এবিএনএ: কথা কাটাকাটির জেরে ছাত্রলীগের সদ্য প্রাক্তন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি রুহুল আমিনকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাসের বিরুদ্ধে। বুধবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপতালের (ঢামেক) নতুন ভবনে এই ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত রুহল আমিনকে ঢামেকে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের নতুন ভবনের লিফটে ওঠার সময় সঞ্জিত চন্দ্র দাসের ভাইয়ের সাথে ধাক্কা লাগা এবং পরবর্তীতে কথা কাটাকাটির জের ধরে রুহুল আমিনকে মারধর করেন সঞ্জিত চন্দ্র দাস এবং তার অনুসারীরা। এই ঘটনার পর রাত দুইটার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে আসেন। সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে গোলাম রাব্বানীকে রুহুল আমিন বলেন, ‘সঞ্জিত নিজেই আমাকে মারতে মারতে ৮ তলা থেকে নিচে নিয়ে আসে। মারার পাশাপাশি আমাকে শিবির বলে অপবাদ দিতে থাকে।’ ‘যতক্ষণ পর্যন্ত এর বিচার না হবে ততক্ষণ আমি খাবো না, কেউ যদি আমাকে জোর করে তবে আমি আত্মহত্যা করবো। এই কমিটির দ্বারা আমি যে অপমানের শিকার হয়েছি তা হাজার বার জন্ম নিলেও ভুলবো না।’
এরপর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের সাথে ঢামেক থেকে ক্যাম্পাসে আসার পথে শহীদ মিনারের কাছে এসে রুহুল আমিন বমি করতে থাকেন। পরে তাকে আবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। মাথায় আঘাত পাওয়ায় ডাক্তারের পরামর্শে তার সিটি স্ক্যান করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী জানান, রুহুল আমিনের বড়ভাই ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুর রহিমের শাশুড়ি মারা গেলে মরদেহ নিতে রুহুল আমিন, আব্দুর রহিম এবং প্রাক্তন ছাত্রলীগ নেতা রানা ও রুহুল আমিনের ভাবী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসেন। লিফটে ওঠার সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাসের বড় ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রীর সাথে সঞ্জিতের কয়েকজন অনুসারীও লিফটে ওঠেন। রুহুল সঞ্জিতের অনুসারীদের কয়েকজনকে লিফট থেকে নেমে তাদেরও লিফটে উঠতে সুযোগ দেয়ার অনুরোধ জানান। এ সময় সঞ্জিতের ভাইয়ের সাথে রুহুলের কথা কাটাকাটি হয়। এর প্রায় ৪০ মিনিট পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিতের অনুসারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের শতাধিক নেতাকর্মী ঢাকা মেডিকেল কলেজের নতুন ভবনের ৮ তলায় উঠে রুহুলকে বেধড়ক মারধর শুরু করে। এ সময় সঞ্জিত সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মারতে মারতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা রুহুলকে ৮ তলা থেকে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে আসেন।
ঘটনার পর সাংবাদিকরা ঢাকা মেডিকেলের নতুন ভবনের দোতলায় গিয়ে দেখেন, রুহুল আমিন। ছেঁড়া শার্ট, শরীর ও মুখে মারের দাগসহ লিফটের সামনে বসে কাঁদছেন। রুহুল আমিন সোহাগ-নাজমুল কমিটির সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আমার পরিচয় দিয়েছি। বলেছি লাশ নিতে এসেছি। তবুও ওরা আমাকে যেভাবে শিবির বলে মারধর করেছে। এত বছর ছাত্রলীগ করে যদি এই লজ্জা পেতে হয় তাহলে কার জন্য ছাত্রলীগ করলাম, কিসের জন্য ছাত্রলীগ করলাম।’ ‘ওরা আমাকে আমার ভাইয়ের শাশুড়ির লাশ নিতে দেয়নি। অনেকক্ষণ লাশ আটকে রেখেছিল।’ তবে রুহুল আমিনকে মারধরের বিষয়টি অস্বীকার করে সঞ্জিত বলেন, কে বা কারা তাকে মারধর করেছে তা তিনি জানেন না। তিনি বলেন, ‘আমার অন্তঃসত্ত্বা ভাবীকেসহ আমার ভাই মেডিক্যালে গিয়েছিল। সেখানে লিফটে ওঠার সময় রুহুল ভাই আমার ভাইয়ের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে৷ সে আমার ভাইকে বলেছে, আমি যদি তোর হাত পা ভাইঙ্গা ফেলাই তাইলে কি করবি? তখন আমার ভাই বলেছে, ‘আমি সঞ্জিতের বড় ভাই।’ তখন রুহুল আমি অকথ্য ভাষায় গালি দিয়ে বলেছে, ‘তারে আসতে ক।’ পরে পোলাপানের সাথে নাকি ঝামেলা হয়েছে। তখন আমি নিজে গিয়ে ঝামেলা মিটায়ে দিয়ে আসছি।’
রুহুল আমিনের সাথে তার কোনো ঝামেলা হয়নি দাবি করে সঞ্জিত বলেন, ‘আলিয়া মাদ্রাসার পোলাপান (ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা) রড নিয়ে চাপাতি নিয়ে বকশীবাজার মোড় দিয়ে ঢুকছিল, তখন পোলাপান জিজ্ঞেস করেছে তোমরা কারা, ওরা বলেছে, আমরা আলিয়ার। এইখানে একটু ঝামেলা হয়েছে। রহুল ভাইয়ের এখানে তো কোনো ঝামেলা হওয়ার কথা না।’ তবে রুহুল আমিন আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা নিচ্ছেন জানালে সঞ্জিত বলেন, ‘আমি শুধু তারে জিজ্ঞেস করসি, ভাই আপনি আমার ভাইয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার কেন করেছেন? পরে সে আমার সাথেও খারাপ ব্যবহার করে। যেহেতু রোগী মারা গেছে তাই আমি পোলাপান নিয়ে চলে এসেছি।’ প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য, সঞ্জিতের অনুসারীরা হাসপাতালে থেকে মারামারি করে ফেরার পথে পথচারী অনেককেই মারধর করে। এর মধ্যে মারধরের শিকার হয়ে ঢাকা কলেজের ২০১৩-১৪ সেশনের ম্যানেজমেন্ট এর ছাত্র মমিনুর রহমান রকি ও ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসার ডিগ্রি ২য় বর্ষের ছাত্র কাজী শাওন গুরুতর অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগে আসেন। ঘটনার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘এটা অত্যন্ত দুখঃজনক। একজন সিনিয়র নেতা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ও একটা হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তিনি। তার ওপর এরকম হামলা অবশ্যই নিন্দনীয় ও ন্যাক্কারজনক। আমরা ওনাকে বলেছি লিখিত অভিযোগ দিতে। আমরা তদন্ত করে এটার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেবো।’
রাইজিংবিডি
Chairman & Editor-in-Chief : Shaikh Saokat Ali,Managing Editor : Khondoker Niaz Ikbal,
Executive Editor : Mehedi Hasan,E-mail : abnanewsali@gmail.com
Usa Office: 2817 Fairmount, Avenue Atlantic city-08401,NJ, USA. Bangladesh Office : 15/9 Guptopara,Shemulbag,
2 nd floor,GS Tola, Teguriha, South Keraniganj, Dhaka.
Phone: +16094649559, Cell:+8801978-102344, +8801715-864295
Copyright © 2025 America Bangladesh News Agency. All rights reserved.