আন্তর্জাতিক

মহাবিশ্বে ভয়ংকর ‘আলোর যুদ্ধ’! দুই গ্যালাক্সির সংঘর্ষে নষ্ট হচ্ছে তারা গঠনের ক্ষমতা

মহাকাশে প্রথমবারের মতো দেখা গেল দুই গ্যালাক্সির মধ্যে ‘আলোর লড়াই’, যেখানে কোয়েজার রশ্মি ছুড়ে প্রতিপক্ষকে দুর্বল করছে।

এবিএনএ:

মহাবিশ্বের গভীরে দুই গ্যালাক্সির মধ্যে দেখা গেছে এক অদ্ভুত ও রোমাঞ্চকর লড়াই—যেখানে একে অপরকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া হচ্ছে তীব্র বিকিরণ। এই গ্যালাকটিক সংঘর্ষ এতটাই তীব্র যে এতে একটি গ্যালাক্সির তারাগঠন ক্ষমতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

এই দৃশ্য প্রথমবারের মতো ধরতে সক্ষম হয়েছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা, যেটি সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যাচার-এ। গবেষকরা এটিকে তুলনা করেছেন এক প্রাচীনকালের যুদ্ধের সঙ্গে—যেখানে গ্যালাক্সিরা যেন একেকজন আলোর বর্শা হাতে যোদ্ধা।

ফ্রান্সের ইনস্টিটিউট ডি’অ্যাস্ট্রোফিজিক্স ডি প্যারিসের গবেষক প্যাসকুইয়ার নোটারডেম বলেন, “আমরা এটিকে ‘মহাজাগতিক যুদ্ধ’ বলি, কারণ এতে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ করতে কোয়েজার ব্যবহার করা হচ্ছে।”

কোয়েজার হলো গ্যালাক্সির উজ্জ্বল ও শক্তিশালী কেন্দ্র, যা সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের দ্বারা চালিত এবং প্রচণ্ড বিকিরণ ছড়ায়। এই বিকিরণ সাধারণ গ্যালাক্সির গ্যাস ও ধূলিকণাকে বিঘ্নিত করে এবং তারাগঠনের মতো প্রক্রিয়াকে থামিয়ে দিতে পারে।

রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গের আইওফে ইনস্টিটিউটের গবেষক সের্গেই বালাশেভ জানান, “এই প্রথমবার আমরা দেখতে পাচ্ছি কিভাবে কোয়েজারের আলো সরাসরি সাধারণ গ্যালাক্সির গ্যাসীয় গঠনে হস্তক্ষেপ করছে।”

তিনি আরও জানান, এই সংঘর্ষ শুধু গ্যালাক্সিকে নয়, বরং তার কেন্দ্রস্থ সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলকে আরও বেশি জ্বালানি সরবরাহ করছে। এর ফলে কোয়েজার আরও বেশি শক্তি পায় এবং আগ্রাসীভাবে প্রতিপক্ষকে আক্রমণ চালাতে পারে।

এই গবেষণায় ব্যবহার হয়েছে চিলির আতাকামা মরুভূমিতে অবস্থিত ইউরোপিয়ান সাউদার্ন অবজারভেটরির অত্যাধুনিক ভেরি লার্জ টেলিস্কোপ ও এক্স শুটার ডিভাইস। হাই রেজুলেশনের মাধ্যমে গবেষকরা দুটি কাছাকাছি গ্যালাক্সিকে আলাদা করতে পেরেছেন, যেগুলো আগের পর্যবেক্ষণে একটি একক বস্তু হিসেবে দেখা যাচ্ছিল।

এক্স শুটার ব্যবহার করে তারা কোয়েজারের আলো বিশ্লেষণ করেছেন, যখন সেটি সাধারণ গ্যালাক্সির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিল। এই পর্যবেক্ষণ বলছে, কোয়েজারের বিকিরণ গ্যাসের স্তরে ঢুকে তা তাড়িয়ে দেয়, ফলে তারাগঠনের প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টি হয়।

এই লড়াইয়ের আলো আমাদের কাছে পৌঁছাতে সময় লেগেছে প্রায় ১ হাজার ১০০ কোটি বছর। তাই আমরা যা দেখছি, তা মূলত সেই সময়কার, যখন মহাবিশ্ব ছিল তার বর্তমান বয়সের মাত্র ১৮ শতাংশ।

এই আবিষ্কার শুধু মহাবিশ্ব সম্পর্কে আমাদের জানার পরিধি বাড়াল না, বরং গ্যালাক্সির বিবর্তন, ব্ল্যাকহোলের জ্বালানি প্রক্রিয়া এবং কোয়েজারের ভূমিকাকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করল বিজ্ঞানীদের।

Back to top button