আইন ও আদালতবাংলাদেশ

‘আদালতের কর্মঘণ্টা বিচারিক কাজে ব্যয় করুন’ জেলা জজদের প্রধান বিচারপতি

এবিএনএ : আদালতের সময়সূচী পুরো বিচারিক কাজে ব্যয় করার জন্য জেলা জজদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। আজ রবিবার সকালে জাতীয় বিচারবিভাগীয় সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনের কর্ম অধিবেশনে প্রধান বিচারপতি এই নির্দেশ দিয়ে বলেন, রাজধানীর বাহিরে কর্মরত কোন কোন জেলা জজদেরকে প্রায়ই ঢাকা শহরে দেখতে পাওয়া যায়। এটা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ছাড়া আমার কাছে আরো অভিযোগ রয়েছে, কোন কোন জেলা জজ দুপুরের বিরতির পর আদৌ বিচারের কাজে বসেন না। এটা অনাকাঙ্ক্ষিত।
কোন কোন জেলা জজ ও তার অধীনস্থ বিচারকের পরিবার ঢাকায় থাকেন। তাদের মধ্যে কিছু জজ ও তার অধীনস্থ বিচারক বৃহস্পতিবার দুপুরের পর ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হন। রবিবার দুপুরে ফিরে যান কর্মস্থলে। এ ছাড়া কোন কোন জেলা জজ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়াই সরকারি গাড়ি নিয়ে জেলার বাইরে ভ্রমণ করেন। কেউ কেউ নিজের গাড়ি না নিয়ে অন্য আদালতের গাড়ি ব্যবহার করেন। এগুলো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
তিনি আরো বলেন, দৈনন্দিন কার্যতালিকায় এমনভাবে মামলা রাখতে হবে যাতে বিচারিক সময় বিচারকরা আদালতে কর্মরত থাকতে পারে।
সুপ্রিম কোর্ট অডিটোরিয়ামে বিচারবিভাগীয় সম্মেলনের সমাপনী অধিবেশন চলছে। সেখানে আপিল জ্যৈষ্ঠ বিচারক বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহাব মিঞাসহ সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকেরা উপস্থিত রয়েছেন। এ ছাড়া বিষয় ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নিয়েছেন জেলা ও দায়রা জজ মহানগর দায়রা জজ, অতিরিক্ত জেলা জজ, চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তারা।
প্রধান বিচারপতি বলেন, জেলা জজ, জেলার জ্যেষ্ঠ বিচারক। জেলা পর্যায়ে বিচার প্রশাসনের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তাও বটে। অধীনস্থ বিচারক ও আদালত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কার্যক্রম তত্ত্বাবধায়ন ও জেলার বিচার ব্যবস্থার সামগ্রিক মানোন্নয়নের দায়িত্ব জেলা জজের। এটা জেনে আমি ব্যথিত হয়েছি যে, কোন কোন জেলার জেলা জজ ও চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন। এটি জেলার সামগ্রিক বিচার ব্যবস্থার ওপর অত্যন্ত বিরূপ প্রভাব ফেলছে। জেলা জজ প্রজ্ঞা ও সু-বিবেচনার মাধ্যমে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাবেন এটাই আমার প্রত্যাশা।
প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, ‘আমাদের বিচারব্যবস্থায় মামলাজট ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতা জনগণের বিচার লাভের ক্ষেত্রে একটি বড় অন্তরায়। আমাদের নিম্ন আদালতে প্রায় ২৭ লাখ মামলার জট আমরা বয়ে বেড়াচ্ছি। অনিষ্পন্ন মামলার এই বোঝা আদালত ব্যবস্থাপনাকে করতে পারে গতিহীন। বাড়িয়ে  দিতে পারে মামলার ব্যয়। এ কারণে মানুষ তার বিরোধকে আদালতে আনতে নিরুৎসাহিত হতে পারে। আগ্রহী হতে পারে বিচার বহির্ভূত পন্থায় অর্থ বা পেশিশক্তির মাধ্যমে সুবিধাজনক সমাধান প্রাপ্তির। ফলে আইনের শাসনের প্রতি জনগণের আস্থা শিথিল হতে পারে। সমাজে অসহিষ্ণুতা ও সংঘাতের প্রসার ঘটতে পারে। আমাদের অবশ্যই মামলাজটের দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মুক্তি পেতে হবে। এ জন্য আমাদের পরিহার করতে হবে অপ্রয়োজনীয় সময়দানের সংস্কৃতি। আদালতের পুরো সময় বিচারকাজে ব্যয় করতে হবে।’

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button