এবিএনএ : তীব্র বিতর্ক, প্রতিবাদ আর সমর্থকদের উচ্ছ্বাসের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ডোনাল্ড জে ট্রাম্প। গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় বাইবেলে হাত রেখে শপথ নেন তিনি। ৩৫ শব্দের এই শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস।
২০১৫ সালের ১৫ জুন যেদিন কোটিপতি এই ব্যবসায়ী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করেন, খুব কম মানুষই ট্রাম্পকে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ও ধনী দেশটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে কল্পনা করতে পেরেছিল। সেই অসম্ভবকে মিথ্যা প্রমাণ করে, সব পেশাদার রাজনীতিক ও পণ্ডিতের ভবিষ্যদ্বাণী ভুলের তালিকায় ফেলে নিজ দলের ১৬ জন বাঘা বাঘা প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী এবং সর্বশেষ ডেমোক্রেটিক পার্টির হিলারি ক্লিনটনকে পরাস্ত করে হোয়াইট হাউসের চাবিটি ছিনিয়ে নেন ট্রাম্প।
মেঘলা আকাশ ও ঝিরিঝিরি বৃষ্টির ভেতর তাঁর পারিবারিক বাইবেলে ও প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকনের ব্যবহৃত একটি বাইবেলে হাত রেখে নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন ট্রাম্প। তাঁর পরপরই শপথ নেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স। তাঁর শপথ পরিচালনা করেন বিচারপতি ক্যারেন্সটমাস। বিচারপতি ক্যারেন্সটমাস প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান, যিনি প্রেসিডেন্ট বা ভাইস প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব পেলেন।
শপথ গ্রহণ শেষে অভিষেক ভাষণে ট্রাম্প ঘোষণা করেন, এখন থেকে তাঁর প্রশাসন শুধু ‘সবার আগে আমেরিকা’ এই দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা পরিচালিত হবে। এখন থেকে প্রতিটি সিদ্ধান্ত, তা অভ্যন্তরীণ বা পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক হোক, যুক্তরাষ্ট্র এবং এর নাগরিকদের স্বার্থ মাথায় রেখে গৃহীত হবে। তিনি বলেন, ‘আমার সরকারের নীতি হবে দুটি—আমেরিকায় তৈরি জিনিস কেনো, আমেরিকানদের চাকরি দাও।’
ওয়াশিংটনের রাজনীতিকদের প্রতি কটাক্ষ করে ট্রাম্প বলেন, এত দিন পর্যন্ত এসব পেশাজীবী রাজনীতিক শুধু কথাই বলেছেন, কাজ করেননি। এখন থেকে সেই নিয়ম বদলে যাবে। এত দিন ওয়াশিংটনের রাজনীতিবিদেরা শুধু নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় কাজ করেছেন। এর ফলে রাজনীতিবিদেরা লাভবান হয়েছেন, কিন্তু ক্ষতির শিকার হয়েছে আমেরিকান সাধারণ মানুষ। ট্রাম্প ঘোষণা করেন, তাঁর শপথ গ্রহণের মাধ্যমে শুধু এক প্রশাসন ও এক দল থেকে অন্য প্রশাসন ও দলের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর হলো তা নয়। ‘আজ আমরা ওয়াশিংটন থেকে ক্ষমতা হস্তান্তর করে আপনাদের, দেশের মানুষের কাছে তুলে দিচ্ছি।’
দিনের শুরুতে ট্রাম্প ও তাঁর স্ত্রী মেলানিয়া ওবামা দম্পতিকে সঙ্গে নিয়ে হোয়াইট হাউসের লাগোয়া সেইন্টজনস চার্চে এক বিশেষ প্রার্থনায় মিলিত হন। এরপর সকাল সাড়ে নয়টা নাগাদ ওবামা দম্পতির সঙ্গে চা-পানের উদ্দেশ্যে ট্রাম্প দম্পতি হোয়াইট হাউসে আসেন। মাইক পেন্স ও তাঁর স্ত্রীও এই চা-পান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। সাড়ে ১০টা নাগাদ ট্রাম্প দম্পতি রওনা হন ক্যাপিটল নামে পরিচিত মার্কিন কংগ্রেস ভবনের উদ্দেশে। এখানেই শপথ পড়ানো হয়।
