এবিএনএ : স্কুল থেকে শিশুরা জীবনের দিকনির্দেশনা পেয়ে থাকে। প্রয়োজনীয় বিভিন্ন নিয়মকানুন তারা এখান থেকে রপ্ত করে। তাদের যে শুধু ভালো অভ্যাস গড়ে ওঠে তা না, কিছু বদভ্যাসও তাদেরকে প্রভাবিত করে।
এসব বদভ্যাস তারা সাধারণত সহপাঠীদের কাছ থেকে শেখে। তবে অন্যান্য মাধ্যম বা বিষয়কেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। স্কুলে শিশুরা যেসব বদভ্যাসে অভ্যস্ত হতে পারে সেসব সম্পর্কে এ প্রতিবেদনে আলোকপাত করা হলো।
১. অন্যের সম্পর্কে নিন্দা
আমাদের সংস্কৃতিতে গল্পগুজব করাটা দুর্নিবার অবসর বিনোদনে রূপ নিয়েছে। কিন্তু কারো অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে হীনজাত উদ্দেশ্যে কথা বলাটা শুধু অভদ্রতাই নয়, ক্ষতিকরও বটে। তাই আপনি যদি শুনেন আপনার বাচ্চা ক্লাসমেট সম্পর্কে নিন্দা করছে তাহলে তা থামানোর চেষ্টা করুন। অন্যের সম্পর্কে বা সঙ্গে কিভাবে সম্মানের সঙ্গে কথা বলতে হয় তা শিশুকে শেখানো গুরুত্বপূর্ণ। আপনার শিশুকে বোঝান পরচর্চা কেন অসম্মানের ও কেন তা ক্ষতিকর। তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন কেউ তাদের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করলে কষ্ট পাবে কিনা? যদি পেয়ে থাকে তাহলে যাদের সম্পর্কে বাজে কথা বলছে তারা কি কষ্ট পাবে না?
২. নখ কামড়ানো ও অন্যান্য স্নায়ুচাপজনিত অভ্যাস
স্কুলে যাওয়াটা অনেক শিশুর ক্ষেত্রে অবিশ্বাস্যভাবে উদ্বেগ উদ্দীপকের বিষয় হতে পারে। বিশেষ করে তারা স্নায়বিক দুর্বলতায় ভোগে। তাই আপনার বাচ্চার মধ্যে অতি উদ্বেগের কোনো উপসর্গ আছে কিনা দেখা দরকার। নখ কামড়ানো, চুল টানা, ঠোঁট কামড়ানো, বৃদ্ধাঙ্গুল চুষা- এসব উপসর্গ উদ্ধিগ্নতার কারণে দেখা দিতে পারে। ড. অ্যালিনর মিটজনার বলেন, আপনার বাচ্চা যদি উদ্বিগ্নতায় ভোগে তাহলে শুধু বলবেন না, ‘চিন্তা করো না, তুমি ঠিক আছো’। তিনি বলেন, তাদের অনুভূতিসমূহ বাস্তব। তাদের জানানো উচিত এরকম অনুভূতি থাকা স্বাভাবিক। তাদেরকে কথা বলতে দিন এবং ইতিবাচক সমাধানের ওপর গুরুত্বারোপ করুন।
৩. প্রযুক্তি আসক্তি
মিশিগানের শিশু মনস্তাত্ত্বিক নিকোলে বুরকেনস বলেন, অনেক স্কুল অসাবধানবশত স্মার্টফোন এবং ট্যাবলেটের প্রতি কচি বয়সে আসক্ত করে তোলে। তিনি বলেন, অনেক স্কুল ক্লাসে ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারের পাশাপাশি লাঞ্চ এবং অবকাশে ব্যক্তিগত ডিভাইস ব্যবহারের অনুমতি দেয়। অনেক শিশু ক্লাসের বাইরে প্রায় সময় ডিভাইস নিয়ে ব্যস্ত থাকে। তারা ভিডিও গেমস খেলে বা টিভি দেখে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটায়। তবে এসব সমাধান করা কঠিন নয়। প্রযুক্তির প্রতি বাচ্চার আসক্তি কমিয়ে ফেলুন বা তাদেরকে কিছু সীমাবদ্ধতায় রাখুন। তাদেরকে স্কুলে ব্যক্তিগত ডিভাইস নিতে দিবেন না। ঘরে টিভি দেখা বা স্ক্রিন উপভোগের ক্ষেত্রে কিছু নিয়মকানুন ঠিক করে দিন।
