা।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল এক প্রতিবেদনে জানায়, ওই আক্রমণের সময় কোনো সহযোগী জাহাজ বা সামরিক বাহিনী এগিয়ে আসেনি। অথচ এই এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টকম, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও চীনের নৌবাহিনীর সক্রিয় উপস্থিতি থাকার কথা। ২০২৩ সালে এই হুমকি মোকাবেলায় ‘প্রোসপারিটি গার্ডিয়ান’ নামে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা জোট গঠিত হলেও কার্যকর প্রতিক্রিয়া প্রায় অনুপস্থিত।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হুতিদের এই আগ্রাসী কৌশল শুধু নৌপথ নয়, পুরো মধ্যপ্রাচ্যকেই অস্থির করে তুলছে। প্রশ্ন উঠেছে, এত বড় আকারে আক্রমণের পরও কেন বিশ্বশক্তিগুলো প্রতিক্রিয়া জানাতে ব্যর্থ হচ্ছে?
বর্তমানে হুতিদের হামলার ধরন আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। তারা শুধু দূর থেকে ড্রোন হামলা নয়, বরং নৌযান চড়ে সরাসরি হামলার কৌশলও গ্রহণ করছে, যা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য ভয়াবহ সংকেত।