বিনোদন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অতি ব্যবহারের মাশুল দিলেন কিম

এ বি এন এ : ফ্রান্সের প্যারিসে কিম কারদাশিয়ানের ভাড়া করা অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি ও হাত-পা বেঁধে ডাকাতির খবরে গোটা বিশ্বে হৈচৈ পড়ে গেছে। রোববার (২ অক্টোবর) দিবাগত রাত আড়াইটায় সংঘটিত ডাকাতির পেছনে তার টুইটার, ইনস্টাগ্রাম ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অতি ব্যবহারের কুফলই সামনে টেনে আনছে। এসবের মাধ্যমে তিনি নিজেই নিজের জন্য ফাঁদ তৈরি করেছেন বলে মন্তব্য নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের।

সার্বক্ষণিক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকার কারণে বিশ্বের সবচেয়ে দৃশ্যমান তারকা মনে করা হয় কিমকে। ইনস্টাগ্রামে তার অনুসারী ৮ কোটি ৪০ লাখ। টুইটারে সংখ্যাটা ৪ কোটি ৮০ লাখ। তারা প্রতিদিনই কিমের সবকিছুর বিবরণ জানতে পারেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। অকপটে সব জানিয়ে দিয়েই প্যারিসে নিজেকে তিনি অরক্ষিত করেছেন বলে দাবি অনেকের। এ কারণেই ডাকাতি সম্ভব হয়েছে।

সেন্টার ফর ইন্টারনেট সিকিউরিটির সহ-সভাপতি (অপারেশন্স) ব্রায়ান ক্যালকিন বলেছেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশিরভাগ মানুষ সত্যিকারের সময়সহ নিজেদের আপডেট পোস্ট করে থাকেন। এর মাধ্যমে মূলত নিজের খোঁজখবর বাইরের মানুষকে জানিয়ে দিচ্ছেন সবাই। ডাকাতির আগের সময়টাতে কিম সম্ভবত জানিয়ে দিয়েছিলেন একা আছেন।’

ডাকাতির এক ঘণ্টা আগে গোসলের পর সাদা পোশাকে একটি স্ন্যাপচ্যাট ভিডিও পোস্ট করেন কিম। এতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, ২০১৩ সালে কানইয়ে ওয়েস্টের দেওয়া ১৫ ক্যারেট হীরা দিয়ে বানানো বাগদানের আংটি পরে আছেন তিনি। কয়েকদিন আগে ইনস্টাগ্রামে ৩৫ বছর বয়সী এই তারকা জানান, আংটিটির মূল্য ৩০ লাখ মার্কিন ডলার। প্যারিস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহাটানে নিজের অ্যাপার্টমেন্টে ফেরার সময় তার অনামিকায় সেটা দেখা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, ডাকাতদের লুট করা অলঙ্কারের মধ্যে এটাও ছিলো।

নিউইয়র্ক ফ্যাশন উইকে কিম-কানইয়ে দম্পতির দেহরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করা স্টিভ স্ট্যানালিস মনে করেন, এ ঘটনার জন্য কারদাশিয়ান নিজেই দায়ী! তিনি নিজেই নাকি নিজের বিপদ ডেকে এনেছেন। সংবাদমাধ্যমকে স্টিভ বলেছেন, “সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও স্ন্যাপচ্যাটই তার এমন সর্বনাশের কারণ। তিনি যখন পোস্ট করেন, ‘আমি এখানে। এই যে ৫০ লাখ ডলার দিয়ে কেনা আংটি পরেছি। এখন এখানে যাচ্ছি’, এর মানে হলো তিনি ডাকাতির জন্য অন্যদের আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন!”

ফ্যাশন শোতে যাওয়ার কথা জানানো, হীরে ব্যবহারের সেলফি পোস্ট করা, স্ন্যাপচ্যাটে পরিবারের সঙ্গে আলাপ তুলে ধরা- সব মিলিয়ে প্যারিসে অবস্থানের প্রতিটি দিনের যাবতীয় তথ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিয়েছেন কিম। বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে ডাকাতদলের হাতে অস্ত্রের মুখে জিম্মি হওয়ার ঘণ্টাখানেক আগ পর্যন্ত এসব চলছিলো। এ ঘটনায় তার ১ কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার লুট হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমই কিমের সব পদক্ষেপের বিজ্ঞাপন হিসেবে কাজ করেছে। ব্যালেনসিয়াগা, বালমেই ও গিভেন্সির ফ্যাশন শোর জন্য প্রস্তুতি হিসেবে ফেসিয়াল করার বিভিন্ন ছবি তিনি পোস্ট করেছেন। এ ছাড়া ফুটপাতে দুই বোনের সঙ্গে হাঁটার ছবিও দিয়েছেন।

রিয়েলিটি শো ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিয়মিত জীবনের খুঁটিনাটি তুলে ধরায় কয়েকজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী উপহাস করছেন কিমকে। তবে তারকারা সমর্থন জানিয়েছেন তাকে। টক শো উপস্থাপক জেমস কর্ডেন টুইটারে বলেন, ‘মনে রাখা দরকার তিনি একজন মা, কন্যা, স্ত্রী ও বন্ধু। ভালো ব্যবহার করুন অথবা চুপ থাকুন।’

বোস্টনের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের প্রধান রবার্ট সিসিলিয়ানো বলেন, ‘আমরা খুব সহজে অন্যদেরকে নিজেদের প্রতিটি পদক্ষেপ জানার সুযোগ করে দিচ্ছি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এটা চরম দায়িত্বহীনতা। এর মাধ্যমে চুরি-ডাকাতিকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মানুষকে নিজেদের সম্পর্কিত সীমিত তথ্য জানানোর পরামর্শ দিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। বিশেষ করে বেড়ানোর জায়গা ও ব্যয়বহুল জিনিসপত্রের কথা না জানালেই ভালো। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো মোবাইল ফোনের অবস্থান জানানোর অপশন চালু রাখা এবং ছবি ও ভিডিও পোস্ট করা।

সেন্টার ফর ইন্টারনেট সিকিউরিটির সহ-সভাপতি (অপারেশন্স) ব্রায়ান ক্যালকিন আরও বলেন, ‘এখন সব আধুনিক স্মার্টফোনে পরিপূর্ণ জিপিএস ক্ষমতা আছে যার মাধ্যমে ১০০ ফুটের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি কোথায় আছেন তা জানা যায়।’

এদিকে প্যারিসের কোন বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্টে কিম উঠেছিলেন, তা ডাকাতরা কীভাবে জেনেছে তা বের করতে তাদেরকে হন্যে হয়ে খুঁজছে পুলিশ। তাদের দাবি, কিমের চেনাজানা একদল মানুষই এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button