এরপর শুরু হয় ‘প্রেসিডেনশিয়াল প্যারেড’। ট্রাম্প দম্পতি ও তাঁদের পরিবারের অধিকাংশ সদস্য এই প্যারেডে অংশ নেন। ওয়াশিংটন পোস্ট-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প নিজে বলেছিলেন, তিনি চান উদ্বোধনী শোভাযাত্রায় ‘সামরিক বাহিনীর লক্ষণীয় উপস্থিতি’। তবে ট্যাংক ও সাঁজোয়া যানের বহর না থাকলেও বিমানবাহিনীর ২০টি যুদ্ধবিমান আকাশ দিয়ে একাধিকবার আনুষ্ঠানিকভাবে উড়ে যায়। এদিন সকালে, শপথ গ্রহণের আগেই ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের আণবিক অস্ত্রভান্ডারের গোপন কোড (নিউক্লিয়ার কোড) হাতে পান। এর ফলে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডার এখন তাঁর নিয়ন্ত্রণে।
নতুন প্রেসিডেন্টের এই শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে ওয়াশিংটন ডিসিতে গতকাল নিরাপত্তাব্যবস্থা ব্যাপক জোরদার করা হয়। হোয়াইট হাউস এবং এর আশপাশের এলাকায় ২৪ হাজার নিরাপত্তারক্ষী নিয়োজিত ছিলেন। ক্যাপিটল হিলের আশপাশের ২ দশমিক ৭ বর্গকিলোমিটার এলাকায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ট্রাম্পের শপথ উপলক্ষে ওয়াশিংটন ডিসিতে জমায়েত হওয়া আট থেকে নয় লাখ লোকের মধ্যে কয়েক লাখ বিক্ষোভকারী ছিলেন বলে মার্কিন সংবাদমাধ্যমের খবরে জানানো হয়েছে। তাঁদের অনেকেই সড়ক অবরোধের চেষ্টা করার পাশাপাশি এখনই ট্রাম্পের প্রতি অনাস্থা দিয়ে তাঁকে হটানোর দাবি জানিয়েছেন।
নতুন প্রেসিডেন্টের শপথের আগে ও পরে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক বিক্ষোভ করেছেন ট্রাম্পবিরোধীরা। ওয়াশিংটনে ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের কিছুক্ষণ আগেও সেখানকার উপশহরে কয়েক শ মানুষ বিক্ষোভ করেন। এ সময় পুলিশের গাড়ি লক্ষ্য করে পাথর ছোড়েন বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা অন্যান্য গাড়িও ভাঙচুরের চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ ৯৫ জন বিক্ষোভকারীকে আটক করে। ওয়াশিংটনের ফায়ার সার্ভিসের মুখপাত্র ভিতো মাগগিওলো বলেন, বিক্ষোভের সময় দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। ওই দুজনসহ মোট তিনজনকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রথম দিন থেকেই প্রথম বড় ধরনের আন্তর্জাতিক সংকটের সম্মুখীন হতে হচ্ছে ট্রাম্পকে। উত্তর কোরিয়া জানিয়েছে, তারা আন্তমহাদেশীয় পরমাণুবাহী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষামূলকভাবে উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজে বলেননি উত্তর কোরিয়ার এই হুমকি তিনি কীভাবে মোকাবিলা করবেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি এই দায়িত্ব পালনে পুরোপুরি প্রস্তুত কি না, সে প্রশ্নেও বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
ট্রাম্পকে নিয়ে এই উদ্বেগের কারণ, বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিধর এই দেশটির দায়িত্ব গ্রহণ করছেন যে ব্যক্তি, কোনো রকম সরকারি দায়িত্ব পালনের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা তাঁর নেই। তিনি জীবনে কোনো নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি এবং ব্যবসার বাইরে অন্য কোনো অভিজ্ঞতা নেই। সেনাবাহিনীতে দায়িত্ব পালনের কোনো অভিজ্ঞতাও তাঁর নেই। যে মন্ত্রিসভা তিনি প্রস্তাব করেছেন, তার সদস্যদের অধিকাংশ হয় কোটিপতি ব্যবসায়ী অথবা সেনাবাহিনীর সাবেক জেনারেল।
