সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের নামে রেকর্ড অর্থ জমা, এক বছরে বৃদ্ধি ২৩ গুণ!
২০২৪ সালের শেষে সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশের নামে জমা অর্থ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে


এবিএনএ: সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘সুইস ন্যাশনাল ব্যাংক (SNB)’ সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শেষে বাংলাদেশের নামে সুইস ব্যাংকে জমা অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৯ কোটি ৮২ লাখ সুইস ফ্রাঁ—বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৮,৯৭২ কোটি টাকা। যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় ২৩ গুণ বেশি।
পূর্ববর্তী বছর শেষে এই পরিমাণ ছিল মাত্র ২ কোটি ৬৪ লাখ ফ্রাঁ (প্রায় ৩৯৬ কোটি টাকা)। এ ধরনের উল্লম্ফন সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশের অর্থ জমা বিষয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই অর্থের ৯৫ শতাংশের বেশি বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর নামে রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক পূর্বেও জানিয়েছে, এই টাকা মূলত আমদানি-রপ্তানিভিত্তিক বাণিজ্য কার্যক্রমের অর্থ।
২০২৪ সালে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর পাওনা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৭ কোটি ৬৬ লাখ ফ্রাঁ, যা প্রায় ৮,৬৪৯ কোটি টাকা। ২০২৩ সালে এই অঙ্ক ছিল মাত্র ৩৫ লাখ ফ্রাঁ বা ৫২ কোটি টাকা। ফলে এক বছরে ব্যাংকগুলোর নামে অর্থের পরিমাণ বেড়েছে ১৬৫ গুণের বেশি।
ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নামে গ্রাহক আমানতের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। ২০২৩ সালে যা ছিল ১ কোটি ৪০ লাখ ফ্রাঁ, ২০২৪ সালে তা দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৬ লাখ ফ্রাঁ। অন্যদিকে, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পরিমাণ ৮৬ লাখ ফ্রাঁতে কিছুটা কমেছে।
এই হঠাৎ প্রবৃদ্ধির কারণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, ব্যাখ্যা জানার চেষ্টা চলছে, তবে এখনো অফিসিয়াল কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বিপুল অর্থের উত্স নিয়ে তদন্ত প্রয়োজন। বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “এমন রেকর্ড বৃদ্ধি শুধু বৈধ বাণিজ্যিক কার্যক্রমের ফল কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।”
তাঁর মতে, ব্যাংকিং ব্যবস্থার মাধ্যমেও অর্থ পাচার হতে পারে। বিশেষ করে ২০২৪ সালে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে বিদেশে অর্থ সরিয়ে ফেলার প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে।
সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলো আলাদাভাবে কোনো গ্রাহক বা প্রতিষ্ঠানের নাম প্রকাশ করে না। গোপনীয়তার নীতির কারণে তথ্য দেওয়া হয় সম্মিলিতভাবে। এ কারণে কার নামে কত অর্থ আছে তা স্পষ্ট নয়।
এর আগে ২০২২ সালে বাংলাদেশের নামে জমা অর্থ নেমে এসেছিল ৫ কোটি ৮৪ লাখ ফ্রাঁতে। তবে ২০২৪ সালের এই প্রবল উল্লম্ফন আবারো আলোচনায় এনেছে সুইস ব্যাংকে অর্থ পাচারের সম্ভাবনা।
ওয়াশিংটনভিত্তিক গ্লোবাল ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই)-এর মতে, বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা পাচার হয় বাণিজ্যের আড়ালে। আইসিআইজে প্রকাশিত পানামা ও প্যারাডাইস পেপারসেও একাধিক বাংলাদেশির নাম উঠে এসেছিল, যারা বিদেশে কোম্পানি খুলেছেন এবং অর্থ স্থানান্তর করেছেন।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের নামেও সুইস ব্যাংকে জমা অর্থ বেড়েছে ২০২৪ সালে, যা ৩৫০ কোটি ফ্রাঁতে পৌঁছেছে। অন্যদিকে পাকিস্তানের অর্থের পরিমাণ কমেছে। শ্রীলঙ্কা ও মিয়ানমারের ক্ষেত্রেও বেড়েছে সুইস ব্যাংকে দায়।
এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব আরও বাড়ে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শুধুমাত্র পরিসংখ্যান নয়, এর অন্তর্নিহিত কারণ উদ্ঘাটন করাই এখন সবচেয়ে জরুরি।
Share this content: