অর্থনীতির সামনে অশনি সংকেত: মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ সংকট ও বৈশ্বিক অস্থিরতায় বিপদে বাংলাদেশ
জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে আসার আশঙ্কা, ঋণের চাপ ও আন্তর্জাতিক চ্যালেঞ্জে কোণঠাসা দেশের অর্থনীতি


এবিএনএ: বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যাওয়ার পূর্বাভাস এবং অভ্যন্তরীণ নানাবিধ সংকটের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। আগামী ২০২৫ সালে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ২.৮ শতাংশে নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এর ফলে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো আমদানিনির্ভর অর্থনীতির ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।
রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে আয়োজিত আন্তর্জাতিক চেম্বার অব কমার্স বাংলাদেশ (আইসিসিবি)-এর ৩০তম বার্ষিক কাউন্সিলে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ে শঙ্কা
আইসিসিবি সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন মারাত্মক ধাক্কার মুখে দাঁড়িয়ে। বিশ্বব্যাংকের মতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে মাত্র ৩.৩ শতাংশ। আইএমএফ ও এডিবির পূর্বাভাস যথাক্রমে ৩.৮ ও ৩.৯ শতাংশ।”
তিনি আরও জানান, বর্তমানে খাদ্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ এবং সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বিনিয়োগ স্থবির, রাজনীতির অস্থিরতা ও অনাদায়ী ঋণের পরিমাণ ৩.৪৫ ট্রিলিয়ন টাকা ছাড়িয়েছে, যার বড় অংশ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে।
ব্যাংক খাতে সংকট ও সংস্কার উদ্যোগ
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯টি ব্যাংক জানায় তাদের মূলধন ঘাটতি ১.৭১ ট্রিলিয়ন টাকা। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার ব্যাংক বোর্ড বাতিল, একীভূতকরণসহ নানা সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে।
এলডিসি থেকে উত্তরণ: শুল্ক ও রপ্তানি ঝুঁকি
২০২৬ সালে এলডিসি স্ট্যাটাস হারালে তৈরি পোশাক খাতে শুল্কমুক্ত সুবিধা হারাতে পারে বাংলাদেশ। ইউরোপ ও যুক্তরাজ্যে তখন ১১.৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হতে পারে, যা রপ্তানিতে বড় ধাক্কা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
বৈশ্বিক অস্থিরতা ও কৌশলগত প্রস্তুতির আহ্বান
কাউন্সিলে জানানো হয়, ইউক্রেন যুদ্ধ, রেড সি সংকট, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য পুনরাগমন বৈশ্বিক অনিশ্চয়তাকে আরও ঘনীভূত করছে। বাংলাদেশের জন্য কৌশলগত প্রস্তুতি এখন জরুরি।
প্রধান চ্যালেঞ্জ ও সুপারিশসমূহ:
-
জ্বালানি নিরাপত্তা: টাকার অবমূল্যায়ন ও আমদানিনির্ভরতার ফলে ব্যয় বেড়েছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ এবং নিজস্ব উৎসে অনুসন্ধানের পরামর্শ দেওয়া হয়।
-
রাজস্ব ঘাটতি: জিডিপির তুলনায় কর আদায় এখনো ১০ শতাংশের নিচে। এনবিআর পুনর্গঠনের আহ্বান জানানো হয়।
-
জলবায়ু ও খাদ্য নিরাপত্তা: পরিবেশগত পরিবর্তনের কারণে প্রবৃদ্ধি বছরে ২ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
-
বিনিয়োগ ও রপ্তানি বৈচিত্র্য: ২০২৩ সালে এফডিআই মাত্র ৩ বিলিয়ন ডলার, যেখানে ভিয়েতনামে তা ছিল ৩৯ বিলিয়ন। কৃষিপণ্য, ফার্মাসিউটিক্যালস এবং আইটি খাতে জোর দেওয়ার সুপারিশ এসেছে।
-
সাইবার নিরাপত্তা: ডিজিটাল সেবার প্রসারে হ্যাকিংয়ের ঝুঁকি বাড়ছে। দ্রুত জাতীয় সাইবার আইন ও কাঠামো প্রয়োজন।
-
যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫% শুল্ক প্রস্তাব: বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত ও কর্মসংস্থান বড় ঝুঁকিতে পড়তে পারে। এ বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে টাস্কফোর্স গঠনের পরামর্শ দেওয়া হয়।
বিবিআইএন করিডরের সম্ভাবনা
ভুটান-ভারত-নেপাল-বাংলাদেশ সংযুক্ত হলে ২০৩৫ সালের মধ্যে এই অঞ্চলের সম্মিলিত জিডিপি ৮.৩ ট্রিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। এতে বাংলাদেশ কৌশলগত ট্রানজিট হাবে পরিণত হতে পারে।