এবিএনএ: বগুড়ায় আন্তর্জাতিক বানিজ্য মেলার নামে চলছে ভয়াবহ জুয়া খেলা। যার নাম দেয়া হয়েছে দৈনিক স্বপ্নছোঁয়া র্যাফেল ড্র। আর এ লোভনীয় লটারীর টিকিট কিনে সর্বস্বান্ত হচ্ছে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ।
প্রতিদিন ২০ টাকার টিকিটে ১০/১৫টি মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, স্বর্ণের চেইন, মোবাইল ফোন, রাইসকুকার, কারিকুকার সহ মোট ৭১টি সামগ্রী লটারী বিজয়ীদের জন্য উপহার হিসেবে দেয়া হচ্ছে। কোন কোন দিন থাকছে ১/২টি (সাড়) গরু ও মাহিন্দ্র পিকআপ। এদিকে টিকিট সংগ্রকারীদের বেশীর ভাগই রিকশা-ভ্যান চালক ও দিনমজুর শ্রেণীর হওয়ায় গ্রামীণ অর্থনীতিতে এটি ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।স্কুলের টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে স্কুল পড়ুয়া কমলমতি শিক্ষার্থীরাও এই লোভে পড়ে অমনোযোগী হচ্ছে শিক্ষাগ্রহণ।
চলতি মাস থেকে পুরো মাসব্যাপী বগুড়ার চান্দু স্টেডিয়াম সংলগ্ন স্থানে এ মেলা চলবে বলে জানা যায়।
শহরের প্রধান প্রধান সড়ক, জেলা- উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ মোড়সহ গ্রামের প্রত্যঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় দেড়শতাধিক সিএনজি চালিতো অটোরিকশা, ভ্যান ও ব্যাটারী চালিতো বিভিন্ন যানবাহন টিকিট বিক্রির কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রচার মাইককে লক্ষ করে হাজার হাজার মানুষ টিকিট কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। অনেকেই সারা দিনের উপার্জন দিয়ে টিকিট কিনে রাতে খালি হাতে বাড়ি ফিরছেন।
মহাস্থানগড় এলাকার এক গৃহবধূ জানান, তার ভ্যান চালক স্বামী, গত কয়েকদিনে তার উপার্জনের সব টাকাই টিকিট কেনার কাজে খরচ করেছে। যে কারণে তাদের দিন এনে দিন খাওয়া পরিবারটি চরম অর্থ সংকটে পড়েছে। মহাস্থান নামাপাড়া গ্রামের নিম্ন অায়ের একাধিক অভিভাবকেরা জানান, তার ছেলেরা দিন মুজুরীর সমস্ত টাকা টিকিট কিনে খরচ করেন। অাবার অনেক অভিভাবকেরা জনান, লটারীর কারনে তাদের ছেলে, মেয়েরা লেখাপড়ায় মনযোগী হচ্ছে না। বাড়ি থেকে টাকা চুরি করে নিয়ে গিয়ে লটারীর টিকিট কেনে। এদিকে মহাস্থানের বাসষ্ট্যাণ্ড লেবার শ্রমিক সংগঠন ৮জনের নামে একটি টিকিট কিনে মোটরসাইকেল জেতায় গোটা এলাকার মানুষ এখন হুমড়ি খেয়ে পড়ছে লটারীর টিকিট কেনার নেশায়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়ার প্রত্যেকটি উপজেলার এমন কোন প্রত্যাঞ্চল গ্রাম নেই যেখানে লটারীর টিকিট বিক্রির প্রচার মাইক ও গাড়ী পৌঁছেনি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শহরের অলিগলিসহ গ্রাম-গঞ্জে টিকিট বিক্রির ধুম পড়ে যায়। বিভিন্ন গ্রাম থেকে নারী, শিশু সহ নানা বয়সের মানুষ গাড়ি রিজার্ভ করে টিকিট কিনতে আসে। জেলার যুবকদের পাশাপাশি বিভিন্ন জেলার যুবকরা এই লটারীর টিকিট বিক্রির কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।
রাত ১০টার পর পরই মেলার র্যাফেল ড্র মঞ্চে ২টি শিশুর চোখ বেঁধে একটি করে টিকিট তুলে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। এছাড়া মোটরসাইকেল, স্বর্ণ ও দামি কিছু বিজয়ীদের টিকিটের অর্ধেকটাতে লেখা ঠিকানা সহ মোবাইল ফোন নাম্বার অনুযায়ী কল করে গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে তুলে পুরষ্কারের কথা জানানো হয়। গোটা অনুষ্ঠানটি গত কয়েকদিন যাবৎ বগুড়ার কেবল নেটওয়ার্ক অপারেটর অর্থাৎ ডিস লাইনের মাধ্যমে
সরাসরি সম্প্রচার করায় এটি আরো বেশি প্রভাব ফেলেছে। গভীর রাত পর্যন্ত টিকিট ক্রেতারা মেলা স্থলে অপেক্ষমান থেকে র্যাফেল ড্র উপভোগ করছেন। টিকিট কেটে অনেকেই বাড়িতে অাবার কেউ কেউ বন্দরে, চা স্টলে, দোকানপাটে ভীর জমে টিভির সামনে বসে লটারীর টিকিট মিলাচ্ছেন।
গোটা টিকিট দুইভাগে বিভক্ত। একটি অংশ গ্রাহকদের দেয়ার জন্যে। অপরটি র্যাফেল ড্র’তে রাখার জন্য। র্যাফেল ড্র’র অংশটিতে ক্রেতার নাম ও মোবাইল নাম্বার দেয়া থাকে। তাতে পুরুস্কার প্রাপ্তির সাথে সাথে ওই নম্বরে যোগাযোগ করে ফলাফল জানানো যায়। টিকিট কিনছে লাখ লাখ জন পুরুষ্কার পাচ্ছেন মাত্র ৭১জন। এদিকে একটি সূত্রে জানা যায়, র্যাফেল ড্র ও মেলা চত্বরে প্রভাবশালী ব্যক্তিদের প্রতি রাতেই দেখা যায়। যারা এই লটারীর নেপথ্য অায়োজক। এখন সচেতন মহলের প্রশ্ন পুলিশের পক্ষ থেকে এ ধরনের কোন অনুমোদন দেয়ার সুযোগ না থাকলেও বগুড়ার পুলিশ প্রশাসন নিশ্চুপ কেনো? মানুষকে পথে বসানো স্বপ্নছোঁয়া নামক এই র্যাফেল ড্র বন্ধ না হলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে এটি দ্রুত বন্ধ করে দেয়ার প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন অভিজ্ঞ সচেতন মহল।
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.