৪. অনবরত ঘ্যানঘেনানি
স্কুলের অনেক বিষয় নিয়ে বাচ্চারা ঘরে ঘ্যানঘ্যান করে। হোমওয়ার্ক, বাস, শিক্ষক কিংবা ক্যাফেটেরিয়া নিয়ে তারা অভিযোগ করে। কিছু অসুবিধার কারণে তারা এমনটা করে থাকে। তাদের এসব ঘ্যানঘেনানি বিরক্তির উদ্রেক করে এবং অনেক মা-বাবা তর্কে লিপ্ত হয়ে তা থামাতে চায়। ড. বুরকেনসের মতে, এসব থামানোর ভালো কৌশল হল অভিযোগে কান না দেওয়া। তিনি বলেন, ‘শিশুরা অভিযোগের প্রত্যুত্তর যত কম পাবে তারা তত কম অভিযোগ করবে।’ কিন্তু ঘ্যানঘেনানি অব্যাহত থাকলে কতটা নেতিবাচক মন্তব্য করছে তা ট্র্যাকিং করুন এবং তা কমানোর জন্য লক্ষ্য ঠিক করুন।
৫. অত্যধিক জাঙ্ক ফুড খাওয়া
ঘরে আপনি বাচ্চার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার ও স্ন্যাকস তৈরি করেন। কিন্তু স্কুলে স্বাস্থ্যসম্মত খাবার পাওয়া যায় না বললেই চলে। সেখানে বাচ্চারা চিপস, বিভিন্ন রকম ক্যান্ডি, সিঙাড়া, সমুচা, পিৎজা ও অন্যান্য জাঙ্ক ফুড খেয়ে থাকে। তারা এসব খাবারে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তাদের খাবার নির্বাচন নিম্নমানের হয়ে যাবে এবং তারা ঘরেও এসব খাবারের আবদার করবে। তাদের আবদারকে ঠান্ডা মাথায় ও কৌশলে এড়িয়ে যান। নানাপ্রকার জাঙ্ক ফুড মস্তিষ্কে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে এবং স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটাতে পারে। তাই বাসায় যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যসম্মত ও পুষ্টিকর খাবার পরিবেশন করুন।
৬. অশ্লীল শব্দ
স্কুলে পাঠ্যপুস্তকের শব্দ তালিকার বাইরে কয়েকটি অশ্লীল শব্দ শিখে না এমন শিশু পাওয়া দুর্লভ। শিশু বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কয়েকটি অশ্লীল শব্দ শিখে থাকে। এসব সহ্য করার কোনো মানে হয় না। এসব বলা থেকে তাদের বিরত রাখুন। যখন তারা অশ্লীল শব্দ উচ্চারণ করবে তখন কৌশল খাটিয়ে থামানোর চেষ্টা করুন। এ প্রসঙ্গে ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত শিকো সেন্টার ফর কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপির ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট জোয়েল মিন্ডেন বলেন, ‘শান্ত থাকুন, তাদেরকে জিজ্ঞেস করুন তারা শব্দটি কোথায় শিখেছে এবং কেন তারা শব্দটি ব্যবহার করছে।’ তিনি বলেন, তাদের ব্যাখ্যা শুনে একই অনুভূতি ভিন্ন শব্দে প্রকাশে সাহায্য করুন। অযৌক্তিক শাস্তি দিবেন না, যেমন- অশ্লীল শব্দ বললে সাবান দিয়ে মুখ ধুয়ে দেওয়া। এরকম শাস্তি তাদের মধ্যে রাগের বিস্তার ঘটাতে পারে এবং যে শব্দের জন্য শাস্তি দিলেন তা বেশি বেশি বলতে পারে।
