আন্তর্জাতিক

৪ পাক-ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিল ভারতীয় সেনা

এবিএনএ : সীমান্তে একের পর এক হামলা পাল্টা হামলায় ব্যস্ত ভারত-পাকিস্তান। সেই সাথে উত্তেজনাও বাড়ছে। সম্প্রতি নিহত এক সহযোদ্ধার মাথা কেটে নেওয়ার ঘটনায় চরম অপমানিত হয়েছিল ভারতীয় সেনা। এবার তার চরম প্রতিশোধ নিলেন জওয়ানরা। শনিবার রাতে জম্মু-কাশ্মীরের কেরন সেক্টরে নিয়ন্ত্রণরেখায় চারটি পাকিস্তানি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনারা।

বলা হয়, এই ঘটনায় একাধিক পাক সেনার মৃত্যু হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। উরির ঘটনার পর নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ভারতীয় বাহিনী পাক জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিতে যে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছিল, এদিনের সেনা অপারেশনও সেই মাত্রায় ঘটেছে বলে জানা গেছে।

শনিবার রাতের অপারেশনে ভারতীয় সেনাবাহিনী ভারী মর্টার ব্যবহার করেছে বলে সেনা দেশটির সূত্রে জানা গেছে।  সম্প্রতি ভারতীয় সেনার এত বড় অপারেশন হয়নি। এদিনের অপারেশনে পাক সেনাবাহিনী ও তাদের মদতপুষ্ট জঙ্গিদের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তাও নজিরবিহীন। এ ব্যাপারে কূটনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের এক মাস পর ভারত দ্বিতীয়বার পাকিস্তানের বিরু‌দ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। কূটনীতির ভাষায় যা ‘হট পারস্যুট’ নামে পরিচিত। আগে পাকিস্তানের যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের বিরু‌দ্ধে ভারত এতটা কড়া পদক্ষেপ নিত না।

এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় জম্মু-কাশ্মীরের কুপওয়াড়া সেক্টরের মাচিলে পাক সেনা ও জঙ্গিদের সঙ্গে সংঘর্ষে মৃত্যু হয় ১৭ শিখ ইনফ্যাণ্ট্রির জওয়ান মনজিৎ সিংয়ের। ভারতীয় সেনার পাল্টা হামলার মুখে মনজিতের দেহ বিকৃত করে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে পালিয়ে যায় পাক জঙ্গি ও সেনারা। ধারালো অস্ত্রে তাঁর মাথা কেটে আলাদা করে দেওয়া হয়। এর পরই তীব্র ক্ষোভের আঁচে ফুটতে থাকেন সেনা জওয়ানরা। উধমপুরে সেনার নর্দার্ন কম্যান্ড হেডকোয়ার্টার থেকে বিবৃতি জারি করে বলা হয়, খুব দ্রুত এই ঘৃণ্য ঘটনার উপযুক্ত জবাব পাবে পাকিস্তান। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া প্রতিক্রিয়ার পর রাতেই বদলা নিল ভারতীয় সেনা।

এদিকে শুক্রবারের নৃশংস ঘটনার পরও শনিবারও বিনা প্ররোচনায় হামলা জারি রাখে পাকিস্তান। জম্মুর আর এস পুরা এবং আন্তর্জাতিক সীমান্ত সংলগ্ন হীরানগরে সাধারণ মানুষ এবং বিএসএফ পোস্ট লক্ষ্য করে লাগাতার মর্টার হামলা চলেছে। শুক্রবারও পাক হামলায় মৃত্যু হয়েছে এক নারীসহ ১৫ বছরের এক কিশোরের। দিনভর জম্মু, সাম্বা, কাঠুয়া জেলার বিভিন্ন এলাকা এবং মেন্ধের এবং মাচিল সেক্টরে হামলা চলেছে।

এর মধ্যে মাচিলে পাক সেনা দাঁড়িয়ে থেকে জঙ্গিদের অনুপ্রবেশ করানোর চেষ্টা করছিল৷ কিন্তু ভারতীয় জওয়ানদের প্রতি আক্রমণের মুখে পিছু হঠতে বাধ্য হয় তারা। সেই সময়ই সংঘর্ষে মৃত্যু হয় ১৭ শিখ ইনফ্যাণ্ট্রির জওয়ান মনজিৎ সিংয়ের। ঘটনার সময় উপস্থিত সেনা আধিকারিকদের দাবি, জঙ্গিদের পালানোর সময় দূর থেকে লাগাতার গুলি চালিয়ে তাদের ‘কভার’ দিয়েছে পাকিস্তান রেঞ্জার্স। কিন্তু সরাসরি অনু্প্রবেশের নেপথ্যে ছিল পাকিস্তানের বর্ডার অ্যাকশন টিম বা ব্যাট।

দেশটির সেনা সূত্রের খবর, এই ব্যাট বাহিনীতেই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে কাজ করে পাক সেনা ও জঙ্গিরা। মূলত নিয়ন্ত্রণরেখায় ধারাবাহিকভাবে উত্তেজনার আগুন জ্বালাতেই এখন এই বাহিনীকে আরও বেশি সক্রিয় করেছে পাকিস্তান।

গোলাগুলির ঘটনার পর স্থানীয় পুলিশের দাবি, শনিবার ভোর ছ’টা থেকে শুরু হয় পাকিস্তান রেঞ্জার্সের মর্টার হামলা।  বেছে বেছে উপত্যকার গ্রামগুলিকে টার্গেট করছে তারা। ভারতীয় বাহিনীর সার্জিক্যাল অ্যাটাকের পর পাক বাহিনী নিয়ন্ত্রণরেখায় একমাসে ১০০ বারের বেশি সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন করেছে। ভারতীয় বাহিনীর পাল্টা জবাবে ১৫ জন পাক সেনার মৃত্যু হয়েছে। তারপর থেকেই সীমান্তের ওপার থেকে ঘনঘন হামলা হচ্ছে। পাল্টা আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়েছে ভারতীয় সেনাও।

এদিকে এদিনও মাচিল সেক্টরে ফের অনুপ্রবেশের চেষ্টা চালিয়েছে ব্যাট। যুদ্ধ চলাকালিন হঠাৎই দুর্ঘনায় মৃত্যু হয়েছে এক বিএসএফ জওয়ানের। বিএসএফের আইজি কাশ্মীর বিকাশ চন্দ্র জানিয়েছেন, দূরপাল্লার অস্ত্র মজুদগারে বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হন কনস্টেবল নীতিন সুভাষ। দ্রূত তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button