লাইফ স্টাইললিড নিউজ

মধ্যবয়সে ২০ মিনিট প্ল্যানের ম্যাজিক

এবিএনএ : মধ্যবয়সে এসে মানুষের শরীরের তেজ কমতে থাকে। হারাতে থাকে তারুণ্যের শক্তি। এই বয়সে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের বিশেষ করে শারীরিক নানা পরিবর্তন শুরু হয় ঠিক শিশুকালের বিপরীতে।

শৈশবে যেমন দেহের মাংসপেশি, হাড়, মস্তিষ্ক, শারীরিক শক্তি বাড়ন্ত থেকে তারুণ্যে পৌঁছায়, তেমনি মধ্যবয়সের পর শরীরের এগুলো ক্ষীয়মাণ হতে হতে বার্ধক্যের দিকে এগোয়। তবে আপনি চাইলে এই বয়সেও আপনার তারুণ্য ধরে রাখতে পারেন, যদি প্রতিদিন ২০ মিনিটের একটি সুষম পরিকল্পনা মেনে চলেন।

প্রতিদিনের ২০ মিনিটের এই পরিকল্পনা অনুসরণ আপনাকে সুস্থ রাখতে পারে সব সময়। তবে আগে বুঝে নিতে হবে আপনার দেহ সেই ভার সইবে কি না। এমন অনেক ২০ মিনিটের ব্যয়াম আছে যেগুলো আমাদের শরীরের জন্য ভালো, সহজ এবং কার্যকর। আপনার শরীরকে সুস্থ ও তারুণ্যময় করতে সক্ষম।

আপনি কোথা থেকে শুরু করবেন? চলুন, বিশেষজ্ঞের পরামর্শ থেকে দেখে নিই।

কর্মক্ষম মাংসপেশি

ভারোত্তলন এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটা কসরত। চিকিৎসক বা পরামর্শকের নিয়ম মেনে জিমে বা ঘরোয়াভাবে পানির বোতল বা ডাম্বেল দিয়ে মাংসপেশির সঞ্চালন ও প্রসারণ অনুশীলন করতে পারেন।

বেশি স্ট্রেচ

বয়স চল্লিশে পৌঁছালে যেকোনো ব্যায়ামের আগে বেশি করে ‘স্ট্রেচিং’ এবং ‘ওয়ার্ম-আপ’ করাটা আবশ্যক। কারণ বয়স বাড়ার সঙ্গে পেশি শক্ত আর হাড় নরম হতে থাকে। তাই শরীরের নমনীয়তা ও নড়াচড়ার স্বাচ্ছন্দ্য আনতে স্ট্রেচিং ও ওয়ার্ম-আপের প্রতি বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে। পেশির নমনীয় ভাব আর শরীরে রক্তসঞ্চালন ভালো রাখতে ব্যায়ামের সময় ‘ফোম রোলার’ ব্যবহার করতে পারেন।

বাড়তি শক্তিবর্ধক ব্যায়াম

বয়স বাড়ার সঙ্গে পেশির ভার কমতে থাকে, ফলে পেশি সরু হতে থাকে, বিপাকের হার কমতে থাকে। তাই পেশি বাড়াতে বুকডন, উঠবস, ঘাড়ের ব্যায়াম ইত্যাদি সাধারণ শরীরচর্চা দিয়ে শুরু করতে হবে। এমন ওজন ব্যবহার করতে হবে যা শরীরের জন্য চ্যালেঞ্জিং, তবে অতিরিক্ত নয়। এতে পেশি শক্তিশালী হবে, ক্যালরিও পুড়বে।

তীব্রতা কমাতে

ব্যায়ামের সময় ব্যথা অনুভূত হলে বুঝতে হবে সেটা শরীরের জন্য অতিরিক্ত হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে কার্ডিও ব্যায়ামের রুটিনের বদলে হাঁটাহাঁটি, সাঁতার কাটা ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যায়াম হালকা করে নিতে পারেন। এ বয়সে পেশি ও হাড়ের ওপর বাড়তি চাপ দেওয়া যাবে না।