ট্রাম্পের এই দাবি সত্ত্বেও অনভিজ্ঞ এই মন্ত্রিসভা নিয়ে তিনি দেশ শাসনের জন্য প্রস্তুত কি না, সে প্রশ্নে উদ্বেগ বাড়ছে। ওবামা প্রশাসনের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের অন্যতম ফেলো নরমান এলসন ট্রাম্পের প্রস্তাবিত মন্ত্রিসভাকে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে অনভিজ্ঞ’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে সাময়িকভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য ট্রাম্প ওবামা প্রশাসনের ৫০ জন সদস্যকে তাঁদের দায়িত্বে থাকার অনুরোধ করেছেন।
ট্রাম্পের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, শুক্রবার শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা ও উৎসব শেষে নতুন প্রেসিডেন্ট একাধিক নির্বাহী নির্দেশের মাধ্যমে একাধিক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স সিএনএনকে বলেছেন, তাঁরা নির্বাচনী প্রচারে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা পূরণে বদ্ধপরিকর। ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই সে লক্ষ্যে তাঁরা ব্যবস্থা নেবেন।
জানা গেছে, নতুন প্রশাসনের বিবেচনায় রয়েছে এমন নির্বাহী নির্দেশের সংখ্যা ২০০ বা তার চেয়েও বেশি। এসবের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ‘ডাকা’ নামে পরিচিত অবৈধ অভিবাসীদের সন্তানদের অস্থায়ী বৈধতা কর্মসূচি। রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের আপত্তি সত্ত্বেও ওবামা স্বাক্ষরিত ‘ডাকা’ কর্মসূচির মাধ্যমে চাদে সাত লাখ অভিবাসী-সন্তান যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের ও শিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার বৈধ অধিকার পেয়েছে। ট্রাম্প মেক্সিকো ও কানাডার সঙ্গে স্বাক্ষরিত নাফটা বাণিজ্য চুক্তি বাতিল এবং ফেডারেল সরকারের জন্য নতুন কোনো নিয়োগ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন বলে জানা গেছে। ট্রাম্প তাঁর দায়িত্ব গ্রহণের প্রথম দিনই ওবামাকেয়ার নামে পরিচিত স্বাস্থ্যবিমা কর্মসূচি বাতিল ও তার জায়গায় একই সময়ে ভিন্ন বিমা কর্মসূচি চালু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ওবামাকেয়ার বাতিল হলে প্রায় দুই কোটি আমেরিকান তাঁদের স্বাস্থ্যবিমা হারাবেন বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
নির্বাচনী প্রচারের সময় ট্রাম্প পরিচিত ছিলেন তাঁর বিভেদাত্মক রাজনৈতিক বক্তব্যের জন্য। তবে সমালোচকদের আশ্বস্ত করতে ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বলেন, ‘সব আমেরিকানের জন্য’ প্রেসিডেন্ট হবেন তিনি। উল্লেখ্য, ৩০ লাখ ভোট কম পাওয়া সত্ত্বেও শুধু ইলেকটোরাল ভোটে এগিয়ে থাকার কারণে ট্রাম্প নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন।
ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার পরদিন থেকেই তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন প্রেসক্লাবে ট্রাম্প-সমর্থকেরা এক নৈশভোজের আয়োজন করেছিলেন। তার প্রতিবাদে ‘রিফিউজ ফ্যাসিজম’ নামের একটি সংগঠন এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করলে পুলিশ তাদের ক্লাবের কাছাকাছি যেতে বাধা দেয় এবং মরিচের স্প্রে করে।
ওয়াশিংটন পুলিশ জানিয়েছে, তারা বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন আজ শনিবারের ‘নারীদের র্যালি’ নিয়ে। একাধিক নারী সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত এই র্যালির জন্য পুলিশ দুই লাখ লোক জমায়েতের অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু পুলিশের ধারণা, এই সংখ্যা চার বা পাঁচ লাখে দাঁড়াবে।
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.