

এবিএনএ: দলে একের পর এক অনিয়ম, সহিংসতা ও অপরাধে জড়িয়ে পড়া নেতাকর্মীদের কারণে চাপে পড়েছে বিএনপি। বহিষ্কার ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার পরও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় এবার দলটি শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিশেষ করে দলের ভেতর অনুপ্রবেশকারী এবং অপকর্মে যুক্ত সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করাই এই অভিযানের মূল লক্ষ্য।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ৫ আগস্ট ২০২৩ সালের পর থেকে যারা দলে এসেছেন এবং রাজনৈতিক সুযোগ নিচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রথম পর্যায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর পাশাপাশি শিল্পাঞ্চলসহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অপরাধে জড়িত নেতাকর্মীদের চিহ্নিত করে সাংগঠনিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
সম্প্রতি পুরান ঢাকার মিটফোর্ডে এক ভাঙারির ব্যবসায়ীকে হত্যার ঘটনায় বিএনপির কিছু নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততার অভিযোগ সামনে আসায় দলটি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে আজীবন বহিষ্কারসহ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলেও দলীয় ভাবমূর্তি সংকটে পড়ে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ঠিক রাখতে জেলা ও তৃণমূল পর্যায়ে শুদ্ধি অভিযান শুরু হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেন, মিটফোর্ডের ঘটনায় দায় চাপিয়ে বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার অপচেষ্টা চলছে।
৩২০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
দলটির তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট ২০২৩ থেকে এ পর্যন্ত বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের ৩২০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৮০০ জন বিএনপির, যাদের ৮০০ জন বহিষ্কৃত, ৭০০ জনকে নোটিশ, ৫০ জনের পদ স্থগিত, ১০০ জনকে সতর্ক করা হয়েছে। ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও যুবদলের আরও প্রায় ১২০০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
পুলিশের প্রতি অভিযোগ
বিএনপি অভিযোগ করেছে, সংঘর্ষ ও হত্যার ঘটনার পরও পুলিশের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যেমন, পাবনার সুজানগরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১০ নেতাকর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। পরে বিএনপির নেতারা নিজ উদ্যোগে অভিযোগ করেন।
নয়াপল্টনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের সহযোগী সংগঠনগুলো অভিযোগ করে, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে প্রশাসনকে নিষ্ক্রিয় রেখে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করছে।
বহিষ্কার করেও নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ
দলের শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন। অনেকে বলছেন, অভিযোগ যাচাই ছাড়াই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ দ্রুতই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ফিরে আসছেন। খুলনায় গুলিতে নিহত যুবদল নেতা মাহবুবুর রহমান ছিলেন বহিষ্কৃত, তবুও সক্রিয় ছিলেন দলীয় কর্মসূচিতে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের ভাবমূর্তি রক্ষায় সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। তবে গণতান্ত্রিক পরিবেশের অভাবে অনেক কিছুই স্বাভাবিকভাবে হচ্ছে না।