এবিএনএ: আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সবার জন্য সমান সুযোগ নেই বলে যে মন্তব্য নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার করেছেন, তা সত্য নয় বলে দাবি করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা। তিনি বলেন, মাহবুব তালুকদার সত্য কথা বলেননি। নির্বাচন অনুষ্ঠানে সামগ্রিক পরিস্থিতি ভালো রয়েছে। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় রাঙ্গামাটিতে নির্বাচন উপলক্ষে তিন পার্বত্য জেলার আইনশৃঙ্খলাবিষয়ক মতবিনিময়ে সভাপতিত্বকালে সূচনা বক্তব্য রাখেন সিইসি। সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এমন মন্তব্য করেন। রাঙ্গামাটি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইন্সটিটিউট মিলনায়তনে এ মতবিনিময়ে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী, ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, চট্টগ্রামের ডিআইজি গোলাম ফারুক, রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. শহীদুল ইসলাম, বান্দরবান জেলা প্রশাসক দাউদ উল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের দেয়া প্রশ্নের জবাবে ইসি মাহবুব তালুকদার বলেন, আমি মোটেও মনে করি না নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলে কিছু আছে। ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কথাটা এখন একটা অর্থহীন কথায় পর্যবসিত হয়েছে।’ তার এ মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জানতে চাইলে নিজের ভিন্নমতের কথা জানান নুরুল হুদা। তিনি বলেন, সবাই নিজেদের মতো প্রচার চালাচ্ছেন। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে অসুবিধা কোথায়? এ সময় তিনি আরও বলেন, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানে প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন। ‘যে কোনো মূল্যে সুষ্ঠু, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে চাই আমরা। এ জন্য যা যা করা দরকার, কমিশন সবই করবে।’ তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সবার আন্তরিকতা দরকার। এ জন্য নির্বাচনী ও আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি প্রার্থী, রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ সব মহলের সহায়তা আবশ্যক। কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তির অন্যায় প্রভাবে প্রভাবিত না হওয়ার জন্য নির্বাচনী কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশনা দেন কেএম নুরুল হুদা। তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন সমগ্র জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সংসদ, নতুন সরকার গঠন হবে। তাই রাষ্ট্র ও জাতির স্বার্থে যে কোনো মূল্যে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে হবে।
সমতলের মতো পাহাড়েও অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সুন্দর নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, দেশের অন্যান্য এলাকার চেয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং আলাদা। ‘ভৌগোলিক অবস্থান, আয়তন, মানুষের জীবনধারা, রাজনৈতিক পরিবেশ, কৃষ্টি ও সংস্কৃতিতে পার্বত্য এলাকা সম্পূর্ণ ভিন্ন।’ ‘তাই অঞ্চলটিকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। এছাড়া পার্বত্য শান্তিচুক্তির মাধ্যমে এ এলাকার সার্বিক পরিস্থিতিতে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। ফলে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বর্তমানে পাহাড়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে,’ মন্তব্য সিইসির। তিনি বলেন, নিরাপত্তা ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে এখানে সর্বদা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষ। এতে ৩০ ডিসেম্বর পার্বত্য এলাকার তিনটি সংসদীয় আসনে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। সিইসি বলেন, তিনটি পার্বত্য সংসদীয় আসনে ১১ লাখের বেশি ভোটার। এখানকার কেন্দ্রগুলোকে দুর্গম ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছি আমরা। ‘তারা যাতে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে অবাধে ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারেন, সে জন্য নির্বাচনের দিন পর্যন্ত প্রতিটি এলাকায় প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সার্বক্ষণিক উপস্থিতি নিশ্চিত থাকবে।’
নুরুল হুদা বলেন, তিনটি পার্বত্য আসনের প্রত্যেক কেন্দ্রে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হবে। ভোটারদের নিরাপত্তাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নির্বাচনের দিন প্রত্যেক কেন্দ্রে সেনাবাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্যের উপস্থিতি থাকবে। ‘পাশাপাশি প্রশাসনিক ও নির্বাচনী কর্মকর্তাসহ পুলিশ, বিজিবি, আনসার বাহিনীর পর্যাপ্ত সদস্য মোতায়েন করা হবে। এছাড়া জনবল ও নির্বাচনী মালামাল আনা নেয়ার কাজে দুর্গম কেন্দ্রগুলোতে হেলিকপ্টার ব্যবহারে সেনাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর সহায়তা ছাড়া ওইসব দুর্গম কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ সম্ভব হবে না। কয়েক মাস আগে অনুষ্ঠিত জেলার নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ, সুন্দর ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে বলে উল্লেখ করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরলস প্রচেষ্টায় তা সম্ভব হয়েছে। ‘৩০ ডিসেম্বর তিনটি পার্বত্য সংসদীয় আসনেও সবার আন্তরিক ও নিরলস প্রচেষ্টায় সে রকম নির্বাচন উপহার চাই।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, পাহাড়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান অব্যাহত থাকবে। এবার ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কেন্দ্রে কেউ ভোট ডাকাতির সুযোগ পাবে না। নির্বাচনের দিন মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু থাকবে। স্বাগত বক্তব্যে চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার আবদুল মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক চেষ্টায় ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সই হওয়া পার্বত্য শান্তিচুক্তির ফলে পাহাড়ে অনেক অভাব, অভিযোগ, অনুযোগ, সমস্যা দূর হয়েছে। তিনি বলেন, পার্বত্য শান্তিচুক্তির ৭২ ধারার মধ্যে ৪৮টি বাস্তবায়িত হয়েছে। বর্তমানে পাহাড়ের পরিস্থিতি ভালো। ‘পরিস্থিতি স্বাভাবিক, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে সেনাবাহিনী। এসব বিষয় ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তিনটি পার্বত্য সংসদীয় আসনে বিরাট সহায়ক হবে।’ আব্দুল মান্নান বলেন, তিনটি পার্বত্য সংসদীয় আসনসহ চট্টগ্রাম বিভাগে ৩০ ডিসেম্বর সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দিতে প্রস্তুত আমরা।
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.