খেলাধুলালিড নিউজ

রুদ্ধশ্বাস জয়ে ফাইনালে বাংলাদেশ

এবিএনএ : মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে অগ্নিস্ফুলিঙ্গ হয়ে বলটা স্কয়ার লেগ দিয়ে উড়ে গেছে সীমানার বাইরে। বুনো উল্লাস, বাঘের গর্জনে কেঁপেছে প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম। ডানা মেলে উড়তে শুরু করেছেন মাহমুদউল্লাহ। যার হাতে বাংলাদেশের জিয়নকাঠি। মাহমুদউল্লাহর মতোই হয়তো দুই হাজার কিলোমিটার দূরে বাংলার ঘরে ঘরে স্বপ্নিল জয়ের আবেশে ডানা মেলে উড়েছেন কোটি কোটি ক্রিকেটপ্রেমী।
বীররসে পূর্ণ মাহমদুউল্লাহর ব্যাট রূপকথার ন্যায় অসামান্য এক জয় এনে দিয়েছে বাংলাদেশকে। গতকাল স্নায়ুক্ষয়ী শেষ ওভারের রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কাকে দুই উইকেটে হারিয়ে নিদাহাস কাপের ফাইনালে উঠে গেছে বাংলাদেশ। আর তখনই শ্মশান নীরবতায় ঢেকে গেছে প্রেমাদাসা স্টেডিয়াম।
প্রথমে ব্যাট করে সাত উইকেটে ১৫৯ রান করেছিল শ্রীলঙ্কা। জবাবে অবিশ্বাস্য সব নাটকীয়তা ভরা ম্যাচে মাহমুদউল্লাহর অকল্পনীয় ব্যাটিংয়ে এক বল আগে আট উইকেটে ১৬০ রান তুলে ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ। ১৮ বলে ইতিহাস গড়া অপরাজিত ৪৩ রানের (৩ চার, ২ ছয়) ইনিংস খেলে মাহমুদউল্লাহ ম্যাচ সেরা হন।
পেন্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচে বাংলাদেশ ব্যাকফুটেই ছিল শেষ দিকে। ১২ বলে ২৩ রানের সমীকরণটা সহজ করেন মাহমুদউল্লাহ। ১৯তম ওভারে তোলেন ১১ রান। কিন্তু শেষ বলে রানআউট হন মিরাজ (০)। ৬ বলে ১২ রানের স্নায়ুর লড়াইয়েও দুই বলে আসেনি কোনো রান। উল্টো দ্বিতীয় বলে মুস্তাফিজ রানআউট হন। ওই বলটাই মুস্তাফিজের মাথার ওপর দিয়ে গিয়েছিল। আম্পায়ার নো বল দিয়েছিলেন বলেই দাবি করেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু পরে আম্পায়ার নো বলের সিদ্ধান্ত তুলে নেন।
তাতেই বাধে বিপত্তি। বাংলাদেশের অধিনায়ক সাকিব এগিয়ে আসেন। আসে গোটা দল। একসময় সাকিব বের হয়ে আসতে বলেন মাহমুদউল্লাহ-রুবেলকে। পরে পরিস্থিতি ঠিক হয়ে আসে।
চার বলে ১২ রানের চাপে বাংলাদেশ। দুঃসাহসিক যোদ্ধা হয়ে বুক চিতিয়ে লড়েন মাহমুদউল্লাহ। উদানার করা তৃতীয় বলে চার, চতুর্থ বলে দুই ও পঞ্চম বলে বিশাল ছক্কায় বাংলাদেশকে এনে দেন রুদ্ধশ্বাস জয় এবং নিদাহাস কাপের ফাইনালের টিকিট। মাহমুদউল্লাহ ১৮ বলে অপরাজিত ৪১ রান করেন। আগামীকাল ভারতের বিরুদ্ধে ট্রফির জন্য লড়বে বাংলাদেশ।
রান তাড়া করতে নেমে দলীয় ১১ রানে লিটন দাস (০) ফিরেন সাজঘরে। তিন নম্বরে নেমে দুটি চার দিয়ে শুরু করা সাব্বির রহমান ১৩ রান করে আউট হন। দুজনই আকিলা ধনঞ্জয়ার শিকার হন। তৃতীয় উইকেটে তামিম-মুশফিকের ব্যাটে জয়ের পথে এগুতে থাকে বাংলাদেশ। তাদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই চলে এসেছিল। ১৩তম ওভারে ৬৪ রান যোগ করে বিচ্ছিন্ন হয় এ জুটি। ২৮ রান করে মুশফিক ধরা পড়েন কভারে।
পঞ্চম হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম ৪১ বলে। কিন্তু হাফ সেঞ্চুরির পরপরই গুণাথিলাকার নিরীহ বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরেন তিনি। ৪২ বলে ৫০ রান করেন এ ওপেনার। দলীয় ১০৯ রানে সৌম্যও (১০) সাজঘরের পথ ধরেন। হঠাত্ই ১২ রানে তিন উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। তাতেই এলোমেলো হয়ে পড়া দলটা আবার কক্ষপথে ফিরতে সংগ্রাম করছিল। ক্রমেই বেড়েছে রানের চাপ।
ভরসা হয়ে ছিলেন মাহমুদউল্লাহ-সাকিব। তাদের ২৮ রানের জুটি আশাও জাগিয়েছিল। কিন্তু ১৮তম ওভারে সাকিব (৭) ফাইন লেগে ধরা পড়েন। শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহর এক নৈপুণ্যে ম্যাচ জিতে যায় বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার ধনঞ্জয়া দুটি উইকেট নেন।
এর আগে একাদশে নিয়মিত অধিনায়ক সাকিবকে ফিরে পেয়ে বল হাতে দুর্দান্ত শুরু পেয়েছিল বাংলাদেশ। মাঠে উজ্জীবিত ও পুরনো বাংলাদেশের ছবিই দেখা গিয়েছিল। ৪১ রানেই পাঁচ উইকেট তুলে নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে বিষম চাপে ফেলেছিল টাইগাররা। কিন্তু শুরুর সেই চাপ ধরে রাখতে পারেননি বোলাররা। ১০ ওভারে পাঁচ উইকেটে শ্রীলঙ্কার রান ছিল ৫৩। কিন্তু শেষ ১০ ওভারে দুই উইকেটে ১০৬ রান যোগ করে তারা।
কুশল পেরেরা ও থিসারা পেরেরা ৯৭ রানের জুটিতে ম্যাচে ফিরে লঙ্কানরা। তাদের জোড়া হাফ সেঞ্চুরিতেই পেয়ে যায় লড়াইয়ের পুঁজি। ১৯তম ওভারে কুশল পেরেরাকে আউট করে ব্রেক থ্রু এনে দেন সৌম্য। কুশল পেরেরা ৪০ বলে ৬১ রান (৭ চার, ১ ছয়) করেন। ব্যাট হাতে ঝড় তুলেছিলেন লঙ্কান অধিনায়ক থিসারা পেরেরা। শেষ ওভারে রুবেলের শিকার হওয়ার আগে তিনি ৩৭ বলে ৫৮ রান (৩ চার, ৩ ছয়) করেন।
শুরুতেই প্রায় দুই মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেই উইকেটের দেখা পান সাকিব। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে গুণাথিলাকা (৪) ক্যাচ দেন সাব্বিরের হাতে। ইনফর্ম কুশল মেন্ডিস (১১) ফিরেন মুস্তাফিজের বলে। ষষ্ঠ ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে বসে স্বাগতিকরা। দ্বিতীয় বলে উপুল থারাঙ্গা (৫) রান আউট হন। চতুর্থ বলে দারুণ অফকাটারে মুস্তাফিজ তুলে নেন দাসুন শানাকার (০) উইকেট। জীবন মেন্ডিসকে (৩) আউট করে চাপটা ঘনীভূত করেছিলেন মিরাজ। কিন্তু কুশল ও থিসারা পেরেরার ব্যাটিং দৃঢ়তায় লড়াইয়ে ফিরে শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের মুস্তাফিজ দুটি, সাকিব, রুবেল, মিরাজ, সৌম্য একটি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা : ২০ ওভারে ১৫৯/৭
বাংলাদেশ : ১৯.৫ ওভারে ১৬০/৮
ফল: বাংলাদেশ দুই উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা : মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button