অর্থ বাণিজ্য

খেলাপি ঋণ ও লোকসানের ফাঁদে ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের পথে

অমানতকারীর অর্থ ফেরত দিতে ব্যর্থতা ও মূলধন ঘাটতির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর সিদ্ধান্ত

এবিএনএ:  বাংলাদেশের আর্থিক খাতে বড়সড় ধাক্কা আসতে যাচ্ছে। ভয়াবহ লোকসান, ঋণখেলাপি এবং আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থতার কারণে ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক

এর আগে গত মে মাসে ২০টি সমস্যাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নোটিশ দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সন্তোষজনক ব্যাখ্যা না পাওয়ায় এবার ৯টি প্রতিষ্ঠানকে চূড়ান্তভাবে অবসায়নের পথে নেওয়া হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধে সরকারের প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে বলে জানা গেছে।

বন্ধ হতে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো:
পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, আভিভা ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি), প্রিমিয়ার লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি এবং প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রেজল্যুশন বিভাগ জানিয়েছে, ক্ষুদ্র আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেওয়া হবে এবং চাকরিজীবীরা নিয়ম অনুযায়ী সুবিধা পাবেন।

কিছু প্রতিষ্ঠানের চিত্র ভয়াবহ:

  • এফএএস ফাইন্যান্সের ৯৯.৯৩% ঋণ খেলাপি, লোকসান ১,৭১৯ কোটি টাকা।

  • ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৯৮% ঋণ খেলাপি, লোকসান ১,০১৭ কোটি টাকা।

  • ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের লোকসান ৪,২১৯ কোটি টাকা, ঋণের ৯৬% খেলাপি।

  • পিপলস লিজিংয়ের লোকসান ৪,৬২৮ কোটি টাকা, ঋণের ৯৫% খেলাপি।

  • আভিভা ফাইন্যান্সের ৮৩% ঋণ খেলাপি, লোকসান ৩,৮০৩ কোটি টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে অনেকগুলো এখন চরম সংকটে। ২০টি প্রতিষ্ঠানের মোট ঋণের ৮৩% খেলাপি। অন্যদিকে ভালো প্রতিষ্ঠানগুলো মাত্র ৭.৩১% খেলাপি ঋণে সীমাবদ্ধ থেকেছে এবং মুনাফাও করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন অনুযায়ী আমানতকারীর স্বার্থ ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা মূলধন সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলের সুযোগ রয়েছে। সেই ধারার ভিত্তিতেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে।

সব মিলিয়ে এ সিদ্ধান্ত দেশের আর্থিক খাতে বড় পরিবর্তন আনতে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সমস্যাগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো অবসায়নের মাধ্যমে খাতকে স্থিতিশীল করতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button