ভারসাম্য বাড়ান

ব্যায়াম করতে গিয়ে শরীরের ভারসাম্য হারানো এই বয়সে খুবই স্বাভাবিক। এ জন্য চাই শরীরের ভারসাম্য বজার রাখার ব্যায়াম। ‘পিলাটেস’, ‘তাই চি’ ইত্যাদি অনুশীলনের মাধ্যমে শরীরের ভারসাম্য এবং নড়াচড়ার ক্ষমতা বাড়াতে পারেন।

পর্যাপ্ত বিশ্রাম

ব্যায়ামের পাশাপাশি বিশ্রাম ও পর‌্যাপ্ত ঘুমও এই বয়সে অত্যন্ত জরুরি। কারণ ঘুমের সময়ে শরীর নিজেকে মেরামত করে পরবর্তী দিনের জন্য। প্রতিদিন শরীরকে সাত থেকে আট ঘণ্টা বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ দিন।

২০ মিনিটের চক্র

প্রতিদিন ২০ মিনিট শারীরিক পরিশ্রম হয় এ রকম কাজ করুন। যেমন ১০ মিনিট শারীরিক অঙ্গভঙ্গির অনুশীলন করুন, দুপুরের খাবারের পর ১০ মিনিট হাঁটাহাঁটি, ১০ মিনিট বাগানে কাজ করা ইত্যাদি। এতে আপনার শরীর ও মন চাঙা থাকবে।

মনের প্রশান্তি

মনকে সুস্থির বা প্রশান্ত রাখতে নিয়মিত ধ্যান বা মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা যোগ অনুশীলন করতে পারেন। এতে আপনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সমস্যা সমাধান অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে।

আর্থিক পরিকল্পনা

নিজেকে সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখতে গিয়ে অর্থের প্রসঙ্গ চলেই আসে। ঘরোয়াভাবে স্বল্প খরচে নিজ উদ্যোগে কাজগুলো করা যায়। যেমন আপনি টিভি-রেডিও স্টেশন থেকে স্বাস্থ্যবিষয়ক পরামর্শ-ব্যায়াম অনুসরণ করতে পারেন। মেডিটেশনের জন্য ইউটিউব আপনাকে সাহায্য করতে পারে, বাজারে এ-সংক্রান্ত সিডিও কিনতে পাওয়া যায়। বাস্তব সত্য হলো-হাঁটাহাঁটি, জগিং, নাচ এসবের জন্য বিশেষ কোনো সামগ্রী দরকার হয় না।

বিশ্রাম

সুস্থ ও কর্মক্ষম থাকতে বিশ্রাম ও ঘুমেরও প্রয়োজন আছে, যা আপনার মন ও মস্তিষ্ককে পুনরায় সচল রাখতে সহায়তা করে। মাঝেমধ্যে কাজে বিরতি নিন। ছুটিতে বেড়াতে যান। এগুলো আপনার ফিটনেস ধরে রাখতে সহায়ক হবে।

স্বাস্থ্যপরীক্ষা

নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করানোর অভ্যাস গড়তে হবে। আপনার সার্বিক স্বাস্থ্য জেন্ডার, বংশের প্রভাব, ব্যক্তিগত বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে কোন পরীক্ষাগুলো করতে হবে।

খাদ্যাভ্যাস

এই বয়সে খাবারে প্রচুর আঁশ থাকা চাই। এতে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকবে, মলত্যাগ নিয়মিত হবে, স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় থাকবে এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

কার্ডিও ব্যায়াম

চল্লিশে পৌঁছানোর পর সপ্তাহ তিন দিন কমপক্ষে আধা ঘণ্টা কার্ডিও ব্যায়াম করতে হবে। তবে যেকোনো ব্যায়াম শুরু করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ সেই ব্যায়াম আপনার জন্য নিরাপদ কি না তা নিশ্চিত হতে হবে।

পরিমাপ নিয়ন্ত্রণ

রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, রক্তে শর্করার মাত্রা এবং ‘ট্রাইগ্লিসেরাইডস’য়ের মাত্রার দিকে সতর্ক নজর রাখতে হবে। সেই সঙ্গে কোমরের মাপ, বডি ম্যাস ইনডেক্স এবং ওজন নিয়েও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এই পরিমাপে গরমিল দেখা দিলে তা হতে পারে মারাত্মক কোনো রোগের লক্ষণ।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button