৭. পরীক্ষায় প্রতারণা
পরীক্ষায় প্রতারণার আশ্রয় নেওয়াকে ক্ল্যাসিক ব্যাড বিহেভিয়ার বলা হয়। কিন্তু বিভিন্ন কারণে শিশুরা তা করে থাকে, যেমন- পরীক্ষা সম্পর্কে উদ্বেগ, বিষয়বস্তু না বুঝা এবং সাহায্য চাইতে অত্যধিক ভয় পাওয়া। তাদেরকে প্রতারণামূলক ফলাফলের অভিজ্ঞতা নিতে দিন, যেমন- কোনো টেস্টে অনুত্তীর্ণ হওয়া বা কোনো প্রজেক্ট পুনরায় করা। কিন্তু এখানেই থেমে থাকবেন না। তাদের শিক্ষকের সঙ্গে তাদের ব্যাপারে কথা বলুন এবং পরামর্শ করুন। আপনার বাচ্চাকে ভালো অভ্যাসে উৎসাহিত করার জন্য তাদের সমস্যাকে গুরুত্ব দিন ও সমস্যার সমাধান করুন। তারা কনফিউজড ও আপসেট হলে তা থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজে দিন।
৮. বর্ণবাদী রসিকতা
শিশুরা স্কুলে সামজিক নিয়মকানুন শিখে এবং মাঝে মাঝে তারা বিব্রতকর বা অসামাজিক কিছু বিষয় শিখে ফেলে যা গোঁড়ামিপূর্ণ, বর্ণবাদী, যৌন বিষয়ক বা অন্যান্য অনুপযুক্ত ভাষা হতে পারে। তাদের মুখে এসব শুনে আপনি হয়তো মর্মাহত হতে পারেন, এমনকি রাগও করতে পারেন। কিন্তু মাথা ঠান্ডা রাখুন। তাদেরকে উত্তপ্ত কথা না বলে এটাকে পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ বা আচরণ শিখানোর সুযোগ হিসেবে কাজে লাগান। কাউকে নিয়ে ব্যঙ্গ করলে সে কেমন কষ্ট পায় তা পূর্ণাঙ্গভাবে ব্যাখ্যা করুন। তারপর তাদের যা শিখাতে চান তার ওপর গুরুত্ব দিন। পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ এবং ভিন্ন মতের প্রতি শ্রদ্ধা বিষয়ে তাদেরকে জ্ঞান দিন। তা স্বত্ত্বেও তারা বদভ্যাস ত্যাগ করতে না পারলে শাস্তি দিতে পারেন এবং খারাপ সঙ্গীর সঙ্গে মেলামেশা বা মিডিয়ার অপব্যবহার রোধে খেয়াল রাখুন।
৯. অন্য শিশুদের কটুক্তি করা
বাচ্চা নীচ মনমানসিকতার হোক এটা কেউ চায় না। কিন্তু বাস্তবতা এই যে, শিশুরা বিভিন্ন উপলক্ষ্যে অন্য শিশুদের কটুক্তি করে। ‘আমার বাচ্চা এমন নয়’ বা ‘আমার বাচ্চা করেনি’ এমন কথা না বলে বাচ্চার বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করুন এবং এ বিষয়ে বাচ্চার সঙ্গে কথা বলুন। ড. মিন্ডেন বলেন, ‘মাঝে মাঝে অন্য শিশুদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েও তারা কটুক্তি করতে পারে। বাচ্চাকে কটুক্তির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বোঝান, এমনকি তা সহপাঠীদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে করলেও।’ তিনি আরো বলেন, এ ধরনের অভ্যাস বন্ধ করার ব্যবস্থা নিন। বাচ্চাকে বলুন- যদি টিজ অব্যাহত রাখো তাহলে এটা সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে এবং তোমার শিক্ষককে এ বিষয়ে বলা প্রয়োজন হবে। কখনো কখনো টিজিং সীমারেখা অতিক্রম করে মারাত্মক জটিলতার সৃষ্টি করে। তাই আপনার বাচ্চাকে এ অভ্যাসের আওতামুক্ত রাখুন।
