ত্রাণ নিতে এসে প্রাণ গেল ৭৪৩ ফিলিস্তিনির: মার্কিন-ইসরায়েলি কেন্দ্রে নৃশংসতার অভিযোগ
গাজায় ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে গুলিতে ৭৪৩ জন নিহত, আহত প্রায় ৫ হাজার; ক্ষুধার্ত মানুষদের ওপর হামলার অভিযোগে সমালোচনার মুখে জিএইচএফ


এবিএনএ: গাজা উপত্যকায় চলমান যুদ্ধের মধ্যেই আরও এক মর্মান্তিক পরিণতির শিকার হলো ফিলিস্তিনিরা। মার্কিন ও ইসরায়েলি সমর্থিত ত্রাণ সংস্থা ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ)’ পরিচালিত কেন্দ্রে ত্রাণ নিতে এসে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৭৪৩ জন ফিলিস্তিনি। এই ঘটনার সময় আরও প্রায় ৪ হাজার ৯০০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
গত মে মাসের শেষদিক থেকে জিএইচএফ গাজায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সেই কেন্দ্রগুলোই হয়ে উঠেছে ফিলিস্তিনিদের জন্য মৃত্যুকূপ। বিভিন্ন প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ত্রাণ নেওয়ার জন্য জড়ো হওয়া সাধারণ মানুষের ওপর গোলাবর্ষণ ও স্ট্যান গ্রেনেড ছোড়া হয়েছে, যার ফলে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটে।
এক ফিলিস্তিনি আহত ব্যক্তি, মজিদ আবু লাবান, যিনি খাবারের সন্ধানে কেন্দ্রটিতে গিয়েছিলেন, বলেন, “আমার সন্তানরা টানা তিন দিন না খেয়ে ছিল। বাধ্য হয়েই আমি খাবার নিতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে যা দেখেছি, তা ভয়াবহ।”
এই ঘটনার পর জিএইচএফ তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই সংস্থাটিকে একটি “সামরিকীকৃত অমানবিক কর্মসূচি” হিসেবে অভিহিত করে এর বহিস্কারের আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটির দাবি, জিএইচএফ মূলত আন্তর্জাতিক সমাজের উদ্বেগ প্রশমনের একটি ছদ্মবেশ মাত্র, যা আসলে ইসরায়েলের দমননীতি বাস্তবায়নের অংশ।
এরই মাঝে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কাতারে মধ্যস্থতা আলোচনার জন্য প্রতিনিধি দল পাঠালেও, গাজায় হামলা অব্যাহত রয়েছে। শুধুমাত্র আজ রোববার ভোরেই ইসরায়েলের হামলায় নিহত হয়েছেন আরও ২৭ জন ফিলিস্তিনি। গাজার তুফা এলাকা ও খান ইউনিসে ড্রোন হামলায় মৃত্যু ঘটে অনেকের।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন সম্প্রতি জিএইচএফকে ৩ কোটি ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যা নিয়েও উঠেছে নতুন বিতর্ক।
আল জাজিরার সাংবাদিক হানি মাহমুদ, গাজা থেকে বলেন, “এই মানুষগুলো কেবল একমুঠো খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছিল। তাদের কেউই জানত না, ত্রাণের আশায় গিয়ে তারা আর ফিরে আসবে না।”
স্থানীয় আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এই বৃষ্টিপাত বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের কোনো সম্পর্ক নেই এই মৃত্যুর সঙ্গে—এটি মানবসৃষ্ট সহিংসতার নির্মম এক চিত্র।
গাজায় যুদ্ধ চলছে ২০ মাসেরও বেশি সময় ধরে। এখন প্রশ্ন উঠেছে—এই মানবিক বিপর্যয়ের শেষ কোথায়?