১০. পর্নো দেখা
নোভাস প্রজেক্টের একটি পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে, ৮ থেকে ১১ বছরের শিশুরা স্মার্টফোন ও ট্যাবের সংস্পর্শে প্রথম পর্নের সঙ্গে পরিচিত হয়। স্কুলে অন্যের দেখাদেখি বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আপনার বাচ্চা পর্নো দেখতে পারে। শিশুর সেক্সুয়্যাল ডেভেলপমেন্টের জন্য ও যৌন নিরাপত্তার খাতিরে পর্নো দেখা বন্ধ করা উচিত। ড. মিন্ডেন বলেন, যদি জানেন আপনার বাচ্চাকে কে পর্নো দেখিয়েছে তাহলে জরুরি ভিত্তিতে স্কুল বা অন্যান্য পিতামাতার সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তিনি পরামর্শ দেন, শান্ত হোন, বাচ্চাকে বলুন যে পর্নোগ্রাফি শিশুদের জন্য নয় এবং এসব দেখলে ক্ষতি হতে পারে। তারা যা দেখেছে তা নিয়ে কোনো প্রশ্ন আছে কিনা জিজ্ঞেস করুন। ড. মিন্ডেন যোগ করেন, যৌনতা সম্পর্কে তারা আপনার কাছ থেকে যা জানবে তা-ই গুরুত্বপূর্ণ, বন্ধুদের কাছ থেকে যা জানে তা নয়। আপনি বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে তাদেরকে পর্নো দেখা থেকে রক্ষা করতে পারেন।
১১. নিজেকে বিভিন্ন নামে ডাকা
আপনার আদরের বাচ্চা যখন নিজেকে ডাম বা হাবা বা বোবা, আগলি বা বিশ্রী বা কুৎসিত, স্টুপিড বা মূর্খ বা বেকুব, ফ্যাট বা মোটা বা মোটকি এবং অন্য কোনো হাস্যকর বা সমালোচনামূলক নামে ডাকবে তখন হয়তো আপনার বুকটা ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে। শিশুরা স্কুলজীবনের শুরু থেকেই পারফেকশনিস্ট বা সেনসিটিভ আচরণ করলে তাদের বিভিন্ন নাম ছড়িয়ে যায়। তাদের দুর্বলতা এবং শারীরিক গঠনের ওপর ভিত্তি করেও নানারকম নাম ছড়িয়ে পড়ে। বাচ্চা যদি এসব নামে নিজেকে সম্বোধন করে তাহলে তাকে ইতিবাচক নামে ডাকুন বা ভালো মন্তব্য শুনান, যেমন- তুমি সত্যিই সুন্দর/স্মার্ট/গ্রেট ইত্যাদি। এর ফলে তাদের মনের উদ্বেগ দূর হবে। ড. মিন্ডেন পরামর্শ দেন, নিজেকে অন্যের সঙ্গে তুলনা না করতে তাদেরকে উৎসাহ দিন, তাদের নেতিবাচক চিন্তাকে মিথ্যা প্রমাণের জন্য উপায় খুঁজুন এবং ফলাফলের চেয়ে প্রচেষ্টাকে গুরুত্ব দিন, তারা যা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না তাতেও গুরুত্বারোপ করুন। সফল হতে পারে এমন কাজে তাদেরকে যুক্ত করুন।
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.